ও তো মেয়ে মানুষ!

মাহবুব আলম

এ্যা মা, এতো মেয়ে মানুষ। দিদি ডাক্তার কোথায়? কাদম্বিনী সিরিয়ালের একটা ডায়ালগ। ঘটনাটা এরকম যে, কলকাতার এক ধনাঢ্য পরিবারের গৃহকর্তী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে ডাক্তার ডাকা হয়। ডাক পেয়ে ডা. কাদম্বিনী গাঙ্গুলী তার ঘোড়ার গাড়িতে চেপে রোগীর বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। ওদিকে বাড়ির মানুষজন বাড়ির মেইন গেটে অপেক্ষা করতে থাকেন কখন এসে পৌঁছাবে ডাক্তার। এক সময় ওই বাড়ির গেটের কাছে একটা ঘোড়ার গাড়ি থামতেই সোরগোল পড়ে যায়। ডাক্তার এসেছে, ডাক্তার এসেছে। ওই সোরগোলে দোতালায় রোগিনীর সাথের নারীকূল ঝুল বারান্দায় এসে উঁকিঝুঁকি শুরু করে ডাক্তারের আগমন দেখতে। ঠিক এই সময় কাদম্বিনী গাঙ্গুলী তার চামড়ার ব্যাগ নিয়ে ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সঙ্গে আর কেউ নেই। এটা দেখে দোতালার নারীকূল থেকে একজন চেঁচিয়ে ওঠে বলল, এ্যা মা, এতো মেয়ে মানুষ, দিদি ডাক্তার কোথায়? এই ঘটনা আজ থেকে প্রায় ১৪০ বছর আগের। দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নারী ডাক্তার কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর উপর নির্মিত একটি সিরিয়ালের সংলাপ। তারপর পদ্মা-গঙ্গা, মেঘনা-যমুনা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। ৪৭-এর দেশ ভাগ হয়েছে। ৭১-এ বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এরপরও কেটে গেছে অর্ধ শতাব্দী। তারপরও ঘটনা যথা পূর্বং তথা পরং।

ও তো মেয়ে মানুষ, ওর কথায় কি আসে যায়, বাদ দাও ওর কথা। মেয়েদের প্রতি, নারীদের প্রতি এই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য নতুন কিছু নয়। সেই ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি মেয়ে মানুষ তো মেয়ে মানুষই, ওদের আবার মতামত কি? সেই সাথে শুনে আসছি, মেয়ে মানুষের এতো লেখাপড়ার কি দরকার। সেই তো বিয়ে দিলে ঘর সংসারই করতে হবে। তার চাইতে যত তাড়াতাড়ি পারো বিয়ে দিয়ে দাও। আরো শুনে আসছি, তুই তো মেয়ে মানুষ, মেয়ে মানুষদের এমনভাবে কথা বলতে নেই। মেয়েদের হতে হয় মাটির মানুষ, চোখ নামিয়ে কথা বলতে হয়। শুধু তাই নয়, কোনো মেয়ে একটু চালাক চতুর হলে বলা হয়, মেয়ে মানুষ এতো চালাক চতুর হয় কি করে? বিষয়টা এমন যেন মেয়ে মানুষ, নারীদের বুদ্ধিশুদ্ধি থাকতে নেই। আর যদি কোনো মেয়ের বুদ্ধিশুদ্ধি থাকেও তা প্রকাশ করা যাবে না। মেয়েদের ঘরের ভিতরে বাইরে সবসময় নিজেকে গুটিয়ে রাখতে হবে। ঠিক যেমন করে শামুক তার শরীরকে গুটিয়ে রাখে খোলের ভিতর। এখানেই শেষ নয়, কোনো মেয়ে প্রয়োজনে, এমনকি জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে গেলে বাড়ির লোকজনই বলে মেয়েদের যখন তখন এভাবে বের হওয়া ঠিক নয়। কোনো ছাত্রী এমনকি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী পর্যন্ত যখন তখন ঘর থেকে বের হতে পারে না। তাদের জবাবদিহি করতে করতে জান বেরিয়ে যায়। এমনকি মেয়েরা জেদ করতেও পারে না। ওদের জেদ করতেও বারণ। অথচ পুরুষরা যখন তখন জেদ করে। জেদ করে কখনো কখনো বাড়ি ছেড়ে অজানার পথে বেরিয়ে পড়ে। কখনো কখনো পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি আবার কখনো পেশাগত কারণে অথবা প্রেমের ঘটনায়। কিন্তু মেয়েদের বেলায় জেদ করে বাড়ি ছাড়া এক গুরুতর অপরাধ, পাপ। তাইতো বলা হয় পুরুষ মানুষ জেদ করলে হয় বাদশা, মেয়ে মানুষ জেদ করলে হয় বেশ্যা। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও এই হচ্ছে, নারীর প্রতি আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি।

আমাদের দেশে মেয়েদের অনেকে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে চাকরি-বাকরি ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। এমনকি পুলিশ-মিলিটারির মতো চ্যালেঞ্জিং পেশাকে বেছে নিচ্ছে। ফুটবল ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশগ্রহণসহ অভিনয় মডেলিং জগতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। জিন্সের প্যান্ট গেঞ্জি টি-শার্ট পরে আধুনিক বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। তারপরও আমাদের দেশের আমাদের সমাজে আমাদের পরিবারগুলোতে মেয়ে মানুষ এখনো মেয়ে মানুষই রয়ে গেছে। মানুষ হয়ে উঠতে পারেনি। তাইতো অধিকাংশ পরিবারে বলা হয়, মেয়ের বয়স হয়েছে বিয়ে দিয়ে দাও। আমাদের দেশে বাল্যবিয়ের ঘটনা এর সবচাইতে বড় প্রমাণ। শুধু গ্রাম নয় শহর অঞ্চলেও ঘটা করে বাল্যবিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে, কোনো কোনো পরিবারে এখনো কন্যা সন্তানের জন্মের সুসংবাদে পরিবারের বয়স্কদের কপালে ভাঁজ পড়ে। চেহারা নিমিষেই কালো হয়ে যায়। আর তাদের হৃদয় হয় দুঃখ ভারাক্রান্ত। সেইসাথে পুত্র সন্তান জন্মদানে ব্যর্থ হওয়ার প্রসূতি মা’কে অবজ্ঞা অবহেলা করা হয়। এমনকি গালমন্দও বাদ যায় না।

শিক্ষিত ও সচ্ছল পরিবারে সাধারণত কন্যা বা পুত্র সন্তানের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য দেখা যায় না। তারপরও দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য খুবই দৃশ্যমান। বাবা-মা ও দাদা-দাদিসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা পুত্র সন্তানের প্রতি যতটা যত্ন নেন, কন্যা সন্তানের প্রতি ততটা নেন না। এমনকি মায়ের কাছে কি ছেলে কি মেয়ে দুটোই সমান। কিন্তু দেখা যায় যত্ন আত্তির বেলায় ছেলের প্রতিই মায়ের নজর বেশি। অন্যদিকে, মেয়ের বেলায় মায়ের হাজারো বাধা নিষেধ, এটা বলা যাবে না ওটা করা যাবে না। এখানে যাওয়া যাবে না ওখানে যাওয়া যাবে না, ইত্যাদি অনেক কিছু।

শিক্ষিত পরিবারগুলোতেও আজো পুরুষদের মর্যাদায় ভিন্ন। বাড়িতে ভালো কোনো খাবার রান্না হলে সর্বাগ্রে পরিবেশন করা হয় পুরুষদের। মাছের মুড়োটা দেওয়া হয় স্বামী বা পুত্রকে, কন্যাকে নয়। আর স্ত্রী স্বপ্নের মধ্যেও ভাবেন না তিনি আজ মাছের মাথাটা খাবেন বা শাশুড়িকে দেবেন। এই হলো দৃষ্টিভঙ্গি।

পরিবারের শিক্ষিত কর্মজীবী নারীদের প্রতিও দৃষ্টিভঙ্গির বদল নেই। এইতো সেদিন আমার এক বিশেষ পরিচিত নারী রুবি বললো, ও বাজারে গেছে শুনে ওর স্বামী খুব রাগারাগি করছে। তার স্বামীর এক কথা – তুমি মেয়ে মানুষ, তোমার এতো সব করার দরকার কি? আমাকে বললেই তো হতো।

অথচ ওই স্বামী অফিস থেকে এসে স্ত্রীকে বলে ভীষণ টায়ার্ড একটু চা করে দাও। তা করে দেয়ও। কিন্তু মাঝে মধ্যে শরীর বলে কথা। তিনিও তো তার স্বামীর মতো সারাদিন অফিস করে এসেছেন। তাই স্বাভাবিক ভাবেই বলেন, আজ চা-টা তুমি করো, আমার উপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে। কিন্তু স্বামী নির্বাকার। এক সময় বলেন, এটা তো আমার কাজ না। মেয়ে মানুষের কাজ। আমি কি করে করব?

সম্প্রতি আমার এক বন্ধুর স্ত্রী একটা বিজনেস ফার্ম খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। স্বামীর একার আয়ে চলছে না। তাই বাধ্য হয়ে এই সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তে ওই পরিবারের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবসহ সকলের প্রশ্ন, রিমা ভাবি Ñ রিমা আপা, রিমা মামি পারবে তো? হাজার হোক মেয়ে মানুষ। এ বিষয়ে আমি আমার বন্ধুকে তার মতামত কি জানতে চাইলে বলেন, আমি আর কি মত দেব, আমি বাধা দিলে কি শুনবে? না, শুনবে না, তাছাড়া ছেলেমেয়েরাও ওর মাকে উৎসাহ দিচ্ছে। কিন্তু আমার একটা কথা, হাজার হোক ও তো মেয়ে মানুষ। মেয়ে মানুষ হয়ে বিজনেস সামাল দেওয়া খুব কঠিন। দেখা যাক কি হয়।

এদিকে শুনেছি এক ভদ্রমহিলা স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে শিশু পুত্রসহ বাবা-মায়ের বাড়িতে ফিরে এক সংগ্রামী জীবন শুরু করেছেন। নারী চাকরিজীবী তাই আর্থিক সংকট নেই সেভাবে। কিন্তু তারপরও তাকে নানাভাবে নানা কথা শুনতে হচ্ছে। মূলত আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে। সবাই বলছে, এভাবে কোনো মেয়ে একা সার্ভাইভ করতে পারে না। সার্ভাইভ করার জন্য অবশ্যই একজন পুরুষের সাপোর্ট দরকার। যুক্তি মেয়েদের খুঁটির জোর একজন পুরুষ মানুষ। একথার পাশাপাশি স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়া ও ডিভোর্সের জন্যও নানান কথা শুনতে হচ্ছে। এই সংগ্রামী ও আত্মমর্যাদা সম্পন্ন নারীর মা তার পাশে থেকে তাকে সাহস যোগানোর পরিবর্তে তাকে আরও দুর্বল করে দিচ্ছেন। তার মা বলেছেন, এতে রাগ করে কোনো লাভ নেই। এগুলো শুনতেই হবে। সামনে হয়তো এর চাইতেও খারাপ কিছু শুনতে হবে। কারণ তুমি মেয়ে মানুষ। শুনে রাখো মেয়ে মানুষের দোষের কোনো শেষ নেই।

এছাড়া বাড়িতে ভুল কিছু হলে কিছু ঘটলে সর্বাগ্রে দোষ পড়ে বাড়ির নারীদের ওপর। বিশেষ করে স্ত্রীদের উপর। এমনকি বাড়ির ছেলেটা বখে গেলে বা অন্য কোনোভাবে অন্যায় কিছু করলে তার দায় দায়িত্ব বর্তায় ছেলের মা বোনদের উপর। আগ-পিছুু কোনো বিচার বিবেচনা ছাড়াই সোজা সাপ্টা বলে মা-বোনদের আস্কারা পেয়েই ছেলেটা বখে গেছে। আর যদি ছেলে প্রেম করে কোনো মেয়েকে নিয়ে ভেগে যায় তো কোনো কথাই নেই। পাড়া-প্রতিবেশীরা পর্যন্ত মাকেই দায়ী করে। অথবা কাউকে কিছু না বলে বিয়ে করে ঘরে বউ নিয়ে আসে তাহলে তো মা বোনদের রক্ষে নেই। এক কথায় যত দোষ নন্দ ঘোষ। সেইসাথে চলে স্ত্রী ও বাড়ির অন্য নারীদের বুদ্ধিহীনতার চুল চেরা বিশ্লেষণ ও নানান মন্তব্য। এই সময় বাড়ির কর্তাদের মুখে কোনো কিছুই আটকায় না। তাইতো তারা অনেকে নির্দ্বিধায় বলে বসেন দশ হাত কাপড়ে যারা কাছা দিতে পারে না তাদের বুদ্ধির দৌড় আর কত হবে!

এ থেকে এটা স্পষ্ট যে, এখনো আমরা আদিম যুগেই পড়ে আছি। ইসলাম পূর্ব যুগে। জাহেলি যুগে। যে যুগে মানুষের কাছে নারীদের কোনো মূল্য ছিল না। নারীরা ছিল স্রেফ ভোগের সামগ্রী। সেই যুগে মানুষ কন্যা সন্তানদের জন্ম পছন্দ করতো না। তাই তাদের কেউ কেউ কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে তাদের জীবন্ত কবর দিয়ে দিত। আর যেসব ভাগ্যবান কন্যা সন্তান ওই বর্বরতা থেকে রক্ষা পেয়ে বেড়ে উঠেছে তাদের অধিকাংশই অসম্মান আর লাঞ্ছনার জীবনযাপন করতে বাধ্য করা হতো। ২ হাজার বছর আগের জাহেলি যুগ পেরিয়ে মানুষ সভ্যতার যুগে প্রবেশ করেছে। তাও কয়েকশো বছর পেরিয়ে গেছে। এখন মানব সভ্যতার সর্বোচ্চ বিকাশের যুগ। নারী পুরুষের সমতার যুগ। কিন্তু এই যুগে এসেও আমাদের দেশে আমাদের সমাজে নারী পুরুষের সমতা দূরে থাক ন্যূনতম নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা, নারীর প্রতি ন্যূনতম সম্মান প্রদর্শন করতেও আমরা ব্যর্থ হচ্ছি। এমনকি আমাদের সমাজে যারা নারী অধিকারের কথা বলছে তাদের মধ্যেও রয়েছে সংকীর্ণতা, নানান গলদ। যার মূলে রয়েছে পুরুষতন্ত্র। এই পুরুষতন্ত্রের নাগপাশ থেকে আমরা মুক্ত হতে পারছি না। এ বিষয়ে আমরা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার একটা বিবরণ দিয়ে এই লেখার সমাপ্তি টানতে চাই। আমার সেই অভিজ্ঞতা নিম্নরূপ:

আমার এক বন্ধু ও তার স্ত্রী একইসঙ্গে একই অফিসে কাজ করেন। নিজেদের অফিস, নিজেদের বিজনেস। তারা কমবেশি আগে পরে অফিসে যান এবং সেভাবেই আগে পরে বাড়ি ফেরেন। বাড়ি ফেরার পর বন্ধুর স্ত্রী রাতের খাবার রেডি করে পুত্রকে খাইয়ে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করেন। স্বামী ঘরে ফিরলে প্রথমেই গিজারের সুইচ দিয়ে দেন যাতে পানি গরম হয় যাতে তার স্বামী আরাম করে এই শীতের রাতে নির্বিঘ্নে স্নান সম্পন্ন করতে পারেন। তারপর খাবার নিয়ে টেবিলে অপেক্ষা পালা। কখন তার বর টেবিলে আসবেন এবং একসঙ্গে রাতের খাবার খাবেন। এটা বন্ধু স্ত্রীর প্রতিদিনের রুটিন। এই রুটিনে আরো আছে খেতে খেতে সংসারের টুকটাক আলাপ সেরে ফেলা। কোনো অনিয়ম অভিযোগ থাকলে তাও তুলে ধরা ও আলোচনা করা। এই আলোচনায় বন্ধু স্ত্রী প্রায়ই বলেন, দেখো তোমার সংসারে খাটতে খাটতে আমি তো শেষ হয়ে গেলাম। তুমি তো একটু সাহায্য সহযোগিতা করতে পারো ইত্যাদি। যা সাধারণত স্বামী স্ত্রীর মধ্যে হয়ে থাকে। কিন্তু আমার বন্ধু এ বিষয়ে একেবারেই নির্বিকার। কারণ তার ধারণা ঘরে এমনকি কাজ যে এত খাটতে হয়? কখনো কখনো মুখ ফসকে বলেও ফেলে, তোমার আবার কাজ কি, সব তো খালাই করে।

বন্ধুর স্ত্রী একদিন বন্ধুর একথা ধরে ফেলেন। তবে ধীর স্থির চিত্তে কোনরকম রাগ বিরাগ বা অভিমান করে নয়। তিনি তার স্বামীকে এক ছুটির দিনে প্রস্তাব করে বলেন, তুমি ঠিকই বলেছ আমার তো কোনো কাজ নেই। তাহলে এসো আজ এক কাজ করি। আজ আমার জায়গায় তুমি হয়ে যাও আর তোমার জায়গায় আমি হয়ে যাই। এই বলে বন্ধুর স্ত্রী কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লেন।

এদিকে নাস্তার কোনো খোঁজ খবর নেই। খালা বেশ ক’বার ঘুরে গেছে জিজ্ঞেস করেছে নাস্তা কি দেব। কিন্তু স্বামী মহোদয় কোনো কিছুই বলেননি। শেষে দশটা বেজে গেছে, খালাকে চা দিতে বলে জিজ্ঞেস করে আজকের নাস্তা কি?

খালা বলল, আপনি তো এখনো বলেননি কি দিব পরোটা না ডিম পাউরুটি।

শুনে একটু ধাক্কা খেলেন আমার বন্ধু। তারপর পাউরুটির কথা বলে খবরের কাগজ মন দিলেন।

এদিকে দুপুরে খাবারের কোনো খবর নেই। কারণ খালাকে বলা হয়নি ওরা কি খাবেন। এ বিষয়ে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে গেলে স্ত্রী উল্টো জিজ্ঞেস করেন ওয়াশিং মেশিনে কাপড়গুলো দিয়েছো। শোনো, ওয়াশিং মেশিনে কাপড় দিয়ে বারান্দায় টবে পানি দিতে ভুলো না। আর হ্যাঁ, কিছু কাপড় ইস্ত্রি করতে হবে। যদি পারো নিজে করে ফেলো, না পারলে গুছিয়ে একটা ব্যাগে ভরে ছেলেকে লন্ডিতে পাঠাও। দেখো ভুল করো না।

আর দুপুরে কি খাবে খালাকে বুঝিয়ে বলো। দেখো খালা যেন ঘর মোছে ইত্যাদি বলে শেষে বললেন, আমি এখন ঘুম দেব আমাকে আর ডাকাডাকি করো না।

এইভাবে শায়েস্তা হবার পরও আমার বন্ধু এখনও বলেন, আরে মেয়ে মানুষের আবার কাজ কি? অহেতুক সময় নষ্ট করে। এই হলো নারীর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। এ দৃষ্টিভঙ্গি খুব সহজে বদলাবে বলে মনে হয় না। আর হলেও তার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হবে।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: রম্য রচনা

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

fourteen − 9 =