আজ জিতলেই বাংলাদেশের ইতিহাস

বাংলাদেশ কখনো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতেনি। পরিসংখ্যানটা জানা ছিল না চন্ডিকা হাথুরুসিংহের। সংবাদ সম্মেলনে যখন জানলেন, ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে কোচ নিজেই প্রতিবেদককে বললেন, ‘আমি অতীত নিয়ে চিন্তিত নই।’

অতীতে কী হয়েছিল, পরিসংখ্যানের জানালায় উঁকি দেওয়া যেতে পারে। ২০১৩ সাল থেকে এই সিরিজ—বাংলাদেশ গত ১১ বছরে যে চারটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে, তিনটিতে হার। শুধু ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশ ২ ম্যাচের সিরিজটি ১-১-এ ড্র করে এসেছিল। প্রথমবারের মতো ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলা দুই দল আজ শেষ ম্যাচটি অঘোষিত ফাইনালে পরিণত করেছে। সাম্প্রতিক অতীতে দুই দলের যে দ্বৈরথ, এ রকম একটা ‘ফাইনাল’ প্রত্যাশিতই ছিল।

বাস্তববাদী চন্ডিকা হাথুরুসিংহে তো বলেছেনই, অতীতে কী হয়েছে, সেটি নিয়ে ভাবেন না। তিনি বেশি গুরুত্ব দেন বর্তমানকে। আর নিখুঁত পরিকল্পনা করতে চান ভবিষ্যৎ নিয়ে।

হাথুরুর ভাবনাজুড়ে গুরুত্ব পাচ্ছে সিরিজের আজকের শেষ টি-টোয়েন্টি, যেটি তিনি জিতে ইতিহাস গড়তে চান। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে শ্রীলঙ্কান সাংবাদিকের সিংহলিজ ভাষায় করা প্রশ্নে হাথুরু বললেন, ‘অতীত নিয়ে কিছু করার নেই। এবার আমরা ইতিহাস পরিবর্তন করার অবস্থানে দাঁড়িয়ে।’

বললেই তো সিরিজ জেতা হয় না। সেটি বাস্তবায়নে যেতে হয় কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। হাথুরু তাই বলছেন, ‘এটা দিনের ম্যাচ। ওই ফ্যাক্টরগুলো আমাদের ভাবনায় রাখতে হবে। যদি নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারি, যদি নিজেদের সেরাটা দিতে পারি, সিরিজ জেতার সুবর্ণ সুযোগ আমাদের। সঙ্গে এটাও বলতে হয়, শ্রীলঙ্কা কিন্তু খুবই ভালো টি-টোয়েন্টি দল।’

হাথুরু যে দিনের ম্যাচের কথা বললেন, সেটি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির অংশ। জুনে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দিনের বিভিন্ন সময়ে ম্যাচ খেলতে হবে বাংলাদেশকে। সেটি ভাবনায় রেখে নানাভাবে নিজেদের পরখ করে নিচ্ছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের কন্ডিশন-উইকেট সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেতে হাথুরু তাঁর অস্ট্রেলীয়-সংযোগও কাজে লাগাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রে মেজর লিগ ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার মালিকানাধীন দুটি দল খেলেছে। এর মধ্যে একটি হাথুরুর সাবেক কর্মস্থল নিউ সাউথ ওয়েলসের দল ওয়াশিংটন ফ্রিডম। তাদের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার তথ্য-উপাত্ত নেওয়ার চেষ্টা করছেন হাথুরু।

বাংলাদেশের মতো শ্রীলঙ্কার কাছেও সিরিজটি বিশ্বকাপের প্রস্তুতিমূলক। তবে তাঁরাও উন্মুখ হয়ে আছে স্বাগতিকদের তাদেরই মাঠে হারিয়ে আরেকটি সিরিজ জয়ের উৎসবে মেতে উঠতে। শ্রীলঙ্কাকে আরও আত্মবিশ্বাসী ও উজ্জীবিত করছে দলের নিয়মিত অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ফিরে আসায়। দলের প্রতিনিধি হয়ে কাল সংবাদ সম্মেলনে আসা ব্যাটিং কোচ থিলানা কান্দাম্বি বললেন, ‘ওয়ানিন্দুর ফেরাটা আমাদের জন্য বাড়তি সুবিধা। এটা মানসিকভাবে আমাদের উজ্জীবিত করবে। ম্যাচেও ভালো ইম্প্যাক্ট ফেলবে। বিশেষ করে আপনি যখন দিনের ম্যাচে খেলবেন, যেখানে শিশির ফ্যাক্টর নেই। এটা আমাদের জন্য ভালো।’

বিশ্বকাপের সঠিক সমন্বয় পেতে নান্দনিক সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের হাই স্কোরিং উইকেটে হচ্ছে টি-টোয়েন্টি সিরিজটা। কালও হালকা সবুজ দেখা গেলেও শেষ ম্যাচের উইকেটও রানপ্রসবা হওয়ার কথা। হাথুরুসিংহে আর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত দুপুরে অনুশীলন শেষে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে প্রায় আধা ঘণ্টা উইকেট পর্যবেক্ষণ করলেন। কোচ-অধিনায়কের এ ‘মিটিং’য়েই কি গেমপ্ল্যান কিংবা একাদশও ঠিক হয়ে গেল? অপরিবর্তিত একাদশ নাকি ফাস্ট বোলিং আক্রমণে পরিবর্তন নিয়ে নামবে বাংলাদেশ, সেটি কাল পরিষ্কার না হওয়া গেলেও একটা বিষয় নিশ্চিত। জুমার নামাজ থেকে ফেরার সময় বাঁহাতি পেসার শরীফুল ইসলাম নিজেই জানালেন, আগের ম্যাচে হাতে পাওয়া চোট নিয়ে তাঁর চিন্তা নেই।

 

দলকে নিয়েই আসলে চিন্তার খুব বিষয় নেই। এমন নির্ভারচিত্তে শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে হারিয়ে সিরিজ জেতার সুযোগ কি হররোজ পাবে বাংলাদেশ!

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

twelve − eight =