সালেক সুফী
বাংলাদেশ সিরিজের গুরুত্বপূর্ণ তৃতীয় ম্যাচ ৪ উইকেটে জিতে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে ২-১ সিরিজ জয় করেছে তরুণ প্রজন্মের তানজিদ তামিম এবং রিশাদ হোসেনের ব্যাটিং নৈপুণ্যে। প্রথমে বোলিং করে তাসকিন, মুস্তাফিজ, শরিফুল এবং মেহেদির বিচক্ষণ বোলিং তোপে বাংলাদেশ শ্রীলংকার ইনিংস ২৩৫ রানে সীমিত রেখেছিল।
জবাবে বাংলাদেশ ভালো সূচনা করলেও লাহিরু কুমারার দুরন্ত গতির বল একসময় বাংলাদেশকে বিপদে ফেলেছিল। কিন্তু সংকট মুহূর্তে উইকেটে ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মুশফিক। জয় পরাজয় যখন দোলকরে দোলায় দুলছে ঠিক তখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন বিস্ময় রিশাদ হোসেন ব্যাটে ঝড় তুলে সফরকারীদের স্বপ্ন স্বভাবনা লন্ড ভন্ড করে দেয়।
১৮ বলে ৫ চার আর ৪ ছয়ের ঝড়ো ইনিংসের সুবাদে ৫৮ বল হাতে রেখে ৪ উইকেটে জয় ছিনিয়ে নেয় বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচ অনায়েসে জিতেছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজে সমতা এনেছিল শ্রীলংকা। কালকের ম্যাচটি ছিল অঘোষিত ফাইনাল। বাংলাদেশ ২-১ সিরিজ জিতে একদিনের ক্রিকেটে নিজেদের প্রাধান্য অক্ষুণ্ন রাখলো।
সাবাশ বাংলাদেশ, সাবাশ বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন প্রজন্ম। শুরুতে সৌম্য সরকারের কংকাশন পরিবর্তন হিসাবে নামা তানজীদ হাসান তামিমের বাটের ভৈরবী ছন্দ এবং শেষ দিকে রিশাদের টর্নেডো ব্যাটিং বাংলাদেশকে কাঙ্ক্ষিত জয় এনে দেয়। রিশাদ হোসেনের ঝোড়ো ব্যাটিং রোজার দিনে মাঠে উপস্থিত বাংলাদেশের ভক্ত অনুরাগীদের অনাবিল আনন্দ দিয়েছে। বাংলাদেশ পেয়ে গাছে পরম কাঙ্ক্ষিত লেগ স্পিনিং অল রাউন্ডার।
খেলাটি নানা কারণে দীর্ঘ দিন মনে থাকবে।উইকেটে কিছুটা অসম বাউন্স ছিল। টস জয় করে দিনের ম্যাচে সঙ্গত কারণেই ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।কিন্তু নতুন বলে বাংলাদেশের তাসকিন, শরিফুল ছিল দারুন ছন্দে। এই ম্যাচে ফেরা মুস্তাফিজ কাল নিজেকে খুঁজে পেয়েছিল। মেহেদী মিরাজ ভালো বোলিং করে সফরকারী দলকে চেপে ধরেছিল। কিন্তু প্রচণ্ড চাপে থেকেও অসামান্য দৃঢ়তার সঙ্গে জানিথ লিয়ানাগে অপরাজিত ১০১* রান করে শ্রীলংকাকে ২৩৫ রানে পৌঁছে দেয়। তাসকিন (৩/৪২)। মুস্তাফিজ (২/৩২), মেরাজ (২/৩৮) উইকেটের বিচারে সফল বোলার হলেও শুরুতে লঙ্কানদের দিশেহারা করেছিল শরিফুল।
শ্রীলংকা দলের ইনিংস চলাকালে নানা ঘটনায় মুস্তাফিজ, সৌম্য, বদলী খেলোয়াড় জাকির অনিক আহত হয়। বিশেষ করে সৌম্য মাথায় আঘাত পাওয়ায় কংকাশন পরিবর্তন হিসেবে খেলার সুযোগ পায় তরুণ ওপেনার তানজিদ তামিম।দুই ম্যাচ ডাগ আউটে বসে থাকার প্রথম সুযোগেই কাল তানজিদ এবং বিজয় ভালো সূচনা এনে দেয়। প্রথম উইকেট জুটিতে ৫০ রান যোগ হওয়ার পর বিজয় ফিরে যায়। এরপর পর শান্ত ফেরায় কিছুটা চাপের সৃষ্টি হয়।
এই সময় লাহিরু কুমারা উইকেট অনুযায়ী বিচক্ষণতার সঙ্গে বোলিং করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছিল। অপর প্রান্তে তরুণ তানজিদ তামিম দর্শনীয় ভঙ্গিতে একের পর এক আক্রমণাত্মক স্ট্রোকস উপহার দিলো। কিছুটা ভাগ্যের সহায়তা নিয়ে তরুণ তামিম ৮৪ রান করে জয়ের ভীত গড়ে দেয়। স্ট্রোকস নেওয়ার পাশাপাশি তামিমের উচিত বলের মান অনুযায়ী স্ট্রাইক রোটেট করা। হয়তো খেলে খেলে পরিণত হলে শিখবে তামিম।
শান্ত ফিরে যাবার পর তাওহীদ হৃদয় এবং মাহমুদুল্লাকেও লাহিরু কুমারা ফিরিয়ে দিলে ৪/১১৩ চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এই সময়ে শ্রীলংকার তিন স্পিনার মহেশ থিকসানা, দুনিথ ওয়ালালাগেকে, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে বিচক্ষণতার সঙ্গে ব্যবহার করে বাংলাদেশের জন্য কঠিন করে তুলে কুশাল মেন্ডিস। মুশফিকের সঙ্গে মেরাজ কিছুক্ষণ প্রতিরোধ গড়ার হাসারাঙ্গার বলে ফিরে যায় মেরাজ। ১৭৮ রানে ৬ উইকেট হারানো বাংলাদেশের শেষ ভরসা নির্ভরযোগ্য মুশফিক। সঙ্গী হয়ে আসে নবীন লেগ স্পিনিং অল রাউন্ডার রিশাদ হোসেন। সবাইকে হকচকিয়ে দিয়ে হাসারাঙ্গার মত বিশ্বসেরা লেগ স্পিনারকে তুলোধুনা করে রিশাদ। ওর ১৮ বলে করা ৪৮ রানের ঝড়ো ইনিংস বাংলাদেশকে ম্যাচ এবং সিরিজ জয় এনে দেয়।
বাংলাদেশ এই সিরিজ থেকে অনেক কিছু অর্জন করেছে।বাংলাদেশ দলে প্রজন্ম পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। মুশফিক এবং মাহমুদুলহ ছাড়া দলটিতে অধিকাংশ তরুণ। বাংলাদেশের পেস বোলিং অনেক উন্নত হয়েছে। টপ অর্ডার ব্যাটিং এখনো নড়বড়ে থাকলেও সিরিজে শান্ত, হৃদয় এবং তানজিদ তামিম একটি করে ভালো ইনিংস উপহার দিয়েছে। উইকেটের সামনে এবং পেছনে নিজের ছন্দে ছন্দায়িত থেকেছে মুশফিক।
দলকে সামনে থেকে উপমধর্মী নেতৃত্ব দিয়েছে শান্ত। আজকের ম্যাচে গ্যালারি পাগল করা ব্যাটিং করে ম্যাচ সেরা হয়েছে রিশাদ হোসেন। এর আগে টি২০ ম্যাচেও একই ধরনের ইনিংস খেলেছে রিশাদ। বাংলাদেশ সাদা বলে একজন নির্ভরযোগ্য চৌকষ খেলোয়াড় পেয়ে গেলো। সিরিজ সেরা হয়েছে নাজমুল শান্ত। তামিম, সাকিব দলে নেই। ওদের অনুপস্থিতি খুব একটা উপলব্ধি করা যাইনি। এই ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরে প্রজন্ম পরিবর্তন ঘটবে বাংলাদেশ ক্রিকেটে। নতুন প্রজন্মের সহজেই হার না মানা মানসিকতাই বাংলাদেশ ক্রিকেট এগিয়ে দিবে।