সালেক সুফী
সিলেট টেস্টে বাংলাদেশের বিশাল ব্যাবধানে পরাজয় তৃতীয় দিন শেষ সময়ে নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। ৫১১ রানের পাহাড় চূড়ায় ওঠার মিশনে দিনশেষে বাংলাদেশ ৫ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৪৭ রান করেছিল। একমাত্র ভরসা ছিল যদি মুসলধারায় বৃষ্টি নেমে খেলাটি ভাসিয়ে দেয়। আসেনি বৃষ্টি। তবে বাংলাদেশের টেস্ট বিশেষজ্ঞ কক্সবাজার সাগর পারের ছেলে মোমিনুল অসামান্য দৃঢ়তায় (৮৭*) চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কঠিন এই উইকেটে নিজেকে মেলে ধরে নিবেদন করে রান করা সম্ভব ছিল।
মেহেদী মিরাজকে (৩৩) সঙ্গী করে সপ্তম উইকেট জুটিতে ৬৬ রান করে আগ্রাসী লংকানদের দীর্ঘ সময় প্রতিরোধ করেছিল মোমিনুল। ১৪৮ বল খেলে অপরাজিত ৮৭ রান করা মোমিনুল অবশ্যই শতরান পেলে অনুরাগীরা খুশি হত। ৩২৮ রানের বিশাল ব্যাবধানে পরাজয়ে মমিনুলের ইনিংসটি ছিল সেভিং গ্রেস। দুই ম্যাচের সিরিজে হেরে যাওয়া বাংলাদেশকে এখন সিরিজ লঙ্কা ধোলাই এড়াতে গভীর চিন্তা করে দল সাজাতে হবে।
সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত উইকেটে দুই দলের টপ অর্ডার বাট হাতে উভয় ইনিংসে ছিল একই ধরনের ব্যর্থ। পার্থক্য এনে দিয়েছে ধনঞ্জযা ডি সিলভা (১০২+১০৮=২১০) এবং কামিন্দু মেন্ডিজের (১০২+ ১৬৪=১৬৬) উপমধর্মী ব্যাটিং। দুজনের যুগল শতরান একই টেস্টে মাত্র তৃতীয় মাইল ফলক।
আরেকটি পার্থক্য ছিল শ্রীলংকার তিন পেসার কাশুন রাজিথা, বিশ্ব ফার্নান্দো এবং লাহিরু কুমারার উন্নততর আগ্রাসী বোলিং। বাংলাদেশের ২০ উইকেটের সবগুলো পেসাররা তুলে নিয়ে টেস্ট জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে।
এর আগে অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি ক্রিকেটার দুই ভাই ওয়েলিংটনে নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ইয়ান চ্যাপেল (১৪৫+১২১=২৬৬) এবং গ্রেগ চ্যাপেল (২৪৭+১৩৩=৩৬০) ৬২৬ রান করেছিল। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দুবাইতে পাকিস্তানের আজহার আলী (১০৯+১০০=২০৯ এবং মিসবাহ উল হক (১০১+১০১=২০২) ৪১১ করেছিল।
বাংলাদেশের বিশাল পরাজয়ে সবার মত আমরাও হতাশ। বিশেষ করার টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী খেলতে পারেনি। অজুহাত দিবো না বাংলাদেশের প্রস্তুতি আদৌ ছিল না টেস্ট খেলার। কঠিন উইকেটে বাংলাদেশের তরুণ দলকে অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অভিজ্ঞতা ছিল না। ঘরোয়া ক্রিকেটে কখনো এই ধরনের উইকেটে খেলে না বাংলাদেশ।
তামিম, সাকিব, মুশফিক, তাসকিন বিহীন তরুণ অনভিজ্ঞ দলটি সামর্থের সবটুকু নিংড়ে দিলে ম্যাচটি আরো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে পারতো। আমি হতাশ হলেও বিস্মিত হইনি। ভাগ্য অনুকূলে ছিল না। প্রথম ইনিংসে তুখোড় বোলিং করে প্রথম দিন প্রথম সেশনে ৫৭ রানে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশ সফরকারী দলকে কোনঠাসা করে ফেলেছিল। শরিফুলের বলে স্লিপে জয় শূন্য রানে কামিন্দু মেন্ডিজের ক্যাচটি লুফে নিলে এই টেস্টার পরিস্থিতি ভিন্ন ভাবে রূপ নিতো।
দ্বিতীয় সেশনে ধনঞ্জয়া দি সিলভা (১০২) এবং কামিন্দু মেন্ডিজের (১০২) প্রতিআক্রমণের মুখে এলোমেলো হয়ে যায় বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ। এই জুটির ২০২ রান শ্রীলংকাকে কোনঠাসা অবস্থান থেকে স্বস্তি দেয়। তৃতীয় সেশনে নবীন নাহিদ রানা জ্বলে উঠলে ২৮০ রানে সাঙ্গ হয় লংকান ইনিংস।
বাংলাদেশ কিন্তু দারুণভাবে ব্যর্থ হয় প্রথম ইনিংসে। টপ এবং মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের লজ্জা দিয়ে লেজের দিকের ব্যাটসম্যান তাইজুল ইসলাম (৪৭) নিজেকে প্রয়োগ করে প্রমাণ করে কঠিন এই উইকেটে তুখোড় বোলিংয়ের মোকাবিলায় রান করা সম্ভব ছিল। টপ অর্ডারে অন্তত একজন দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করলে বাংলাদেশ অবশ্যই শ্রীলংকার প্রথম ইনিংসের কাছাকাছি যেতে পারতো। হয়নি সেটি ১৮৮ রানে ইনিংস শেষ করে বাংলাদেশ ৯২ রানে পিছিয়ে পড়ে।
দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৬ রানে ৬ উইকেট তুলে নেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ খেলায় ছিল। কিন্তু আবারো ধনঞ্জয়া ডি সিলভা (১০৮) এবং কামিন্দু মেন্ডিজ (১৬৪) জুটি অনবদ্য ব্যাটিং করে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয়। বাংলাদেশের টার্গেট দাঁড়ায় ৫১১। তৃতীয় দিন শেষ প্রহরে মাত্র ১৩ ওভারে ৩৭ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশের পরাজয় অবধারিত হয়ে পড়ে।
চতুর্থ সকালে মোমিনুল স্বভাবসুলভ ছন্দে ব্যাটিং করে প্রমাণ করে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান আত্মাহুতি না দিলে এই টেস্টে বাংলাদেশ আরো কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারতো। জয়ী শ্রীলংকা ভালো খেলেই জয় পেয়েছে। চট্টগ্রাম টেস্টে হয়তো সাকিব ফিরে আসবে, এই মুহূর্তে দলে খুব একটা বিকল্প নাই। প্রথম টেস্ট থেকে শিক্ষা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ালে বাংলাদেশকে নিয়ে এখনো আশাবাদী হওয়া যেতে পারে।