ধনঞ্জয়া এবং কামিন্দুর কাছে হেরেছে বাংলাদেশ দল

সালেক সুফী

সিলেট জাতীয় স্টেডিয়ামে সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত সিমিং সুইংগিং উইকেটে বাংলাদেশ সাড়ে তিন দিনে টেস্ট ম্যাচ হেরেছে শ্রীলংকার কাছে। পরাজয়ের ব্যাবধান ৩২৬ রানের। শ্রীলংকা উভয় ইনিংস মিলে রান করেছে ৬৯৮ যার ৪৭৬ এসেছে ধনঞ্জয়া ডি সিলভা এবং কামিন্দু মেন্ডিসের ব্যাট থেকে। বাদ বাকি ৯ জন করেছে ২২২ রান. বাংলাদেশ উভয় ইনিংস মিলে করেছে ৩৭০।  বলা যায় বাংলাদেশ দুই শ্রীলংকান ব্যাটসম্যানের কাছেই ম্যাচ হেরেছে।

সবুজ ঘাসের উইকেটে টস ভাগ্য ছিল বাংলাদেশের অনুকূলে। নতুন বলে এই উইকেটে মারাত্মক সিম মুভমেন্ট ছিল, আকাশ মেঘে ঢাকা থাকায় দীর্ঘদেহী বাংলাদেশ পেসাররা সুইং পাচ্ছিল। শ্রীলংকান টপ অর্ডার দাঁড়াতেই পারেনি। প্রথম দিন প্রথম সেশনে ৫৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে কোনঠাসা হয়ে পড়েছিল অতিথি দল। শরিফুলের বলে শূন্য রানে কামিন্দু মেন্ডিসের ক্যাচটি স্লিপ থেকে জয় লুফে নিলে হয়তো স্বল্প রানে শ্রীলংকার ইনিংস গুটিয়ে যেত। হয়নি সেটি।

দ্বিতীয় সেশনে বলের সাইন চলে যাওয়ায় ব্যাটিং সহজ হয়ে যায়। এই সুযোগে ধনঞ্জয়া-মেন্ডিজ প্রতি আক্রমণ করে বাংলাদেশ ব্যাটিং এলোমেলো করে দেয়। এখানেই পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। এই জুটির ২০২ রানের সুবাদে ২৮০ করতে পারে ওরা প্রথম ইনিংসে। দিনের শেষ ঘণ্টায় নতুন বলে বাংলাদেশ ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে। দ্বিতীয় দিন সকলেও নতুন বলে দাঁড়াতেই পারলো না বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা, একমাত্র তাইজুল প্রবল ইচ্ছা শক্তির প্রয়োগে দীর্ঘক্ষণ ১৪৭ মিনিট সময়ে ৮০ বল খেলে ৪৭ রান করে।

টপ অর্ডারের একজন ওর সঙ্গে থাকলে বাংলাদেশ হয়তো শ্রীলংকা দলের সংগ্রহের কাছাকাছি যেতে পারতো। ১৮৮ রানে ইনিংস শেষ করে ৯২ রানে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ।দ্বিতীয় দিনে আবার বাংলাদেশ নতুন বলে শ্রীলংকার টপ অর্ডার ধসিয়ে দেয়। ১১৩ রানে ৫ উইকেট হারানোয় টেস্ট ম্যাচটি প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভ্যাস দেয়। তৃতীয় দিন সকালে চট জলদি ষষ্ট উইকেটের পতন ঘটে।

আবারো প্রতিরোধের দেয়াল গড়ে তুলে সেই ধনঞ্জয়া কামিন্দু জুটি। ওদের যোগাযোগে ১৭৩ রান যোগ হওয়ায় বাংলাদেশের জয়ের টার্গেট ৫১১ রানের পাহাড় চূড়ায় পৌঁছে। বলা যায় ওদের দুইজনের একই টেস্টে উভয় ইনিংসে যুগল শতরান বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয়। তবু আশা ছিল লড়াই করবে বাংলাদেশ।কিন্তু তৃতীয় দিন শেষ বেলায় মাত্র ১৩ ওভারে মাত্র ৩৭ রানে বাংলাদেশের ৫ উইকেটের পতন ঘটলে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায়।

চতুর্থ দিনে মোমিনুল হক তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুললেও একমাত্র মেহেদী মিরাজ ছাড়া কোনো যোগ্য সঙ্গী না থাকায় ১৮২ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। মোমিনুলের অপরাজেয় ৮৭ রানের ইনিংস প্রমাণ করে নিজেদের প্রয়োগ করে খেলতে পারলে এই উইকেটে রান করা বাংলাদেশ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের আয়ত্বে ছিল। বিশেষ করে দ্বিতীয় ইনিংসে যেভাবে নাজমুল শান্ত এবং লিটন দাস আত্মাহুতি দিয়েছে সেটি ছিল রীতিমত লজ্জাজনক। বাংলাদেশ হেরে যায় ৩২৮ রানের বিশাল ব্যাবধানে। ০-১ পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশের সামনে এখন সিরিজ ধবল ধোলাইয়ের শংকা।

ম্যাচটির ব্যবচ্ছেদ করলে দেখা যাবে দুইদলের টপ অর্ডার উভয় ইনিংসে নতুন বলে ঝরে পড়েছে। সৌভাগ্য শ্রীলংকার ওদের অধিনায়ক এবং অপেক্ষাকৃত নবীন ব্যাটসম্যান কামিন্দু পুরানো বলে খেলতে পেরেছে। গুণগত মানে ওরা অবশ্যই বাংলাদেশ থেকে অনেক উন্নত।

ফিরে দেখলে বলতে হয় বাংলাদেশের অধিকাংশ নবীন খেলোয়াড় এই ধরনের উইকেটে এর আগে কখনো খেলেনি। এবারেও টেস্ট সিরিজ খেলার জন্য কোনো প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। অজুহাত দিবো না। তবু অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে কঠিন উইকেটে বাংলাদেশ ধারাবাহিকতা এবং টেস্ট মেজাজের অভাবে হেরে গেছে।

দেখতে হবে স্বল্প সময়ের ব্যাবধানে প্রথম টেস্ট বিড়ম্বনা থেকে কতুটুকু শিক্ষা নেয় বাংলাদেশ? দলের এই কঠিন মুহূর্তে অতিরিক্ত সমালোচনা না করে দলকে মানসিক ভাবে চাঙ‍া রাখা উচিত।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

twelve − eight =