সালেক সুফী
সিরিজ ধবল ধোলাই এড়াতে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে ০-১ পিছিয়ে থাকা দ্বিতীয় ম্যাচে জয় ছাড়া বিকল্প নেই বাংলাদেশ দলের। অথচ চট্টগ্রামের সাগরিকায় জহুর আহমেদ চৌধুরীর তুলনামূলক ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে প্রথম দিন শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩১৪ রান করা সফরকারী দল শ্রীলংকা চালকের আসনে। উইকেটে আছে ৩৪ রান করা অভিজ্ঞ দীনেশ চান্দিমাল এবং প্রথম টেস্টের সেরা ব্যাটসম্যান ধনঞ্জয়া ডি সিলভা (১৫)। এখনো ব্যাটিং করেনি ওপর সফল ব্যাটসম্যান কামিন্দু মেন্ডিস। কাল সকালে দ্রুত কয়েকটি উইকেট ঝটপট তুলে নিতে না পারলে অজেয় অবস্থানে চলে যাবে শ্রীলংকা। দ্বিপাক্ষিক টেস্ট সিরিজে এটি ২৫ম টেস্ট। শ্রীলংকা জিতেছে ১৮টি। বাংলাদেশের জয় মাত্র ১টি নিজেদের ১০০ম টেস্ট। ৫টি টেস্টে জয় পরাজয় নির্ধারিত হয়নি।
সিলেট উইকেটের মত বোলিং সহায়ক নয় চট্টগ্রামের উইকেট। ২ পেসার এবং তিন স্পিনার নিয়ে দিনভর মোটামুটি ভালো বোলিং করেছে বাংলাদেশ। বিশেষত এই টেস্টে অভিষিক্ত হাসান মাহমুদ যথেষ্ট নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে যথেষ্ট বেগ দিয়েছে শ্রীলংকান ব্যাটসম্যানদের। ৫৪ রানে ২ উইকেট নেয়া হাসান মাহমুদ কাল ছিল বাংলাদেশ দলের সেরা বলার। উইকেট এখনো স্পিন সহায়ক নয়। বল ঘুরেছে কিন্তু খুব শ্লথ গতিতে। তাবু এই ম্যাচে দীর্ঘ ১ বছর পর আবার টেস্ট খেলা সাকিব নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছে। শ্রীলংকা দলের তিন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান নিশান মাদুস্কা (৫৭) ,কামিন্দু মেন্ডিস (৯৩) এবং দিমুথ করুনারত্নে (৮৬) অর্ধশত রান করে শ্রীলংকাকে স্বস্তিজনক অবস্থানে নিয়ে গেছে। এই উইকেটে ৪৫০+ প্রথম ইনিংসে হয়ে গেলে সিরিজ ধবল ধোলাই এড়ানো বাংলাদেশের আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে।
কাল বাংলাদেশ দুই পেসার, তিন স্পিনার অর্থাৎ ৮ জন ব্যাটসম্যান নিয়ে রক্ষণাত্মক কৌশলে খেলেছে। শ্রীলংকা কিন্তু তিন পেসার এবং একজন স্পিনার রেখেছে দলে। ক্রমাগত ম্যাচ খেলার ধকল সামাল দিতে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে শরিফুল ইসলামকে। আগের ম্যাচে অভিষিক্ত নাহিদ রানার ম্যাচ ফিটনেস ছিল না। তার স্থানে দলে ফিরেছে সদ্য সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসান।
টস জয় করে সঙ্গত কারণে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় শ্রীলংকা। উইকেটে সিলেটের মত ঘাসের আবরণ ছিল না। তবুও অভিষিক্ত হাসান মাহমুদ এবং খালেদ সঠিক লাইন লেংথে বোলিং করে চাপে রেখেছিলো সফরকারী দলের ওপেনার যুগলকে। হাসান মাহমুদের বলে স্লিপে দাঁড়ানো মাহমুদ হাসান জয় ৯ রানে থাকা নিশান মাদুস্কার সহজ ক্যাচ ফস্কালে বাংলাদেশ সুযোগ হারায়। বহুবার বল ব্যাটের কানা এড়িয়ে যায় অথবা এজ গুলো ফিল্ডারদের কাছে পৌঁছেনি। ৮৮/০ প্রথম সেশন শেষ করে সফরকারী দল।
দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে হাসান মাহমুদের একটি চমৎকার থ্রো থেকে রান আউট হয় ৫৭ রান করা নিশান মাদুস্কা। একই সেশনে ভালো খেলতে থাকা দিমুথ করুণারত্নের (৮৬) উইকেট তুলে নেয় হাসান মাহমুদ। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে করুনারত্নে, কুশাল মেন্ডিসের (৯৩) মাইল ১০৪ রান যোগ করে দলকে শক্ত অবস্থানে উপনীত করে। চা বিরতির সময় শ্রীলংকার রান ছিল ২১৪/২। ভালো বোলিংয়ের বিরুদ্ধে কিভাবে ধৈর্য্যের সঙ্গে নিজেদের প্রয়োগ করে ব্যাটিং করতে হয় শ্রীলংকার সব ব্যাটসম্যান বিশেষ টপ অর্ডারের তিন জন প্রদর্শন করে। বাংলাদেশের নবীন ব্যাটসম্যানদের জন্য অবশ্যই ছিল শিক্ষণীয়।
বাংলাদেশের তিন স্পিনার বিশেষ করে সাকিব এবং তাইজুল তৃতীয় সেশনে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছে। ৯৩ রান করা কুশাল মেন্ডিসের উইকেট তুলে নিয়ে সাকিব ব্রেক থ্রু এনে দেয়। দ্বিতীয় নতুন বলে সারাদিন ভালো বোলিং করা হাসান মাহমুদ ফেরায় অভিজ্ঞ এঞ্জেলো মাথিউসকে। দিনশেষে উইকেটে আছে অভিজ্ঞ দীনেশ চান্দিমাল (৩৪*) এবং অধিনায়ক এবং প্রথম টেস্টের অন্যতম ব্যাটিং নায়ক ধনঞ্জয়া ডি সিলভা (১৫*)। বলবো না এখনো বাংলাদেশ টেস্ট থেকে বেরিয়ে গেছে। তবে ম্যাচে ফিরতে বাংলাদেশকে কাল সকালে নতুন বলে ছোট জলদি কয়েকটি উইকেট তুলে নিয়ে চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
বাংলাদেশ পেস বোলিং যথেষ্ট ভালো করছে। তবে পেস বোলারদের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করে উইকেটের পেছনে থাকা স্লিপ অঞ্চলে সফল ক্যাচ নেয়ার উপর। কাল জয় শুরুতে ক্যাচ না ফস্কালে দিনশেষে ম্যাচের পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারতো।