সালেক সুফী
গ্রীষ্মে তাপমাত্রা বাড়ছে, বিদ্যুৎ চাহিদা ১৪০০০ মেগাওয়াট পেরিয়ে ১৫০০০-১৬০০০ মেগাওয়াট পানে ধাবিত হবে বিদ্যুৎ ঘাটতি সমস্যা থেকে সঙ্কট, সঙ্কট থেকে দুর্ভিক্ষ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। ২৫০০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে ১৫০০০ মেগাওয়াট চাহিদা মেটাতে ব্যর্থতার কারণ প্রাথমিক জ্বালানি সংকট সেটি এখন সবাই জানে। কি কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সেটিও ক্রমাগত মিডিয়ায় আলোচনা হওয়ায় সবাই জানে।
নিজেদের জ্বালানি সম্পদ – কয়লা, গ্যাস আহরণ, উত্তোলন, ব্যবহার উপেক্ষা করে জ্বালানি আমদানির ঝুঁকি নেওয়াই যে সংকটের মূল কারণ সেটি এখন সবার জানা। তবুও সৌভাগ্য অনেক দেরিতে হলেও সরকার ভুল বুঝতে পেরেছে। গ্যাস অনুসন্ধানে ব্যাপক তৎপরতা শুরু হয়েছে, হয়তো কয়লা উত্তোলনেও কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়া হবে। কিন্তু এই সব কার্যক্রমের সুফল আসতে ৫-৭ বছর লেগে যাবে। ২০৩০ পর্যন্ত ঘাটতি সামাল দিতে হবে গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সেক্টরকে।
এখন ঈদের ছুটি। অধিকাংশ কলকারখানা উৎপাদনে না থাকায় চাহিদা সীমিত। কিন্তু ১৫ এপ্রিলের পর থেকে সব কিছু আবারো পুরোনো রূপে ফিরে আসলে জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকট কিন্তু জ্বালানি দুর্ভিক্ষ হিসেবে দেখা দিতে পারে।
পেট্রোবাংলার দৈনিক গ্যাস উৎপাদন এবং বিতরণ প্রতিবেদন ১২-১৩ এপ্রিল ২০২৪ থেকে দেখা যায় ৩৭৬০ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার বিপরীতে এই সময়ে সরবরাহ করা হয়েছে ২০৭০.১০ মিলিয়ন ঘনফুট। পেট্রোবাংলার তিন উৎপাদন কোম্পানি বিজিএফসিএল, এসজিএফএল এবং বাপেক্সের সম্মিলিত ১১৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতার বিপরীতে এই সময়ে উৎপাদন হয়েছে ৭৩৮.০০ মিলিয়ন ঘনফুট।
দুটি আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি শেভ্রন এবং টাল্লোর পরিচালনাধীন ৪টি গ্যাস ক্ষেত্রের ১৬১৫ মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতার বিপরীতে এই সময় উৎপাদন হয়েছে ৬৮৫.৪০ মিলিয়ন ঘনফুট। দুটি ভাসমান টার্মিনাল ব্যবহার করে ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট আরএলএনজি সরবরাহ ক্ষমতা থাকলেও এই সময় সরবরাহ করা হয়েছে ৬৪৬.৭০ মিলিয়ন ঘনফুট। জানা গেছে শেভ্রন বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্রে কিছু রক্ষণাবেক্ষন কাজের জন্য উৎপাদন সীমিত করা হয়েছে।
তবে বিবিয়ানা, জালালাবাদ, মৌলভীবাজার, বাঙ্গুরা সব গ্যাস ক্ষেত্র থেকেও উৎপাদন কমছে। দুটি ভাসমান টার্মিনাল থেকে ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ ক্ষমতা সৃষ্টি হলেও বিতরণ সীমাবদ্ধতার জন্য ৯৫০-১০০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি আর এলএনজি সরবরাহ সম্ভব নাও হতে পারে।
এমনিতেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের চাহিদা ২৩১৬.৯০ মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে ১১১৪.৬০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করে প্রায় ৩৫০০-৪০০০ মেগাওয়াট গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থগিত রয়েছে। সার উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল প্রাকৃতিক গ্যাস। সেখানেও ৩২৯.০০ মিলিয়ন গ্যাস চাহিদার বিপরীতে মাত্র ২২.৮০ মিলিয়ন গ্যাস সরবরাহ করে সব সারকারখানার উৎপাদন স্থগিত।
এতো কিছুর পরেও শিল্প গ্রাহকরা আছে নিদারুন গ্যাস সংকটে। এবারের গ্রীষ্মে তাপমাত্রা নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করতে পারে। দ্রুত কিছু করা সম্ভব না। চাইলেও ২০২৪, ২০২৫ সংকট মুক্ত হতে পারবে না। তবুও জ্বালানি বিদ্যুৎ ব্যবহারে কৃচ্ছতা, অপচয় রোধ এবং প্রণোদনা দিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অবদান বাড়ানোর সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা নিতে হবে।
সরকারের উপদেষ্টা, মন্ত্রী, সংসদ সদস্যগণদের কম কথা বলে আন্তরিকতা এবং দেশ প্রেম নিয়ে কাজ করতে হবে। ব্যর্থতার দায় দায়িত্ব নিতে হবে। জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। জ্বালানি দুর্ভিক্ষ দীর্ঘায়িত হলে অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে পড়বে।