বিশ্বের অন্যতম ধনকুবের মুকেশ আম্বানি তার ছোট ছেলে অনন্ত আম্বানির বিয়েতে আয়োজনের কোনো ঘাটতি রাখেননি। জলের মতো টাকা ঢেলেছেন। বিশ্বের তাবড় তারকাদের এনে হাজির করেছেন। গোটা বলিউড যেন তুলে এনেছিলেন। সবমিলিয়ে বলা যায় বিয়ে তো নয় ভারতের জামনগরে যেন বসেছিল জমজমাট তারার মেলা। উপমহাদেশে মাঝে মাঝেই পশ্চিমা বিশ্বের ডাকসাইটে ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব ঘটে। বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানেও যোগ দেন তারা। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গকে এমন আয়োজনে দেখা যায় না। আম্বানি তাকেও সস্ত্রীক উড়িয়ে এনেছিলেন ছেলের বিয়েতে। সকল ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে বিশ্বের সাবেক শীর্ষ ধনী বিল গেটসও এসেছিলন ধনকুবের বন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে। আরও এসেছিলেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী রিয়ান্না। রাধিকা-অনন্তর বিয়েতে এ গায়িকা গেয়েছেন তো বটেই। সঙ্গে কোমর দুলিয়ে নাচিয়েছেন জাহ্নবী কাপুরদের। নেটদুনিয়ার কল্যাণে নেটাগরিকরাও বঞ্চিত হননি জাহ্নবী-রিয়ান্নার যৌথ কোমর দুলুনি থেকে। ওদিকে ক্যাটরিনা কাইফ ও ভিকি কৌশল দম্পতির হাতে ছিল কাজের চাপ। তবুও আম্বানি বাড়ির আয়োজন এড়িয়ে যাননি তারা। তিন দিনের আয়োজনে একদিন সময় দিয়েছেন। নবদম্পতিকে দিয়ে গেছেন আশি লাখ রুপি মূল্যের হীরা বসানো ব্যাগ। ওদিকে অন্তঃসত্ত্বা দীপিকা পাড়ুকোন তো সবাইকে অবাক করে মঞ্চে উঠে নেচেছেন স্বামী রণবীর সিংয়ের সাথে। তবে বিষয়টি ভালো চোখে দেখেননি অনেকে। দীপিকাকে কিছু না বললেও অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নাচানোয় ক্ষোভ ঢেলেছেন রণবীরের ওপর। সব দায় তার ঘাড়ে চাপিয়েছেন তারা।
মানুষ সাত তারা দেখতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলেও আম্বানির ছেলের বিয়েতে অতিথিরা মুগ্ধ হয়েছেন তিন তারায়। এই তারকারা হলেন বলিউডের তিন খান। শাহরুখ, সালমান ও আমির। দর্শকরা কখনও শাহরুখ সালমানকে একসঙ্গে পেয়েছে আবার কখনও সালমান আমিরকে। কিন্তু তিন পাণ্ডবকে এক মঞ্চে পারফর্ম করতে দেখার সৌভাগ্য হয়নি কারও। সেই কাজটিই করে দেখিয়েছেন মুকেশ আম্বানি।
আট মিনিটে আট গান
গত বছর পার্থিব ব্যান্ডের ভোকাল রুমনকে তার এক ড্রামার ছোট ভাই বলেছিলেন, ‘আপনি তো গান বানান, একটা প্রোজেক্ট করেন। সব গানের ডিউরেশন হবে এক মিনিটের।’ শুনে প্রথমে হেসে উড়িয়ে দিলেও পরে ভাবতে থাকেন বিষয়টি। এরইমধ্যে গীতিকার বাপ্পী খানের লেখা একটি লাইন মনে ধরে তার। সাথে সাথে সুর করে পাঠিয়ে দেন। বাপ্পীরও পছন্দ হয়। শুরুটা হয় এভাবেই। এরপর বাপ্পী এরকম আরও কিছু লাইন লেখেন। রুমন সুর করেন। পরে লেখার মিছিলে যোগ দেন আর কয়েকজন গীতিকার। এরপর সুর করা স্বল্প কথার গানগুলো থেকে বেছে নেওয়া হয় মোট আটটি গান। সেগুলো হলো, অন্যভুবন, ঝুম, একটি প্রেমের গল্প, সে তুমি আর কে?, প্রসঙ্গ প্রিয়তম, জলের সিঁড়ি, নিদারুণ গুনগুন ও মেঘলা সুন্দরী রাতে। এর পাঁচটিই বাপ্পীর লেখা। বাকি তিনটি লিখেছেন গীতিকার গালিব সর্দার, মেঘলা ও মারুফ। গানগুলো যখন তৈরি ততদিনে চলে গেছে আট মাস। এবার আলোর মুখ দেখার পালা। এক্ষেত্রেও রুমন নেন এক ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত। গানগুলো প্রকাশের জন্যও বেছে নেন ব্যতিক্রম একটি দিন। ২৯ ফেব্রুয়ারি। এদিন গুণীজনদের উপস্থিতিতে রুমনের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত করা হয় অ্যালবামটি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ফোয়াদ নাসের বাবু, মাকসুদুল হক, শহীদ মাহমুদ জঙ্গী, হামিন আহমেদ, লাবু রহমান, মানাম আহমেদ, টিপুসহ ব্যান্ড সংগীতের গুণী ব্যক্তিত্বগণ। রুমন বলেন, ‘১ মিনিট দৈর্ঘ্য বা তারও কম সময়ের গান থাকতে পারে। আছেও নিশ্চয়ই। কিন্তু ৮টা গান দিয়ে ৮ মিনিটের একটা পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম পৃথিবীতে এর আগে হয়েছে বলে আমার জানা নেই। সেজন্যই অ্যালবামের নাম ‘অপ্রচলিত’ রাখা। প্রকাশের জন্য লিপ ইয়ার দিনটাকে বেছে নেওয়া।’
মাইলস-এর মানাম আহমেদ বলেন, ‘দারুণ লেগেছে আইডিয়াটি। যদিও এই প্র্যাকটিসটা আমরাও করতাম, যখন অ্যালবামের প্রচলন ছিল। তখন একসঙ্গে অনেকগুলো গানের ডামি তৈরি করতাম। যেগুলোর দৈর্ঘ্য এক মিনিট বা তারও কম থাকতো। এরপর ব্যান্ড মেম্বার ও বন্ধুদের সেগুলো শোনাতাম। যে সুর বা লিরিকটা ভোট পেতো, সেটা পরে পূর্ণাঙ্গ গান তৈরি করতাম। তো আমারও রুমনের চাওয়া এখন, ভালো লেগেছে। এবার গানগুলো শেষ করো।’ বলে রাখা ভালো আট মিনিটের আট গানের জন্য আটটি থিমেটিক ভিডিও-ও করা হয়েছে।
নারী দিবসে ৮ জন নারীর হাতে সম্মাননা
থিয়েটারের সঙ্গে সম্পৃক্ত অভিনেত্রীদের সম্মাননা দিয়ে আসছে কাঁচখেলা রেপার্টরি থিয়েটার। প্রতি বছর এজন্য তারা বেছে নেয় ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এ বছর এ সম্মাননা উঠেছে গুণী অভিনেত্রী মোমেনা চৌধুরী, রোজী সেলিম, নাজনীন হাসান চুমকি, তনিমা হামিদের হাতে। এছাড়া জুয়েনা শবনম, শামসি আরা সায়েকা, হাসিনা সাফিনা বানু উর্মি ও সৈয়দা নওশীন ইসলামকে দিশাকে এ সম্মাননায় ভূষিত করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নাট্যদলটির প্রতিষ্ঠাতা সায়েম সামাদ বলেন, ‘সকল ক্ষেত্রে নারীর অবদান অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের মঞ্চনাটকে নারীর মেধা ও শ্রমের মূল্যায়ন যথাযথভাবে হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। পুরুষ সহকর্মীর তুলনায় নারীকে থিয়েটারে সম্পৃক্ত হতে সাধনা চালিয়ে যেতে অনেক বেশি প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়তে হয়। নারীর মঞ্চ সাধনাকে মূল্যায়িত করতে প্রতিবছর এই আয়োজন করছি। সবার সহযোগিতা পেলে ভবিষ্যতে আরো ভালো কিছু উপহার দেওয়ার ইচ্ছা আছে। আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই প্রত্যেক নারী শিল্পীকে – যারা এই সম্মাননা গ্রহণ করার জন্য সম্মতি দিয়েছেন। কারণ তাদের কারণেই আলোকিত হবে এই অনুষ্ঠান।’
অন্যদিকে অভিনেত্রী রোজী সেলিম সম্মাননা নিয়ে নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে বলেন, ‘প্রতিবছর মঞ্চনাটকের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর মেধার মূল্যায়নে কাঁচখেলা রেপার্টরি থিয়েটার এই সম্মাননা প্রদান করছে। আমি মনে করি, নারীর মেধার মূল্যায়নের মাধ্যমে মঞ্চনাটক নারীর অংশগ্রহণে আরো সমৃদ্ধ হবে।’
৮ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর মহিলা সমিতি মিলনায়তনে উৎসবের উদ্বোধনী দিনে তুলে দেওয়া হয় এ সম্মাননা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তারানা হালিম।
তারকাদের কপালে টিপের হঠাৎ জায়গা বদল
নারীর সৌন্দর্য বর্ধনের অন্যতম উপাদান টিপ। এটি ছাড়া সাজসজ্জার ষোলোকলা যেন পূরণ হবার নয়। অনেক সময় একটি টিপের মালিকানা পেলেই নারীর সৌন্দর্য হয়ে ওঠে আরও সম্ভ্রান্ত। একবার ভাবুন তো টিপটি যদি নারীর কপালে বাঁকা হয়ে বসে থাকে তাহলে কেমন লাগবে। এরইমধ্যে সে অভিজ্ঞতা হয়েছে সবার। মার্চের শুরুতে দেশের শীর্ষ নারী তারকারা এই অভিনব কায়দায় টিপ পরে নিজেদের ফেসবুকে সেলফি পোস্ট করেন। সঙ্গে জুড়ে দেন #ড়ফফফড়ঃংবষভরব. প্রিয় তারকাদের কপালে টিপের জায়গা বদল দেখে কৌতুহলী হন নেটাগরিকরা। তখন জানা যায় বিষয়টি হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। নারী দিবসকে সামনে রেখে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে জনমত গড়ে তোলার লক্ষ্যেই সামাজিকমাধ্যমে এ পদক্ষেপ নিয়েছেন তারা। এই আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব সারা যাকের। ৩ মার্চ নিজে টিপ জায়গা বদল করে পরে সামাজিকমাধ্যমে এ আহ্বান জানান। তার ডাকে সাড়া দিয়েই বিষয়টি ছড়িয়ে দেন অন্যরা।
এরপরই দেশের শীর্ষ তারকাদের ফেসবুকে ভেসে ওঠে কপালের একপাশে টিপসহ মুখচ্ছবি। ক্যাপশনে তারা নিজেদের মনের কথাও লেখেন।
কপালে বাঁকা টিপ পরে সেলফি পোস্ট করে জয়া আহসান লেখেন, ‘টিপ দিয়ে আমরা নারীরা নিজেদের শোভন করে তুলি। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের টিপ পরা হাসি হাসি মুখের ছবিতে লাইক পড়তে থাকে। কিন্তু ঘরের ভেতরেও কি আমাদের সবার ছবিটা এই রকম? দেশে প্রতি তিনজন নারীর একজন সহিংসতার শিকার। রক্তে মেখে যাচ্ছে তাদের শোভন সৌন্দর্য। স্খলিত হয়ে পড়ছে টিপ।’
অন্যদিকে ‘হ্যাশ ট্যাগ অড ডট সেলফি’র এই ক্যাম্পেইন নিয়ে নাট্যজন সারা যাকের জানান, দেশের নারীরা প্রতিদিন ঘরে বাইরে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কিন্তু সে অনুপাতে এটা নিয়ে কোনো প্রতিবাদ হচ্ছে না। সবাই মিলে সোচ্চার হওয়ার এখনই সময়। এ সময়, কোনো নারীকে নির্যাতিত হতে দেখলে সবাইকে গলার স্বর চড়িয়ে প্রতিবাদ করার আহ্বানও জানান তিনি।
এই লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ফ্রেমবন্দি