সারাদেশে গত পাঁচদিন ধরে ইন্টারনেটে ধীরগতি পাচ্ছেন গ্রাহকরা। পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় স্থাপিত সাবমেরিন ক্যাবলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগে এ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ করছে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসিও (বিএসসিপিএলসি)। তবে সহসাই ইন্টারনেটের স্বাভাবিক গতি ফিরছে না। ধীরগতির এ পরিস্থিতি চলতে পারে আরও এক মাস।
বিএসসিপিএলসি বলছে, ইন্দোনেশিয়ার জলসীমায় সমুদ্রের তলদেশে ফাইবার ক্যাবল কাটা পড়েছে। সেখানে মেরামতের কাজ চলছে। মেরামত শেষ হতে অন্তত ৫ সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে মে মাসের শেষ নাগাদ সংযোগ স্বাভাবিক হতে পারে।
জানা গেছে, ১৯ এপ্রিল দিনগত রাত ১২টার দিক থেকে সারাদেশে ইন্টারনেটে ধীরগতি দেখা দেয়। বিএসসিপিএলসি জানতে পারে সিঙ্গাপুরে জলসীমায় কোথাও ফাইবার ক্যাবল কাটা পড়েছে। পরে আরও অনুসন্ধানে জানা যায় সিঙ্গাপুর নয়, ইন্দোনেশিয়ার জলসীমায় সমুদ্রের তলদেশে ক্যাবল ‘ব্রেক’ করেছে। এতে দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের (সিমিউই-৫) সংযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
১ হাজার ৬০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করা দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সংযোগ এখন পুরোপুরি বন্ধ। শুধুমাত্র প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলে ৮০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সরবরাহে রয়েছে। এত বিশাল সংখ্যক গ্রাহকের ইন্টারনেট সেবা কীভাবে চলছে, তা নিয়ে প্রশ্ন অনেকের।
বিএসসিপিএলসি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে মোট ব্যান্ডউইথের ব্যবহার ৫ হাজার জিবিপিএসের বেশি। এর অর্ধেকেরও বেশি প্রায় ২ হাজার ৭০০ জিবিপিএস আন্তর্জাতিক টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল (আইটিসি) লাইসেন্সের মাধ্যমে আসে, যা ভারত থেকে স্থলপথে ব্যান্ডউইথ আমদানি করতে ব্যবহৃত হয়।
বাকি ২ হাজার ৪০০ জিবিপিএসের মতো ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করে বিএসসিপিএলসি। দুটি সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে এ ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য-পশ্চিম ইউরোপ-৪ (সিমিউই-৪) কনসোর্টিয়ামের সদস্য। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হয়েছিল। এর ল্যান্ডিং স্টেশন কক্সবাজারে। এটি প্রায় ৮০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করে থাকে।
অন্যদিকে দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সিমিউই-৫ ঢুকেছে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা হয়ে। দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ১ হাজার ৬০০ জিবিপিএস সরবরাহ করা হয়। বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ব্যান্ডউইথ প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলে শিফটিং করা হচ্ছে।
বিএসসিপিএলসির মহাব্যবস্থাপক (চালনা ও রক্ষণ) সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বিকল্প অনেকগুলো উপায় রয়েছে। সেগুলো কার্যকর করা হচ্ছে। যদিও সব বিকল্প উপায়গুলো পুরোপুরি এখনো কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। এমনকি প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল যেটি সিমিউই-৪ নামে পরিচিত, সেটির পুরো ব্যান্ডউইথ বহনের সক্ষমতা রয়েছে। তবে এজন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে বাড়তি খরচ দিতে হবে। এটা ছাড়াও আরও কিছু বিকল্প রয়েছে। সেগুলো নিয়েও কাজ চলছে।’