সালেক সুফী
২০২৪ আইসিসি টি২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেও ভরসা পাই না। বরাবরের মতো এবারো বাংলাদেশের প্রস্তুতি যুৎসই হলো না। এমনিতেই সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে। অন্যান্য দলগুলো যখন নানা ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে নিজেদের শাণিত করেছে তখন বাংলাদেশ বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বের বাইরে থাকা দুর্বল জিম্বাবুয়ে দলের বিরুদ্ধে নিজেদের মাঠে অনুষ্ঠিত ৫ ম্যাচের টি২০ সিরিজে অনুজ্জ্বল পারফরমেন্স করে অতৃপ্তির ৪-১ জয় পেয়েছে। শেষ ম্যাচে শোচনীয়ভাবে ৮ উইকেটে পরাজিত হয়েছে।
প্রথম দুটি ম্যাচে দাপুটে জয় পেলেও তৃতীয়, চতুর্থ ম্যাচ দুটিতে জয়ের ব্যাবধান ছিল সামান্য। গোটা সিরিজ জুড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল ছন্নছাড়া। একটি ম্যাচ ছাড়া টপ অর্ডার ব্যাটিং ছিল মেরুদণ্ডবিহীন। শেষ ম্যাচে বোলিং ছিল নিয়ন্ত্রণবিহীন। টি২০ ক্রিকেট মূলত ব্যাটসম্যানদের স্বর্গরাজ্য। সেখানে ছন্নছাড়া ব্যাটিং নিয়ে বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট খেলা বাংলাদেশের সাফল্য নিয়ে স্বপ্ন দেখতেও ভয় হয়। টি২০ ভার্সনের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী আইপিএল ২০২৪ এ যেভাবে বিভিন্ন দেশের মারকুটে ব্যাটসম্যানরা বাটিংয়ের ব্যাকরণ পাল্টে দিচ্ছে বাংলাদেশের বোলাররা হয়তো খেই হারিয়ে ফেলবে।
দলের নড়বড়ে বাটিংয়ের কথা বলি।বিসিবি কেন যে তামিম পাজেল মীমাংসা করতে পারলো না। বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি বলতে কিছু নেই। লিটন দাসের ফর্ম তলানিতে। সৌম্যকে নিয়ে ভরসা করা দায়। তরুণ তানজিদ তামিম এখনো অপরিণত। নির্বাচকরা পারভেজ ইমনকে যাচাই করার সুযোগ পেলো না। বাংলাদেশের ওপেনাররা উইকেট এবং পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে পারে না।
ওভারে তিন চারটি সিঙ্গেলস নিয়েও বড় রানের ভীত গড়া যায় সেটি ওদের আয়ত্তের বাইরে। টপ অর্ডারে অধিনায়ক নাজমুল শান্তর ব্যাটে রান খরা। তাওহীদ হৃদয়, সাকিব, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ভরসা। কিন্তু টপ অর্ডার ভালো সূচনা না করলে মিডল অর্ডার তুখোড় প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে লড়াকু পুঁজি পারবে না।
আমেরিকার ড্রপ ইন পিচগুলোতে স্পিন ধরলেও ১৮০-২০০ রান না করতে পারলে কোন ম্যাচ জয় করাই সহজ হবে না। এই দলে সাকিব এবং মাহমুদুল্লাহ ছাড়া বিশ্বমানের কোন ব্যাটসম্যান নাই। ব্যাটিং বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। বাংলাদেশ তামিম, মুশফিকের মানের কোন ব্যাটসম্যান খুঁজে পায় নি।শুধু মানসিকতা নয়। ক্রিকেট মানেরও ঘাটতি আছে।
বোলিংয়ে অন্যতম প্রধান ভরসা তাসকিন শেষ মুহূর্তে আহত হয়ে পড়ায় পেস আক্রমণ দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। শরিফুল, মুস্তাফিজ কতটা সামাল দিতে পারবে সন্দেহ আছে। স্পিন আক্রমণে সাকিবের সঙ্গে মেহেদী মিরাজ থাকলে ভালো হতো।জানিনা কেন মেহেদী মিরাজ নির্বাচকদের রাডারে নেই। বিশ্বকাপের মতো আসরে মেহেদী মিরাজের মতো অভিজ্ঞ চৌকষ খেলোয়াড় প্রয়োজন ছিল। রিশাদ হোসেন এবং শেখ মাহেদিকে দলে রেখেও মেহেদী মিরাজকে রাখা যেত।
বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকা এবং শ্রীলংকার বিরুদ্ধে খেলবে আমেরিকায়। পরের রাউন্ডে যেতে হলে একটি ম্যাচ জয় করতে হবে।বর্তমান ফর্ম, ফিটনেস বিবেচনায় দুই দলের কোনোটিকেই হারানো আদৌ সহজ হবে না। বাকি রইলো নেপাল এবং নেদারল্যান্ডস ও নেপাল। দুটি দল বাংলাদেশের সঙ্গে লড়াই করে হারিয়ে দিলে বিস্মিত হবো না।
আমি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হলেও মনেপ্রাণে বাংলাদেশের সাফল্য কামনা করি। কিন্তু বাংলাদেশ দলের বর্তমান স্থিতি আমাকে কোনোভাবেই বাংলাদেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার ভরসা দেয় না। হয়তো শেষ মুহূর্তে আমেরিকার সাথে অনুশীলন সিরিজ শেষে গুছিয়ে নিবে বাংলাদেশ।