বিনোদনের আইপিএল ফাইনালে চাঁদের অন্যপিঠ দেখলো ক্রিকেটাঙ্গন

সালেক সুফী

বলিউড বিনোদনসংযুক্ত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ টি২০ ২০২৪-এর শেষ খেলাটি দেখে বিস্ময় জাগতেই পারে। যে টুর্নামেন্ট জুড়ে ব্যাটসম্যানরা নির্দয়ভাবে বোলারদের পিটিয়ে রান সংগ্রহ করেছে। ২২০, ২৩০, ২৫০ রান হয়েছে অনেক ম্যাচে। আবার অনেক খেলায় হিমালয়সম টার্গেট তাড়া করে ম্যাচ জয় করেছে দ্বিতীয় ইনিংস খেলা দল।

আর ফাইনালে আসা দুটি দল কলকাতা নাইট রাইডার্স এবং সান রাইজার্স হায়দ্রাবাদ নিজেদের আগের ম্যাচগুলোতে বড় স্কোর করেছে। অথচ সবার ধারণা মিথ্যা প্রমাণ করে কাল ফাইনালে প্রথম ব্যাটিং করা এসআরএইচ ১৮.৩ ওভারে ১১৩ রানে গুটিয়ে যায়। জবাবে মাত্র ১০.৩ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ১১৪/২ করে ৮ উইকেটে আবারো আইপিএল শিরোপা জয় করে বলিউড বাদশা শাহরুখ খানের দল জনপ্রিয় কলকাতা নাইট রাইডার্স।

আলোচিত-সমালোচিত আইপিএল ক্রিকেট যুদ্ধের অবতারণা করে শেষ ম্যাচটিতে স্রোতের বিপরীত ধারা উপহার দিলো। আইপিএল-এ এবারের মতো একপেশে ফাইনাল খেলা আগে কেউ দেখেনি।

খেলার আগে ক্রিকেট বিশ্লেষক এবং বোদ্ধাদের ধারণা ছিল আইপিএল ২০২৪-এ ফাইনালে দুটি শক্তিশালী দলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। মারকুটে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান ট্রাভিস হেড, ভারতীয় বিস্ময় অভিষেক শর্মা, দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক এইডেন মারক‍ারাম, হেনরিক ক্লাসেন সম্মিলিতভাবে অথবা এবারের আইপিএলে রেকর্ড চুক্তিতে খেলা অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলার মিচেল স্টার্ক, ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই অলরাউন্ডার সুনীল নারিন এবং আন্দ্রে রাসেলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

কিন্তু স্রোতের বিপরীত খেলা দেখলো বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমীরা। ট্রাভিস হেড গোল্ডেন ডাক পেলো, অভিষেক শর্মা করলো মাত্র ২ রান। দ্বিতীয় ওভার শেষে ৬ রানে ২ উইকেট হারানো হায়দ্রাবাদের দলটি আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। আক্রমণাত্মক বোলিং আর তুখোড় ফিল্ডিং করে কেকেআর ১১৩ রানেই গুটিয়ে দেয় হায়দ্রাবাদের দলটিকে।

কামিন্স (২৪), এইডেন মারকারাম (২০) হেনরিক ক্লাসেন (১৬), নীতিশ রানা (১৩) ছাড়া আর কেউ দুই অংকের স্কোর করতে পারেননি। খেলার ভাগ্য তাই মাঝপথেই নির্ধারিত হয়ে যায়। বড় ম্যাচের বড় তারকা আন্দ্রে রাসেল (৩/১৯), টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বেশি অর্থ পাওয়া মিচেল স্টার্ক (২/১৪) গুঁড়ো করে দেয় প্রতিপক্ষের প্রতিরোধের দুর্গ।

জবাবে ব্যাটিং করতে এসে কেকেআর অধিনায়ক ভেঙ্কটেশ আয়ার (৫২*) এবং আফগান ওপেনার রামানুল্লাহ গুড়বাজের (৩৯) সাবলীল ব্যাটিং জোয়ার ভাসিয়ে দিলো প্রতিপক্ষকে। আইপিএলের অন্যতম সফল দল কেকেআরের মুকুটে যোগ হলো আরো একটি পালক।

সবাই জানে ক্রিকেট বিশ্বে বিশ্বকাপ ছাড়া আর কোনো টুর্নামেন্ট নিয়ে এতো আলোচনা-বিতর্ক হয় না। প্রতিবার টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই সবার দৃষ্টি থাকে কোন ফ্রাঞ্চাইজি কাকে দলে নিয়ে কী ধরনের দল গঠন করলো। আইপিএল ইতিহাসের দুটি সফল দল মুম্বাই ইন্ডিয়ানস অথবা চেন্নাই সুপার কিংস প্লে অফ রাউন্ডে আসতে পারলো না। বিশ্বসেরা কিছু খেলোয়াড় বিরাট কোহলি,  গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, ফাফ ডুপ্লেসি, ক্যামেরুন গ্রিনকে নিয়ে প্লে অফ রাউন্ডে এসেও ঝরে গেলো।

স্বভাবতই ফাইনাল খেলাটি টুর্নামেন্টের স্রোতধারার বিপরীতমুখী হওয়ায় বিস্ময় জেগেছে। আমি আইপিএলজয়ী কেকেআরের সাফল্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করছি না। তবে সমগ্র সিরিজ জুড়ে রমরমা  ক্রিকেট শেষে ম্যাড়ম্যাড়ে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করতে পারে।

টুর্নামেন্ট শেষ। দুই দলে থাকা বিভিন্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড়রা বিশ্বকাপ খেলতে পাড়ি জমাবে। আইপিএল খেলে অন্য কোন দলের কী সুবিধা হয় জানিনা। ভারত কিন্তু প্রতিবারেই উপকৃত হয় বিশ্বমানের নতুন তরুণ প্রতিভা আবিষ্কার করে।

সালেক সুফী, ক্রীড়া লেখক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

eight − 1 =