তারকাদের ঈদ

রোজ অ্যাডেনিয়াম

ঈদ ঘিরে চলতে থাকে নানা আয়োজন। পরিবারের সাথে ঈদ করতে অনেকেই ছুটে যান দেশের বাড়ি। ঈদের ছুটিতে বাড়তি আনন্দ যোগ করতে টিভি চ্যানেল, ওটিটি, ইউটিউবে প্রচার হয় অনেক নতুন নাটক, ওয়েব ফিল্ম। পাশাপাশি নিজেকে আলাদা করে সাজাতে অনেকেই প্রস্তুতি নেন। পিছিয়ে নেই শোবিজ তারকারাও। তারকারা তাদের ঈদ আনন্দ ভাগ করে নিয়েছেন আমাদের পাঠকদের সঙ্গে। কয়েকজন তারকা শুনিয়েছেন তাদের ছোটবেলার ঈদের স্মৃতি।

তারকাদের ছোটবেলার ঈদ স্মৃতি

ডলি জহুর: ঈদে ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে গ্রামে যেতাম। সে সময়ের ঈদ আমাকে খুব নস্টালজিক করে দেয়। রোজার পুরো এক মাস ছুটি থাকত। সে আনন্দ এখন আর ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। শুধু উপলব্ধিতে আনা যায়। ছোটবেলায় মা-বাবা ছাড়াও মামাদের কাছ থেকে নতুন জামা পেতাম। তবে যখন পেতাম তখন লুকিয়ে রাখতাম। কাউকে দেখতে দিতাম না। আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে বান্ধবীদের কাছে কোনো কিছু বলতাম না। ঈদের দিন যখন নতুন জামা পরতাম তখন প্রত্যেকের চোখ ছানাবড়া হয়ে যেত। ঈদের দিন দল বেঁধে সকালে বেরিয়ে পড়তাম। উদ্দেশ্য একটাই, সালামি নিতে হবে। প্রত্যেকের ঘরে যেতাম; কিন্তু খেতাম না। নজর থাকত কে কত টাকা সালামি দেয়। আমাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলত কে কত সালামি পায়। আস্তে আস্তে বড় হলাম। নিজেও রান্না করতাম। এ সময়ের ঈদের দিন আর আগের মতো নেই। ঈদের দিনেও বেশিরভাগ মানুষ নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে। আমি মনে করি, ঈদ ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। একই সঙ্গে বড়রাও এ দিনকে অন্য রকমভাবে উদযাপন করার সুযোগ পায়।

চম্পা: ছোটবেলার ঈদ ছিল অনেক মজার। সেখানে কোনো টেনশন ছিল না। ছিল না বাড়তি কোনো ঝামেলা। সবাই ঘুরতাম, আড্ডা দিতাম। সেই ঈদের সঙ্গে এই ঈদের কোনো তুলনাই হয় না। আমাদের পরিবারে ঈদের আগে কেউ কারও জামা দেখতে পেতাম না, লুকিয়ে রাখতাম। আমি কী পরব, কিভাবে সাজব সেটা আমাদের কাছে বিরাট ব্যাপার ছিল। আমাদের তিন বোনের সম্পর্কটা অনেক চমৎকার। একসঙ্গে আমরা অনেক আনন্দ করি, মজা করি। একই সঙ্গে ছোটবেলার দিনগুলোকেও অনেক মিস করি। আমি মনে করি, মানুষের শৈশবের দিনগুলোই সব থেকে আনন্দের ও মজার। সেটি ঈদের বাইরের দিনগুলোও।

মিশা সওদাগর: আমাদের ফেলে আসা দিনগুলোই রঙিন ছিল। ছোটবেলার অন্য আনন্দের চেয়ে ঈদের আনন্দ ছিল ব্যতিক্রম। আমার বেড়ে ওঠা পুরান ঢাকায়। অনেকেরই জানা আছে পুরান ঢাকার সংস্কৃতি কেমন। এখানে সবকিছু অন্যদের থেকে একটু ভিন্নভাবেই হয়। পুরান ঢাকার হওয়াতে আনন্দ করার সুযোগ একটু বেশি পেতাম। ঈদের নামাজ পড়ে বন্ধুরা বাড়ির বাইরে সময় কাটাতাম। আইসক্রিম, ফুচকাসহ নানারকম খাবার খেতাম। ঈদের দিন সালামি পেতাম বেশ। সালামি দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে কত কী কিনে খেতাম! সালামির টাকা ফুরিয়ে গেলে বন্ধুরা মিলে পরিকল্পনা করতাম কার বাসায় গেলে সালামি পাব, কার বাসায় গেলে খাবার খেতে পারব। ছোটবেলার সেসব দিন কখনো ভুলে যাওয়ার নয়। ছোটবেলার আনন্দই সবার স্মৃতিতে গেঁথে থাকে।

শাহনাজ খুশি: ছোটবেলায় ঈদ শব্দের মধ্যে আনন্দে বিলীন হওয়ার একটা ব্যাপার ছিল। ঈদের আগের রাতে ঘুমাতে পারতাম না। সবাই মিলে সেহরি খাওয়ার সময়েই জেগে উঠতাম। ঈদে খুব কম সালামি পেতাম। তারপরও সালামির এ পর্বটা ছিল খুবই আনন্দের। দোয়েল পাখির ছবিওয়ালা ২ টাকার নোট, হরিণের ছবিওয়ালা ১ টাকার নোট। সারাদিন এত হইচই করতাম যে সন্ধ্যার আগেই ঘুমিয়ে যেতাম। তবে এখনকার ঈদ আর আগের মতো নেই। আগে আমি ছোট ছিলাম। এখন আমি আর সেই ছোট নেই। সংসারজীবনে আসার পর বাচ্চাদের নিয়ে, বন্ধুবান্ধব নিয়ে আনন্দ করা হয়। বছরে এই একটা দিন আমি মনে করি আনন্দের সঙ্গেই কাটাতে পারলে ভালো। সারা বছরই আমরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকি। এ দিনটিতে কাছের মানুষদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ ও কথা বলার সুযোগ হয়।

 

কেমন কাটলো তাদের ঈদ

এবার কোন তারকা কেমন ঈদ কাটালেন এক নজর চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।

ববিতা: এবার ঢাকাতেই কেটেছে অভিনেত্রী ববিতার ঈদ। অন্যবার ঈদে প্রবাসীপুত্র অনিকের কাছে ছুটে যান। এবার যাননি। কারণ কমাস আগেই তিনি কানাডা ও আমেরিকা থেকে দেশে ফিরেছেন। এবার গুলশানের বাসায় বোন ও বোনের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন ববিতা।

অমিত হাসান: আসলে ঈদ নিয়ে তেমন কোনো পরিকল্পনা থাকে না। ঈদ ঢাকাতেই থাকা হয় বেশির ভাগ সময়। এবারও তাই। ঈদের পর দিন গ্রামের বাড়িতে গেছি, সেখানে আমার মা আছে। মাকে ছাড়া আমাদের ঈদ পূর্ণতা পায় না।

শাকিব খান: এবারের ঈদে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে এই তারকার ‘রাজকুমার’ সিনেমা। যে কারণে ঈদের দিন গুলশানে নিজ বাড়িতেই ছিলেন শাকিব। সেখানেই সময় কাটিয়েছেন পরিবারের মানুষদের সঙ্গে।

জয়া আহসান: দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান এবার ঈদে হাজির হয়েছেন নতুন সাজে, নতুন শাড়িতে। সেই ছবি শেয়ার করেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘ঈদ মোবারক’। ছবিতে দেখা গেছে হাস্যোজ্জ্বল জয়াকে। এ অভিনেত্রীর পোজ দেওয়া ছবিতে রয়েছে চিরসবুজের ছোঁয়া। শেয়ার করা ছবিতে ভালোবাসা জানাতে ভোলেননি তার ভক্ত-অনুরাগীরা।

শাবনূর: স্থায়ীভাবে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে থাকেন অভিনেত্রী শাবনূর। সেখানে মা, ভাইবোন, সন্তানসহ ঈদ উদযাপন করেছেন এই অভিনেত্রী। ঈদে তার ফেসবুক পেজে পুত্র আইজানকে নিয়ে একটি পোস্ট করে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি।

অপু বিশ্বাস: ঢালিউড কুইন অপু বিশ্বাসও এবারের ঈদ ঢাকাতেই উদ্্যাপন করেছেন। তার কয়েকদিন আগেই ভারত থেকে দেশে ফিরেন এই অভিনেত্রী। ছেলে আব্রাম খান জয়কে নিয়ে নিজের বাড়িতেই ঈদ করেছেন। ঈদের দিন ছেলেকে নিয়ে শাকিবের বাড়িতে গিয়েছিলেন।

নওশীন: এক সময়ের মডেল, আরজে ও অভিনয়শিল্পী নওশীন এখন পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইয়র্কে থাকেন। সেখানেই কেটেছে তার ঈদ। এই তারকা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছেন, আমাদের পক্ষ থেকে ঈদ মোবারক। মিস ইউ আদনান ফারুক।

মোনালিসা: যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ঈদ উদ্্যাপন করেছেন জনপ্রিয় ও মডেল অভিনয়শিল্পী মোনালিসা। নিজের ফেসবুক পেজে একটি ছবি পোস্ট করে তার ভক্তদের ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে ভোলেননি তিনি।

অনন্ত-বর্ষা: সন্তানদের নিয়ে ছবি শেয়ার করে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অভিনেতা অনন্ত জলিল ও বর্ষা। এ ছাড়া ফেসবুক পেজে দুই সন্তানকে নিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করে তিনি তার ভক্তদের বলেছেন, আমরা এখন তুর্কিতে আছি। আজ তুর্কিতে ঈদ। সবাইকে জানাই ঈদের শুভেচ্ছা।

মেহজাবীন: অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাস্যোজ্জ্বল ছবি শেয়ার করে ভক্তদের কাছে জানতে চেয়েছেন কেমন কেটেছে সবার ঈদ।

তাসনিয়া ফারিণ: ইস্তাম্বুলে ঈদ উদযাপন করছেন অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ। সেখান থেকেই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভক্ত-অনুরাগীদের।

নুসরাত ফারিয়া: ঈদের দিন শাড়ি পরেছিলেন অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া। নিজের ফেসবুকে সেই ছবি দিয়ে ভক্তদের শুভেচ্ছা জানাতে ভোলেননি তিনিও।

পরীমণি: অভিনেত্রী পরীমণির এবারের ঈদ একটু অন্যরকম কেটেছে। কারণ ভালোবাসার নানাকে হারানোর পর এটা পরীর প্রথম ঈদ। তবে সঙ্গে ছিল একমাত্র ছেলে পুণ্য। ছেলেকে নিয়ে কেটেছে পরীর নানাহীন রঙহীন ঈদ। ছেলের সঙ্গে কাটানো কিছু মুহূর্তের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন তিনি। ক্যাপশনে লিখেছেন, ঈদ। দেশে ঈদ উদযাপনের জন্য ৯ এপ্রিল কলকাতা থেকে দেশে ফিরেছেন এই অভিনেত্রী।

বুবলী: ঈদ মানেই তো অনেক আনন্দের একটি উৎসব আর তার সাথে যদি সিনেমা মুক্তির বিষয় থাকে তখন উৎসবের আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে যায়। বুবলী বলেন, পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করেছি, আর আমি যেহেতু খেতে এবং খাওয়াতে ভীষণ পছন্দ করি তাই আম্মুর সাথে রান্নাবান্নার ব্যাপার তো ছিলোই। সাথে পরিবারের বদের থেকে সালামি নেওয়া এবং ছোটদের সালামি দেওয়া সহ নিজের সিনেমা মুক্তির আনন্দ ছিল। তাই সবকিছু মিলিয়ে খুব আনন্দ করে ঈদ কেটেছে।

জায়েদ খান: ঢাকাই সিনেমার আলোচিত-সমালোচিত নায়ক জায়েদ খানের ঈদ কেটেছে ঢাকাতেই। এই ঈদেই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ‘সোনার চর’ সিনেমা। ঈদের দিন নিজ সিনেমা দেখতে লায়ন সিনেমাস ও ব্লকবাস্টার সিনেমাসে হাজির হয়ে ছিলেন এই নায়ক। ভাই-বোনদের সঙ্গে সময় দিয়ে ঈদের দুই দিন পর গ্রামে গিয়েছিলেন।

মাহিয়া মাহি: এবারের ঈদ ঢাকাতে ছেলে ফারিশকে নিয়েই উদ্্যাপন করেছেন বলে জানিয়েছেন অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি। উত্তরাতে নিজ বাসাতেই ঈদের সকালের শুরুটা করেন অভিনেত্রী। মাহি বলেন, এবারের ঈদ ঢাকাতেই করলাম। আমার একমাত্র ছেলে ফারিশকে নিয়ে ঈদটি ভালো কেটেছে। তবে যেহেতু আমি এখন সিঙ্গেল মাদার, তাই ঈদটিও এবার একটু অন্যরকম হয়েছে।

বিদ্যা সিনহা মিম: ঢালিউডের আরেক জনপ্রিয় নায়িকা বিদ্যা সিনহা মিম ঈদ উদ্্যাপনে পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে উড়াল দিয়েছিলেন সিঙ্গাপুরে। সেখানেই এবারের ঈদ পালন করেছেন তিনি। যেহেতু এই ঈদে নায়িকার কোনো সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়নি, ফলে ঈদের সময়টুকু পরিবারকেই দিয়েছেন মিম।

প্রার্থনা ফারদিন দীঘি: এবারের ঈদ ঢাকায় নিজ বাসাতে ও বন্ধুদের সঙ্গে কাটান অভিনেত্রী প্রার্থনা ফারদিন দীঘি। এই নায়িকা বলেন, ‘ঈদের দিনের সব রান্না আমিই করি। কেবল রান্নাবান্না নয়, ঘর গোছানো থেকে শুরু করে ঈদের দিনের সব কাজ একাই সামলাই বলা যায়! বাসায় বন্ধুরা আসে। তাদের নিয়ে আড্ডা দেই, খাওয়া-দাওয়া করি।। এবারও তাই করেছি।’

সাইমন সাদিক: প্রতি ঈদে গ্রামের বাড়ি চলে যান চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক। এবারও সেটাই করেছেন। এই নায়ক বলেন, ঈদ সবসময় আমার প্রাণের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে করার চেষ্টা করি। আমার গ্রামকে আমি কলিজার গ্রাম বলে ডাকি। এবারও পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে খুব ভালো একটি ঈদ পার করেছি।

নিরব: এবার ঈদে ঢাকাতেই ছিলেন নিরব। ঈদের দিন পরিবারের সঙ্গে সময় দিয়ে মুক্তি পাওয়া ঈদের সিনেমা দেখে সময় কেটেছে তার।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: হলি বলি টলি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

4 × 4 =