ঈদের সাজ

নীলাঞ্জনা নীলা

ঈদুল ফিতর বা রমজানের ঈদ নিয়ে অনেক ধরনের আয়োজন থাকলেও ঈদুল আজহার তেমন সাজগোজের পরিকল্পনা করা হয় না। কিন্তু ঈদ বলে কথা। রান্নাবান্না ও কাজের পাশাপাশি সাজগোজ করলে নিজের দিনটা আরো বেশি সুন্দর যাবে। জেনে নেওয়া যাক কেমন হতে পারে আপনার কোরবানি ঈদের সাজ। যাতে করে আপনি স্বচ্ছন্দে কাজ করতে পারবেন ও ঈদের আনন্দেও মেতে উঠতে পারবেন।

ঈদের আগে ত্বকের যত্ন

ঈদের কিছুদিন আগে থেকে ত্বকের যত্ন নেওয়া জরুরি। তা না হলে ঈদের দিন যতই মেকআপ করা হোক না কেন মুখের মলিনতা কমানো যাবে না। তাই ঈদের দিন নিজেকে ঝলমলে দেখাতে চাইলে ঈদের আগে থেকে শুরু করে দিন স্কিনের বাড়তি যত্ন। স্কিনের যত্ন নিতে হবে আপনার স্কিনের ধরন বুঝে। সব ধরনের উপাদান সব স্কিনের জন্য মানানসই না। এখন গরমকাল হলেও আবহাওয়া আর্দ্র হবার জন্য অনেকের স্কিন খুব বেশি শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে। স্কিন অতিরিক্ত শুষ্ক হলে মেকআপ ঠিকমতো বসতে চায় না। আপনার স্কিন যদি শুষ্ক হয়ে থাকে তাহলে ঘরোয়া উপায়ে যত্ন নিতে পারেন। রূপচর্চায় মধুর অবদান কারো অজানা নয়, যুগ যুগ ধরে সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে মধুর ব্যবহার করা হচ্ছে। মধুতে থাকা অ্যান্টি-সেপটিক এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকের ব্যাকটেরিয়া দূর করে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা হ্রাস করে। শুষ্ক স্কিনে মধু ম্যাসাজ করতে পারেন, ম্যাসাজের ফলে ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়বে ও মধু ত্বকের শুষ্কতা কমিয়ে ত্বক মসৃণ করে তুলবে। ১০ থেকে ১৫ মিনিট মধু মুখে লাগিয়ে রেখে ঠান্ডা পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের শুষ্কতা কমাতে এলোভেরা ভীষণ উপকারী। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এলোভেরা সরাসরি গাছ থেকে কেটে মুখে লাগানো উচিত নয়। অ্যালোভেরার সাথে মধু কিংবা অন্য কোনো উপাদান মিশিয়ে মুখে ব্যবহার করা যেতে পারে। ত্বকের যত্নে গ্লিসারিন বেশ উপকারী। তাই মুখে নিয়মিত দু-তিন ফোটা গ্লিসারিন ব্যবহার করতে পারেন।

যাদের ত্বকের ধরন তৈলাক্ত তাদের পোহাতে হয় বাড়তি ঝামেলা। কোরবানি ঈদে অন্যান্য সময়ের চাইতে বেশি কাজ ও রান্নাবান্নার চাপ থাকার কারণে ত্বক ঘেমে আরো বেশি তৈলাক্ত হয়ে যায়। তাই তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীদের ঈদের আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। তা না হলে স্কিনে পোড়া দাগ, ব্রণ বা র‌্যাশের মতো নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমাতে হলুদের বেশ উপকারিতা রয়েছে। সরাসরি কাঁচা হলুদ বেটে মুখে ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার বিভিন্ন ধরনের প্যাক তৈরি করা যেতে পারে। কাঁচা হলুদের সঙ্গে চন্দন গুঁড়া ও লেবুর রস মিশিয়ে প্যাক বানানো যেতে পারে। কিংবা দুধের সাথে হলুদ মিশিয়েও ব্যবহার করা যায়। দুধে প্রচুর পরিমাণ মিনারেল এবং ভিটামিন রয়েছে, যা ত্বকের মৃত কোষ দূর করে ত্বক কোমল করে থাকে। এছাড়া ত্বকের রিংকেল এবং মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে। হলুদের প্যাক মুখে ব্রণ ও ব্রণের দাগ কমাতে সাহায্য করে। ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে ব্যবহার করতে পারেন লেবুর রস। ত্বক তৈলাক্ত হয়ে গেলে লেবুর টুকরা নিয়ে মুখে ঘষে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে কিছুক্ষণের মধ্যে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমে আসে। অতিরিক্ত গরমের ফলে মুখে অনেক সময় পোড়া দাগ পড়ে যায়। এ পোড়া দাগ দূর করতে সাহায্য করতে পারে টমেটো। টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি যা ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। তৈলাক্ত ভাব দূর করার জন্য একটি সহজ পদ্ধতি হচ্ছে ঘুম থেকে উঠে সকালে উঠে বরফের টুকরা তোয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে মুখে মাসাজ করা। বরফ মুখের তৈলাক্ত ভাব ও ব্রণ হালকা করতে সাহায্য করে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে ময়েশ্চারাইজার। ত্বকের ধরন যেমনই হোক না কেন বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকে ময়েশ্চারাইজার প্রতিদিন ব্যবহার করতে হবে। যাদের ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক তাদের পানির সংস্পর্শে যাবার সাথে সাথে ময়েশ্চারাইজার আবার ব্যবহার করা উচিত। অতিরিক্ত গরমে রান্না করতে যাবার আগে এবং ঘর থেকে বের হবার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। তা না হলে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি ত্বকে বলিরেখা বা র‌্যাশের সৃষ্টি করবে। এছাড়া টোনার ব্যবহার করা অনেক বেশি জরুরি। টোনারের ক্ষেত্রে অবশ্যই অ্যালকোহল ফ্রি টোনার বেছে নিতে হবে। আমরা যা খাচ্ছি তার প্রভাব আমাদের শরীর ও ত্বকের উপর পড়ে থাকে। তাই স্কিন কেয়ারের পাশাপাশি নিজের ডায়াটের দিকেও নজর দিতে হবে। যেমন প্রচুর তরল জাতীয় খাবার এবং মৌসুমী ফল খাওয়া। এছাড়া সবুজ শাকসবজি, ভিটামিন সি ও ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।

ঈদের মেকআপ

ঈদুল আজহাতে সকাল থেকে দুপুর অবধি কাজের চাপ বেশি থাকে। তাই এই সময়ের সাজ থাকা উচিত খুবই হালকা। সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে নিতে হবে। সকালের সাজে ফাউন্ডেশন এড়িয়ে যাওয়া উচিত। ফাউন্ডেশনের বদলে ব্যবহার করতে পারেন বিবি ক্রিম। এরপর হালকা একটু ব্লাশন এপ্লাই করে, নুড লিপস্টিক দিতে পারেন। চোখের সাজে খুব বেশি কারুকাজ না করে চোখে পরে নিতে পারেন কাজল ও মাশকারা। সকালে কাজের চাপ বেশি থাকায় চুলের ঝামেলা এড়াতে চুল বেঁধে নিতে পারেন। চুলে খেজুর বেণী কিংবা ঢিলেঢালা খোঁপা করে নিতে পারেন। ব্যাস হয়ে গেল সকালের সাজ। এমন হালকা সাজে থাকলে কাজ করার সময় অস্বস্তি বোধ হবে না।

দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলে কাজের চাপ কিছুটা কমে আসে। তখন বাইরে ঘুরতে যাওয়া কিংবা বাড়িতে মেহমান আসে। সন্ধ্যার পর নিজের ইচ্ছেমতো মেকআপ করে নিতে পারেন। যেহেতু আবহাওয়া খুব গরম থাকবে তাই ভারী মেকআপ নেওয়ার আগে অবশ্যই প্রাইমার ব্যবহার করতে হবে। প্রাইমার মেকআপ বসতে সাহায্য করে। রাতে বেইজ মেকআপে আপনার স্কিনের শেইড অনুযায়ী ফাউন্ডেশন বেছে নিয়ে তা ব্যবহার করুন। কিন্তু ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে না চাইলে কনসিলার দিয়ে মুখের দাগ ঢেকে নিন। অতিরিক্ত দাগ থাকলে অরেঞ্জ কালারের কারেক্টিং কনসিলার ব্যবহার করতে হবে। এতে স্পট, ডার্ক সার্কেল, পিগমেন্টেশন ঢেকে যাবে। চোখের নিচের কনসিলার অনেক সময় ক্রিজিং হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে বিউটি স্পঞ্জে অনেকখানি লুজ পাউডার নিয়ে চোখের নিচে, স্মাইল লাইনে লাগিয়ে নিতে হবে। মেকআপ সেট করার জন্য ও মুখের তৈলাক্ত ভাব দূর করার জন্য অবশ্যই ফেস পাউডার ব্যবহার করতে হবে। ফেস পাউডার মুখে তেল জমতে দেয় না। কন্টুরিং করতে চাইলে থুতনির নিচে, নাকের দুই পাশে লাগিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন। যেহেতু রাতের মেকআপ করা হচ্ছে তাই মুখে গ্লোয়ি ভাব রাখার জন্য হাইলাইটার ব্যবহার করা যেতে পারে। নাকে, থুতনিতে, ঠোঁটের উপরের দিকে পাউডার হাইলাইটার লাগিয়ে নিতে পারেন।

পোশাকের রঙের সাথে মিলিয়ে আইশ্যাডো দেবার ট্রেন্ড অনেকটা কমে এসেছে। আইশ্যাডোর ক্ষেত্রে এখন ব্রাউন, পিচ ইত্যাদি হালকা রঙ বেছে নেওয়া হয়, যা যেকোনো রঙের পোশাকের সাথে মানিয়ে যাবে। তবে রাতের সাজের ক্ষেত্রে পোশাকের রঙের সাথে মিল রেখে চোখ সাজাতে চাইলে করা যেতে পারে। ন্যাচারাল মেকআপ লুক চাইলে ভ্রু মোটা না করে আইভ্রু জেল ব্যবহার করা যেতে পারে। লিপস্টিকের ক্ষেত্রে লাল কিংবা মেরুন রঙ দেওয়া যেতে পারে। তবে চোখের কাজ খুব ভারী করলে লিপস্টিক হালকা রাখাই শ্রেয়। সবশেষে মেকআপ সেটিং স্প্রে ব্যবহার করতে ভোলা যাবে না। এটি দীর্ঘ সময় মেকআপ সেট রাখতে রাখতে সাহায্য করবে।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: আরশী

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

nineteen − two =