প্রস্তাবিত বাজেট মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও জনদুর্ভোগ লাঘব করবে: আরাফাত

তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন, সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে জনদুর্ভোগ লাঘবের লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য একটি সংকোচনমূলক বাজেট প্রস্তাব করেছে। তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। জনদুর্ভোগ কমাতে আগামী অর্থবছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা এই বাজেটে প্রতিফলিত হয়েছে।’ প্রতিমন্ত্রী আজ জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন।

‘কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক মহামারীর পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে জ্বালানি ও অন্যান্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মুদ্রাস্ফীতি বিশ্বজুড়ে চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ সেই পরিস্থিতির বাইরে নয়,’ বলেন আরাফাত। সরকার মূল্যস্ফীতি রোধে আগামী অর্থবছরের জন্য সংকোচনমূলক বাজেট প্রস্তাব করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এর আগে দেখেছি যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার সাধারণত প্রতি বছর বাজেটের আকার ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি করে, কিন্তু এবার বাজেটের আকার বেড়েছে মাত্র ৬ শতাংশ।’

প্রস্তাবিত বাজেটকে জনবান্ধব উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এই সংকোচনমূলক বাজেটেও আমরা দেখলাম সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে এবং বাজেটে নিম্ন আয়ের মানুষের ভোগান্তি কমাতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। এই বাজেটে উচ্চ আয়ের মানুষের ওপর উচ্চ কর আরোপ এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য তাদের আয়ের অনুপাত অনুযায়ী কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।’ .

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা এবং এর প্রভাবের কথা উল্লেখ করে আরাফাত বলেন, বাংলাদেশ সরকারকে ২০২১, ২০২২ এবং ২০২৩ সালে শুধুমাত্র স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় জ্বালানি কিনতে অতিরিক্ত ১৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘তার মানে বিশ্ব যদি কোভিড-১৯ মহামারী এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মুখোমুখী না হতো এবং জ্বালানির দাম স্থিতিশীল থাকতো, তাহলে এই ১৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে থাকত, যা বিভিন্ন সংকট থেকে আমাদের রক্ষা করত’।

গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের অর্জিত অর্থনৈতিক অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকার কারণে সরকার এই অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে সক্ষম হয়েছে এবং বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও শক্ত অবস্থানে রয়েছে, কোভিড-১৯ এর আগে অর্জিত শক্তিশালী অর্থনৈতিক মেরুদন্ড। সরকারের ঋণ নিয়ে বিরোধী দলগুলোর সমালোচনার প্রেক্ষিতে সরকার ঋণ নিয়ে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে দাবি করে তিনি বলেন, এ বছর ঘাটতি বাজেট হিসেবে ২.৫৬ লাখ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বিদেশী ও দেশীয় উৎস থেকে ঋণ হিসেবে আসবে, যা জিডিপির ৪.৬ শতাংশ।

তিনি বলেন, ‘যদি ঘাটতি বাজেট ৫ শতাংশের নিচে থেকে যায়, এটি একটি বৈশ্বিক মানদন্ড। এমনকি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের জিডিপির ৬ শতাংশেরও বেশি ঋণ নিচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার যদি ঋণ নেওয়া থেকে বিরত থাকে, তবে দেশ ও দেশের জনগণ উন্নয়ন এবং এর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। ঋণ গ্রহণের প্রবণতা বিশ্বব্যাপী বিদ্যমান, তবে এটি একটি সহনীয় পর্যায়ে রাখা উচিত। তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) একটি থ্রেশহোল্ড নির্ধারণ করেছে, যদি কোনো দেশের জিডিপি অনুপাতের সাথে ঋণের পরিমাণ ৭৭ শতাংশে পৌঁছায়, তবে এটি ঝুঁকিতে পড়বে। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান ঋণের সঙ্গে জিডিপি অনুপাত ৩৬ শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে এবং অনেক উন্নত দেশের তুলনায় ভালো অবস্থানে রয়েছে।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

5 × 5 =