বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী অভিনেত্রী শাবানার জন্মদিন আজ। ১৯৫২ সালের এ দিনে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ডাবুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শাবানা।
মাত্র নয় বছর বয়সে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেছিলেন। তারপর হঠাৎ করেই চলচ্চিত্রকে শুধু বিদায় জানাননি, জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে দেশ থেকে বিদায় নিয়ে স্বামী সন্তানসহ প্রবাসী হয়েছেন।
তাঁর প্রকৃত নাম আফরোজা সুলতানা রত্না আর চলচ্চিত্রের নাম শাবানা, যা চিত্রপরিচালক এহতেশাম প্রদান করেন। তার বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ডাবুয়া গ্রামে।
তার বাবা ফয়েজ চৌধুরী একসময় চিত্র পরিচালক ছিলেন। মা ফজিলাতুন্নেসা ছিলেন গৃহিনী। পারিবারিক আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় মেয়েকে ফিল্মে দিয়ে এবং নিজে চলচ্চিত্রে ভাগ্য গড়ার চেষ্টা চালাতে থাকেন। একসময় বাবার আশা পূরণও হয়েছিল।
১৯৭৩ সালে যশোর কেশবপুরের ছেলে ওয়াহিদ সাদিককে বিয়ে করেন শাবানা। তিনি একজন সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মরহুম এ এস এইচ কে সাদেক ওয়াহিদের বড় ভাই। স্বামী ওয়াহিদ সাদিক, দুই মেয়ে সুমী ও উর্মি এবং একমাত্র পুত্র নাহিনকে নিয়ে তিনি এখন বসবাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে।
১৯৬২ সালে মাত্র ৯ বছর বয়সে ‘নতুন সুর’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন ছোট্ট মেয়ের চরিত্রে। ১৯৬৩ সালে তিনি উর্দু ‘তালাশ’ ছবিতে নাচের দৃশ্যে অংশ নেন। তারপর বেশ কিছু চলচ্চিত্রে তিনি কাজ করেন।
আবার বনবাসে রূপবান এবং ‘ডাক বাবু’ সিনেমাতে তিনি সহনায়িকার কাজ পান। এভাবে কয়েকবছর কাটানোর পর ১৯৬৭ সালে ‘চকোরী’ ছবিতে চিত্রনায়ক নাদিমের বিপরীতে তাঁর চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে আবির্ভাব ঘটে, যার পরিচালক ছিলেন এহতেশাম।
‘চকোরী’ ছিল একটি দারুণ ব্যবসা সফল ছবি। তখন উর্দু ছবির সাথে বাংলা ছবির প্রতিযোগিতা হত এবং শাবানা প্রথমদিকে উর্দু ছবিই বেশি করতেন। ‘অবুজ মন’ এবং ‘মধু মিলন’ এই ২টি সিনেমার মাধ্যমে তিনি রাজ্জাকের সাথে জুটি গড়ে তোলেন।
শাবানার বেশ কিছূ উল্লেখযোগ্য সিনেমা: বেগম রোকেয়া, ঝড় তুফান, বানজারান, রাজনন্দিনী, জননী (১৯৭৭), সখি তুমি কার (১৯৮০), দুই পয়সার আলতা (১৯৮২), নাজমা (১৯৮৩), ভাত দে (১৯৮৪), অপেক্ষা (১৯৮৭), মরণের পরে (১৯৯০), অচেনা (১৯৯১), রাঙাভাবী (১৯৯৩), গরীবের বউ (১৯৯৪), অবুজ মন, মধু মিলন, চকোরী, স্বামী কেন আসামী, মাটির ঘর, রাজলক্ষী-শ্রীকান্ত, লাল কাজল, দস্যু রাণী, নুপুর।
শাবানা মোট ১০ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৭ সালে তিনি প্রথম এই পুরস্কার পান ‘জননী’ সিনেমার জন্য। এরপর ১৯৮০, ১৯৮২, ১৯৮৩, ১৯৮৪, ১৯৮৭,১৯৯০, ১৯৯১, ১৯৯৩ এবং ১৯৯৪ সালেও তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
১৯৯৭ সালে শাবানা হঠাৎ চলচ্চিত্র থেকে বিদায় নেওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর আর নতুন কোনো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেননি। ২০০০ সালে শাবানা সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। শাবানা মস্কো ফ্লিম ফেস্টিভ্যাল, রুমানিয়া ফ্লিম ফেস্টিভ্যাল, কান ফ্লিম ফেস্টিভ্যালসহ আরো বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন।