অস্ট্রিয়াকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে তুরস্ক

মেরিহ ডেমিরালের দুই গোলে উজ্জীবিত অস্ট্রিয়াকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে  করে ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের শেষ আটের টিকেট নিশ্চিত করেছে তুরস্ক।

লিপজিগ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলর শেষ ম্যাচে আল-আহলি সেন্টার-ব্যাক ডেমিরাল মাত্র ৫৮ সেকেন্ডে দারুন এক হেডে তুরষ্ককে এগিয়ে দেন। এরপর ৫৯ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুন করলে তুরষ্কের জয় সময়ের ব্যপার হয়ে দাঁড়ায়। ৬৬ মিনিটে বদলী খেলোয়াড় মিখায়েল গ্রেগোরিশ দ্রুত এক গোল পরিশোধ করলেও অস্ট্রিয়ার শেষ রক্ষা হয়নি। স্টপেজ টাইমের একেবারে শেষ মুহূর্তে ইউরোর এবারের আসরে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন এক সেভে ক্রিস্টোফ বামগার্টনারকে রুখে দেন তুরষ্কের গোলরক্ষক মেরেত গুনোক। নাটকীয় এই সেভে তুরষ্কের শেষ আট নিশ্চিত হয়।

আগামী শনিবার বার্লিনে শেষ আটে তুরষ্কের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস।

তুরষ্কের বস ভিনসেনজো মনটেলা ম্যাচ শেষে গুনোকের দুর্দান্ত সেভ সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমি দলের জন্য, দেশের জন্য ও মেরেতের জন্য দারুন খুশী। আজ আমরা যেভাবে একটি দল হিসেবে খেলেছি তাতে আমি দারুন সন্তুষ্ট। মেরেতের জন্য শুভকামনা। তার কাজটাই সে করেছে। শেষ মিনিটে তার ঐ সেভটি ছিল আজকের ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। তার কারনেই আমরা ম্যাচ জিততে পেরেছি।’

ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসকে টপকে গ্রুপ-ডি’র শীর্ষ দল হিসেবে নক আউট পর্বে আসা অস্ট্রিয়ার সামনে সুযোগ ছিল  আরো সামনে এগিয়ে যাবার। কারন ড্রয়ের এই দিকটি কিছুটা হলেও আরেক দিকের থেকে দূর্বল। রাল্ফ রাংনিকের দল মার্চে প্রীতি ম্যাচে তুরষ্ককে ৬-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল। কিন্তু কাল আর তুরষ্কের সামনে পেরে উঠেনি।  ম্যাচ শেষে রাংনিক বলেন, ‘আজ আমরা বাড়ি ফিরে যাবো এটা কোনভাবেই কল্পনা করিনি। এখান থেকে নতুন যাত্রা শুরু করতে চেয়েছিলাম এবং পরবর্তী কয়েকটি ম্যাচের প্রস্তুতির পরিকল্পনা করেছিরাম। খেলোয়াড়রাও একই অনুভূতি নিয়ে মাঠে নেমেছিল। নক আউট পর্বে এভাবেই এগিয়ে যেতে হয়। এক দল এগিয়ে যাবে, আরেক দল বিদায় নিবে। এখানে একটি ম্যাচের ভাগ্য সবকিছু নির্ধারন করে দিবে। অবশ্যই এই পরাজয়ে আমি হতাশ।’

কাল প্রায় পুরো ম্যাচে অস্ট্রিয়ান রক্ষনভাগকে চাপে রেখেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের আরডা গুলার। প্রথম মিনিটে তার কর্ণার থেকেই গোলের সূত্রপাত। বমগার্টনার লাইনের উপর থেকে বল ক্লিয়ার করলে গোলরক্ষক প্যাট্রিক পেনটেজের হাত থেকে বল চলে যায় ডেমিরালের কাছে। ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপের ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম গোল করতে কোন ভুল করেননি ডেমিরাল। তুরষ্কের উচ্ছসিত সমর্থকরা যেন বাঁধভাঙ্গা আনন্দে ফেটে পড়ে। যদিও এই এক গোলের নিশ্চয়তা কখনই থাকেনা, এটাও তারা খুব ভালভাবেই বুঝতে পারছিলা। বমগার্টনার অল্পের জন্য পোস্টের কাছে থেকে বল জালে জড়াতে পারেনি। মনটেলা বলেছেন নিষেধাজ্ঞার কারনে খেলতে না পারা অধিনায়ক হাকান কালহানগ্লুর অনুপস্থিতি দারুনভাবে অনুভূত হয়েছে। যদিও তার স্থানে প্লেমেকারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন গুলার। প্রথমার্ধের মাঝামাঝিতে তিনি ব্যবধান প্রায় দ্বিগুন করে ফেলেছিলেন। কিন্তু তার শটটি অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়।

দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে ফিরে আসার তাগিদে রাংনিক  দলে দুটি পরিবর্তন করেন। তিন মাস আগে তুরষ্কের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করা গ্রেগোরিশকে তিনি মাঠে নামান। গ্রেগোরিশ মাঠে নামার পর কিছুটা আগ্রাসী হয়ে ওঠে অস্ট্রিয়া। এ সময় তারা বেশ কয়েকবার তুরষ্কের রক্ষনভাগকে পরীক্ষায় ফেলেছে। মার্কো অরনাটোভিচকে দারুন দক্ষতায় রুখে দেন গুনোক। দারুন এক থ্রু বল থেকে বায়ার্ন মিউনিখের কোনার্ড লেইমার অস্ট্রিয়াকে সমতায় ফেরাতে পারেননি। গুলারের কর্ণার থেকে শিক্ষা নিতে ব্যর্থ হওয়া অস্ট্রিয়া আরো একবার ডেমিরালের কাছে পরাস্ত হন। ২৬ বছর বয়সী ডেমিরাল ১৯৯৮ সালের বিশ^কাপে ফ্রান্সের লিলিয়ান থুরামের পর প্রথম কোন ইউরোপীয়ান ডিফেন্ডার হিসেবে বড় কোন আসরের নক আউট পর্বে জোড়া গোলের রেকর্ড গড়েছেন। সাত মিনিট পর সেট পিস থেকে এবার এক গোল পরিশোধ করে অস্ট্রিয়া। মার্সেল সাবিটাইজারের কর্ণার থেকে পোশ ফ্লিক করলে গ্রেগোরিশ বল জালে জড়ান।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

twelve + six =