ভারতের সঙ্গে পানি বণ্টন চুক্তিতে দেশের মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে উল্লেখ করেছেন বিশিষ্টজনরা। একই সঙ্গে চীন-ভারত স্বার্থের দ্বন্দ্বে বাংলাদেশকে না জড়াতে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
শনিবার সম্পাদকদের শীর্ষ সংগঠন এডিটরস গিল্ড আয়োজিত গোল টেবিল আলোচনায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি সব দেশের ক্ষেত্রে সমান্তরাল। তবে জলবায়ু পরিবর্তন, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে দেশ ভেদে আলোচনায় পরিবর্তন আনতে হবে।
তারা বলেন, বাংলাদেশ সব সময়ই সমান্তরাল পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে। যার ধারাবাহিকতায়, স্বাধীনতার সময় বিরোধী অবস্থানে থাকা দেশগুলোর সঙ্গেও সমান গুরুত্ব দিয়ে অংশীদারিত্ব করছে বাংলাদেশ।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক এ বিষয়ে বলেন, ভারত ও চীন দু’দেশকেই উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদের মতে, ভারত যেহেতু আমাদের চারপাশ দিয়ে ঘিরে আছে, আমাদের নিরাপত্তার জন্য তার সাথে সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ এটা আলাদা করে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন পড়ে না। পেটের ভেতরে অস্বস্তি হলে যেমন ভালো থাকা যায় না, তাই এটা রাখা উচিত না।
আইনজীবী ও গবেষক ড. ফারজানা মাহমুদ মনে করেন, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে ভারতের যে প্রভাব তা কখনোই আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না। এজন্য ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ।
টিবিএন টুয়েন্টিফোরের প্রধান সম্পাদক নাজমুল আশরাফ বলেন, সবার সাথে বন্ধুত্ব, ভারতের সাথে মিত্রতা এ থেকেই তো সামগ্রিক অবস্থা বোঝা যায়।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে গঙ্গা এবং তিস্তার বিষয়ে যে কারিগরি কমিটির কথা বলা হয়েছে তার মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়াটি আরও দীর্ঘমেয়াদী হয়ে যাবার আশঙ্কা করছেন তারা।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং নদী ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত এ বিষয়ে বলেন, ভারত এটাকে আরও দীর্ঘ করতে চাইতে পারে। তাই আমাদের দিককার সমন্বয়কারীরা যাতে এটা খেয়াল করেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। গঙ্গা নিয়ে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে প্রচুর টেকনিক্যাল কাজ হয়েছে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের মতে, যতদিন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গকে তার মধ্যে নিতে না পারছেন, তিনি ততদিন তিস্তা নিয়ে আলোচনা করবেন না।
বাংলাদেশের উন্নয়নে চীনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে ভারসাম্যের অর্থনীতির সাক্ষর রাখবে বাংলাদেশ, মত বিশেষজ্ঞদের।
অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর এ বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, আমাদের জন্য কী গুরুত্বপূর্ণ তা খেয়াল করতে হবে। আমরা কী করতে চাচ্ছি, তা আগে জানতে হবে।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, পানির যে সমস্যা এর একটা সমাধান হওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা সেরা সমাধানটাই খুঁজে বের করবো।
সবশেষ এডিটরস গিল্ডের সভাপতি ও একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক এবং গোলটেবিল আলোচনার সঞ্চালক মোজাম্মেল বাবু বলেন, বরাবরের মতোই সকলের সাথে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে বাংলাদেশকে।