ফ্রান্সের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত নির্বাচনে ভোট দিচ্ছে দেশটির জনগণ। ভোটে ঐতিহাসিক জয়ের অপেক্ষায় আছে কট্টর ডানপন্থীরা। তবে, এবারের নির্বাচনে কোনো দলেরই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সরকার গঠনের সম্ভাবনা নেই। ফলে ফ্রান্সে রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে।
ফ্রান্সের পার্লামেন্টে নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ রোববার শুরু হয়েছে। স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ভোট শুরু হয়ে চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। পার্লামেন্টে বৃহত্তম শক্তি হিসেবে কট্টর-ডানপন্থিদের আবির্ভাবের আশঙ্কায় দেশজুড়ে উত্তেজনার মধ্যে এই ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এএফপি ও রয়টার্স জানিয়েছে, ভোট শেষে বুথ ফেরত জরিপের ফল চূড়ান্ত ফলাফলের কাছাকাছিই থাকে। বুথ ফেরত জরিপ প্রকাশের পর রাজনৈতিক নেতারা এরপর দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাবেন। ভোটে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৩০ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
নির্বাচনের মাধ্যমে ফ্রান্সের রাজনীতিতে নতুন এক সমীকরণ যুক্ত হতে পারে। কারণ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভোটে ডানপন্থী দলের উত্থানে কিছুট হলেও শঙ্কিত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো। সেই শঙ্কা থেকেই হয়তো তিনি তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন।
তবে তার সিদ্ধান্ত যে তার জন্য মঙ্গল বয়ে আনেনি সেটা নির্বাচনের প্রথম ধাপেই বিশ্ব জেনে গিয়েছে। প্রথম দফার ভোটে ৩৩ শতাংশ ভোট নিয়ে এগিয়ে আছে ডানপন্থী দল ন্যাশনাল র্যালি (এনআর)। বুথ ফেরতসহ বিভিন্ন জরিপেও এবার ফ্রান্সে ডানপন্থী দল এনআর-এর বিজয়ের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে।
পক্ষান্তরে ম্যাঁক্রোর দল ২১ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। তবে এবারের নির্বাচনে কোনো দলেরই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে দল গঠনের সম্ভাবনা নেই। জরিপের পূর্বাভাসে দেশটিতে এবার ঝুলন্ত পার্লামেন্ট গঠনের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, সহসাই কাছে না রাজনৈতিক অচলাবস্থা।
যদি ফ্রান্সে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হয় তাহলে দেশটিতে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। এছাড়া প্রেসিডেন্ট ম্যাঁক্রোও সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে যাতে তার কর্তৃত্বে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সমানভাবে যদি জাতীয়তাবাদী, ইউরোসেপটিক আরএন সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে সক্ষম হয় তাহলে ম্যাক্রনের ভরাডুবি হতে পারে।
মেরি লা পেনের দল নির্বাচনের প্রথম ধাপে দারুণ ফল করেছে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্সে প্রথম কোন ডানপন্থী দলের উত্থানের পথ খুলে দিয়েছে। কিন্তু এই উত্থান ঠেকাতে একাট্টা দেশটির মধ্য ও বামপন্থীর। এর ফলে দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলে লা পেনের দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের সম্ভাবনা খুবই কম।
আরএন সবচেয়ে বেশি আসনে জয় পেলেও, তারা সংসদে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হতে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। ৫৭৭ আসনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে এককভাবে ২৮৯ আসন প্রয়োজন। মেরি লা পেন এবং তার দলের ২৮ বছর বয়সী রাজনীতিক জর্ডান বারডেলা সেটা অর্জনে ব্যর্থ হবেন।