কোপা আমেরিকার ফাইনালে আর্জেন্টিনা

লিওনেল মেসি ও জুলিয়ান আলভারেজের গোলে সেমিফাইনালে কানাডাকে ২-১ ব্যবধানে পরাজিত করে কোপা আমেরিকার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। টানা তৃতীয় বড় আসরের শিরোপা জয়ে আগামী রোববার মিয়ামিতে ফাইনালে মাঠে নামবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

১৫-বারের কোপা চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা আজ মেটলাইফ স্টেডিয়ামে সাড়ে ৮২ হাজার সমর্থকের সামনে টুর্ণামেন্টের সেরা পারফরমেন্স দেখিয়েছে। ২০২২ বিশ্ব কাপ জয়ীরা এর মাধ্যমে আরো একবার নিজেদের যোগ্যতার জানান দিল।

ম্যাচ শেষে ৩৭ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন অধিনায়ক মেসি বলেছেন, ‘সত্যি বলতে কি এই দলটি যা করে দেখাচ্ছে তা অবিশ্বাস্য। পুরো দলই এই জয়ের কৃতিত্বে দাবীদার। আরো একবার ফাইনালে খেলা মোটেই সহজ কাজ নয়। আরো একবার আমরা চ্যাম্পিয়ন হবার জন্য লড়াইয়ে নামবো। শেষ কোপা আমেরিকা, শেষ বিশ্ব কাপের মতই আরো একবার সেই একই অনুভূতি উপস্থিত হয়েছে। এটাই আমার ওদের সাথে শেষ লড়াই এবং আমি পরিপূর্ণ ভাবে প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করতে চাই।’

কোপা আমেরিকায় প্রথমবার খেলতে এসেই শেষ চারে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে কানাডা সবাইকে হতবাক করে দিয়েছে। পুরো টুর্নামেন্টে তারা যেভাবে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে গেছে তাতে অবশ্যই কানাডা প্রশংসার দাবীদার। কিন্তু মেসি ও তার দল তাদের থেকে বেশ খানিকটা এগিয়ে থেকেই কাল মাঠে নেমেছিল।

কানাডার মার্কিন কোচ মার্শ বলেছেন, ‘আমি মনে করি এই টুর্ণামেন্ট আমাদের একধাপ সামনে এগিয়ে নিয়ে গেছে। আজ আমরা যেভাবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে লড়াই করেছি তা সত্যিই প্রশংসনীয়। ফিটনেসের দিক থেকেও আমরা মাঝে মাঝে তাদেরকে ছাড়িয়ে গেছি।’

ম্যাচের শুরুতে প্রথম সুযোগ পেয়েছিল কানাডা। লেফট-উইঙ্গার জ্যাকব শাফেলবার্গের শট পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। এরপর দক্ষিণ আমেরিকান জায়ান্টরা ম্যাচের নিয়ন্ত্রন নিজেদের করে নেয় এবং এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অভিজ্ঞ এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার এটাই দেশের হয়ে শেষ টুর্ণামেন্ট। ডানদিকে তিনি বেশ কিছু সুযোগ তৈরী করেছেন। ডি মারিয়ার বিপদজনক একটি এ্যাসিস্ট থেকে মেসি অল্পের জন্য গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। কিন্তু ২২ মিনিটে রডরিগো ডি পল যে সুযোগ তৈরী করেছিলেন তা বৃথা যায়নি। প্রায় মধ্যমাঠ থেকে বল নিয়ে দ্রুত তা বাড়িয়ে দেন জুলিয়ান আলভারেজের দিকে। ম্যানচেস্টার সিটির এই ফরোয়ার্ড লটারো মার্টিনেজের জায়গায় আবারো মূল দলে সুযোগ পেয়েই কোচ লিওনেল স্কালোনির আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। প্রথম সুযোগেই আলভারেজ বল জালে জড়ালে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা।

ডি মারিয়া, মেসি ও ডি পলকে নিয়ে সাজানো দুর্দান্ত ত্রিভুজ বারবার কানাডার ব্যাকলাইনে বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে। বিরতির দুই মিনিট আগে রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক উইঙ্গার ডি মারিয়া অসাধারন একটি বল যোগান দিয়েছিলেন মেসিকে। আর্জেন্টাইন অধিনায়কও নিজের জন্য জায়গা তৈরী করে শটও নিয়েছিলেন। কিন্তু অল্পের জন্য তার শটটি কানাডিয়ান গোলরক্ষক ম্যাক ক্রিপাউয়ের ডান দিক দিয়ে বাইরে চলে যায়।

বিরতির পরে মার্শের দল নিয়ে অনেক কাজ করার বাকি ছিল। ম্যাচে ফিরে আসার তাগিদে তিনি পরিকল্পনাও সাজিয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর ছয় মিনিটের মধ্যে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা ব্যবধার দ্বিগুন করলে মার্শের সব আশা শেষ হয়ে যায়। ডি পল কিছুটা পিছন দিকে এনজো ফার্নান্দেজের কাছে বল বাড়িয়ে দেন। তার সাইড ফুট শটে পোস্টের সামনে থেকে মেসি বল জালে জড়ান। কানাডা ভেবেছিল মেসি হয়তোবা অফসাইড পজিশনে ছিলেন। কিন্তু ভিএআর রিভিউ গোলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে।

দুই গোলে এগিয়ে থেকে ফাইনালের জন্য আর্জেন্টিনা তাদের শক্তি সঞ্চয় করে খেলতে থাকে। শেষ মিনিটে টানি ওলুওয়াসি আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজকে কিছুটা পরীক্ষা নেবার চেষ্টা করেন। কিন্তু স্কালোনির দল সহজ জয়ে ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করে। রেকর্ড ১৬তম কোপা আমেরিকা শিরোপা জয়ে আর মাত্র এক ম্যাচ দুরে রয়েছে আর্জেন্টিনা।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

seventeen − four =