কোটা-বিরোধী আন্দোলন: ঢাকা, রংপুর ও চট্টগ্রামে নিহত পাঁচ

কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারদলীয় সংগঠনের কর্মী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ঢাকা, রংপুর ও চট্টগ্রামে অন্তত পাঁচ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রামে তিনজন, ঢাকা ও রংপুরে একজন করে নিহত হয়েছেন। খবর একাত্তর টিভি অনলাইন

চলমান কোটা-বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং মহাসড়কে বিক্ষোভ চলছে। বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে।

চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আহত কয়েকজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে তাদের মৃত ঘোষণা করা হয়। এর আগে বেলা তিনটার দিকে নগরের মুরাদপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর অস্ত্রধারীরা গুলি ছুড়লে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে যায়।

নিহত মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন মো. ফারুক (৩২) ও মো. ওয়াসিম (২২) । ফারুক ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী এবং ওয়াসিম চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ও কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বলে একটি গণমাধ্যম জানিয়েছে। এ ছাড়া অপরজনের পরিচয় জানা যায়নি।

ঢাকা

কোটা আন্দোলন নিয়ে সংঘর্ষের মধ্যে ঢাকা কলেজের সামনে এক যুবক নিহত হয়েছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তার পরিচয় পাওয়া যায়নি। বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় ওই যুবককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে নিশ্চিত করেছেন ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া।

রংপুর

দুপুর আড়াইটার দিকে রংপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাইদ নিহত হন। আবু সাইদ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুরের বাসিন্দা মকবুল হোসেনের ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ২টায় রংপুর খামার মোড় থেকে শিক্ষার্থীরা বিশাল মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং ফটকের সামনে আসেন। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় পুলিশ গুলি ও রাবার বুলেট ছোড়ে।

২০১৮ সালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা দুই সপ্তাহ ধরে টানা আন্দোলন চালিয়ে আসছে।

এর মধ্যে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দেন, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি আদালতেই ফয়সালা করতে হবে। বক্তব্যের এক পর্যায়ে সরকারপ্রধান বলেন, কোটা আন্দোলন করার আগে তো তাদের রেজাল্টগুলো দেখা উচিত ছিলো যে- কোথায় তারা দাঁড়িয়েছে! দ্বিতীয়টি হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি পুতিরা (চাকরি) পাবে?

ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্যে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওই বক্তব্য নিয়ে রোববার রাতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখান, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গভীর রাতে বিক্ষোভে নামেন। তারই জের ধরে সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় কোটা আন্দোলনকারীদের।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

14 − 14 =