অতুলনীয় রুনা লায়লা

মৌ সন্ধ্যা

টানা ছয় দশক। জীবনের দীর্ঘ এক জার্নি, যার পুরোটাই সুরের মাধুরী মেশানো। বর্ণিল গল্পে বোনা। কণ্ঠ যেন এক জাদুর বাঁশি। যার গায়কিতে বাতাসে ছড়ায় মুগ্ধতা। মঞ্চে দাঁড়ালেই ঝড় ওঠে দর্শকসারিতে। কী গ্রাম, কী শহর, দেশ কিংবা বিদেশের মাটিতে একজীবন শুধুই সুরের মাধুরী ছড়িয়ে গেছেন তিনি। প্রাচুর্য্যময় সংগীত জীবন কাটানো এই মানুষটিই হলেন আমাদের জীবন্ত কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা। সারা বিশ্বের কোটি কোটি সংগীতপ্রেমী মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে টানা ষাট বছর কাটিয়ে দিলেন তিনি। সম্প্রতি সংগীত জীবনের ষাট বছর পূর্ণ হয়েছে রুনা লায়লার। সুরেলা কণ্ঠের এই মানুষটিকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন দেশ ও বিদেশের গুণীজনরা। রুনার জীবনের সংগীতে ষাট উপলক্ষ্যে তুলে ধরা হলো তার জীবনের এক চিলতে।

ছোট্ট নাচের মেয়েটি

রুনা লায়লার জন্ম ১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) সিলেটে। তার বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ এমদাদ আলী ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা এবং মা আনিতা সেন ওরফে আমেনা লায়লা ছিলেন সংগীতশিল্পী। তার মামা সুবীর সেন ভারতের বিখ্যাত সংগীতশিল্পী। রুনার যখন আড়াই বছর বয়স তার বাবা রাজশাহী থেকে বদলি হয়ে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের মুলতানে যান। সে সূত্রে তার শৈশব কাটে পাকিস্তানের লাহোরে। তার বাবার বাড়ি রাজশাহীতে। চার বছর বয়সে নাচ শিখতেন রুনা লায়লা। নাচের প্রতি ভীষণ ভালোলাগা ছিল তার। সেই সময় রুনা লায়লার বড় বোন দীনা লায়লাকে গান শেখাতেন যে ওস্তাদ, খেলার ফাঁকে তার কাছেই একটু একটু গানের তালিম নেওয়া শুরু। সেই শিক্ষকই রুনাকে গান শেখানোর পরামর্শ দেন। এরপর শুরু হয় রুনা লায়লার জীবনের নতুন অধ্যায়। শুরুতে তিনি উচ্চাঙ্গ সংগীতে দীক্ষা নেন ওস্তাদ হাবিব উদ্দিন খান ও আবদুল কাদের পিয়ারাংয়ের কাছে। গজলে দীক্ষা পান পণ্ডিত গোলাম কাদিরের (মেহেদি হাসানের ভাই) কাছে।

তখন বয়স মাত্র ১২

রুনা লায়লার প্রথম গান রেকর্ড করা হয় করাচির ইস্টার্ন স্টুডিওতে ১৯৬৪ সালে। পরের বছর ‘জুগনু’ সিনেমায় সেই গান মুক্তি পায়। তখন রুনার বয়স ১২। বাবার আপত্তিতে প্রায় ভেস্তে যেতে বসেছিল প্রথম প্লেব্যাক। পরে অনেক কষ্টে বাবাকে রাজি করিয়ে সিনেমার গান গাওয়া শুরু করেন রুনা।

গিনেস বুকে নাম

পাকিস্তানের সুরকার নিসার বাজমির সুর করা বহু গানে কণ্ঠ দিয়েছেন রুনা লায়লা। একবার এক প্রতিষ্ঠান রুনাকে দিয়ে নিসার বাজমির সুরে গান গাওয়ানোর পরিকল্পনা করে। প্রতিদিন এই সুরকারের ১০টি করে তিন দিনে মোট ৩০টি গান রেকর্ড করে গিনেস বুকে জায়গা করে নেন রুনা। ১৯৮২ সালের ১ ডিসেম্বর ভারতীয় শিল্পী ও সুরকার প্রয়াত বাপ্পি লাহিড়ীর সুরে, রুনা লায়লার গান নিয়ে ইএমআই মিউজিক কোম্পানি প্রকাশ করে ‘সুপার রুনা’ অ্যালবাম। প্রকাশের পরপরই অ্যালবামটির লাখ কপি বিক্রি হয়।

এপারে রুনা ওপারে লতা

১৯৭৪ সালে মুম্বাইয়ে রুনা লায়লার একক কনসার্টের আগের দিন মহড়ার সময় ভারতীয় কিংবদন্তি শিল্পী লতা মঙ্গেশকর নিজে থেকে এসেছিলেন বাংলাদেশের এই শিল্পীর সঙ্গে দেখা করতে। এরপর থেকে তাদের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে। যা টিকে ছিল লতার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। রুনা লায়লার দারুণ সম্পর্ক লতা মঙ্গেশকরের ছোট বোন শিল্পী আশা ভোঁশলের সঙ্গেও। দেশের বাইরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দুজনের দেখা হতো প্রায়ই। এছাড়া মুম্বাইয়ের গানের রিয়েলিটি শো’তে এ দুই শিল্পী বিচারকের দায়িত্বও পালন করেছেন একসাথে।

১৮ ভাষায় ১০ হাজার গান

বাংলাদেশে চলচ্চিত্র, পপ ও আধুনিক সংগীতের জন্য বিখ্যাত রুনা লায়লা। তবে গজল শিল্পী হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে তার সুনাম আকাশ ছোঁয়া। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই তিনি চলচ্চিত্রের গায়িকা।  রুনা লায়লা বাংলা, উর্দু, পাঞ্জাবি, হিন্দি, সিন্ধি, গুজরাটি, বেলুচি, পশতু, ফার্সি, আরবি, মালয়, নেপালি, জাপানি, স্পেনীয়, ফরাসি, লাতিন ও ইংরেজি ভাষাসহ মোট ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারেরও বেশি গান করেছেন। পাকিস্তানে তার গান ‘দমাদম মাস্ত কালান্দার’ অত্যন্ত জনপ্রিয়। পুরো সংগীতজীবন ভীষণ কর্মমুখর রুনা লায়লার। ১৯৬৬ সালে  উর্দু ভাষার হাম দোনো চলচ্চিত্রে ‘উনকি নাজরোঁ সে মোহাব্বত কা জো পয়গম মিলা’ গান দিয়ে সংগীতাঙ্গনে আলোচনায় আসেন তিনি। ষাটের দশকে তিনি পাকিস্তান টেলিভিশনে নিয়মিত গান পরিবেশনা করতে থাকেন। ১৯৭২ সাল থেকে তিনি জিয়া মহিউদ্দিন শো-তে গান পরিবেশন করতেন এবং ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দেওয়া শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি কলকাতায় ‘সাধের লাউ’ রেকর্ড করেন। একই বছর মুম্বাইয়ে তিনি প্রথমবারের মতো কনসার্টে সংগীত পরিবেশন করেন। এ সময়ে দিল্লিতে পরিচালক জয়দেবের সাথে রুনার পরিচয় হয়, যিনি তাকে বলিউড চলচ্চিত্রে এবং দূরদর্শনের উদ্বোধনী আয়োজনে গান পরিবেশনের সুযোগ করে দেন। ‘এক সে বাড়কার এক’ চলচ্চিত্রের শীর্ষ গানের মাধ্যমে তিনি সংগীত পরিচালক কল্যানজি-আনন্দজির সাথে প্রথম কাজ করেন। এই গান রেকর্ডিংয়ের সময় প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী লতা মুঙ্গেশকর তাকে আশীর্বাদ করেছিলেন। ‘ও মেরা বাবু চেল চাবিলা’ ও ‘দমাদম মাস্ত কালান্দার’ ভারতজুড়ে দারুণ সুপারহিট গান।

যতো জনপ্রিয় গান

পাকিস্তানের আরও বহু সিনেমায় রুনা লায়লা প্লে-ব্যাক করেছেন। যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘হাম দোনো’, ‘রিশতা হ্যায় পেয়ার কা’, ‘কমান্ডার’, ‘আন্দালিব’, ‘নসীব আপনা আপনা’, ‘দিল অউর দুনিয়া’, ‘উমরাও জান আদা’, ‘আনমোল’, ‘নাদান’, ‘দিলরুবা’।  প্রথম প্লে-ব্যাকেই ব্যাপক সাড়া ফেলেন রুনা লায়লা। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে এসে তিনি একে একে আরও বহু সিনেমায় তিনি প্লে-ব্যাক করে শ্রোতা দর্শককে মুগ্ধ করেছেন। বাংলা ভাষায় তার বহু আধুনিক জনপ্রিয় গানও রয়েছে। যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ্য হচ্ছে ‘যখন থামবে কোলাহল’, ‘পাখি খাঁচা ভেঙে উড়ে গেলে’, ‘বন্ধু তিনদিন তোর’, ‘পান খাইয়া ঠোঁট লাল করিলাম’, ‘প্রতিদিন তোমায় দেখি সূর্য রাগে’, ‘ভাষার জন্য যারা দিয়ে গেছো প্রাণ’, ‘শেষ করো না শুরুতে খেলা’ ইত্যাদি।

অভিনেত্রী

রুনা লায়লা চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘শিল্পী’ চলচ্চিত্রে চিত্রনায়ক আলমগীরের বিপরীতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শিল্পী চলচ্চিত্রটি ইংরেজি চলচ্চিত্র দ্য বডিগার্ড-এর ছায়া অবলম্বনে চিত্রিত হয়েছে।

পরিবার

রুনা লায়লা প্রথমবার খাজা জাভেদ কায়সারের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। দ্বিতীয়বার তিনি সুইস নাগরিক রন ড্যানিয়েলকে বিয়ে করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি বাংলাদেশি অভিনেতা আলমগীরের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তার এক কন্যা তানি লায়লা। তার তিন নাতি জাইন, অ্যারন এবং আইজ্যাক। রুনা লায়লার একমাত্র মেয়ে তানি লায়লা যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। এক গণমাধ্যমকে রুনা লায়লা বলেন, ‘আমার বড় নাতি জাইন ব্যান্ড তৈরি করেছে, যেখানে সে ভোকাল আর তার তিন বন্ধু খুব ভালো বাজায়। সপ্তাহের ছুটির দিনে ওরা শো করে। ছোট নাতি অ্যারনও ভাবছে মিউজিক নিয়ে কিছু করবে। একদম ছোটজন আইজ্যাক, বয়স আড়াই বছর। ভালো গান গায়। একদিন আমি হামিং করছি, আমার দেখাদেখি দেখি সে-ও করছে। সুরও ঠিকঠাক। আমার তো মনে হয়, গান ওর শরীরজুড়ে। আমার বড় দুই নাতি সব ধরনের গান শোনে। ইংরেজি, হিন্দি, বাংলাসহ সব ওর মা শোনায়।’

প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি

আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা নারী কণ্ঠশিল্পীর পুরস্কার পেয়েছেন রুনা। ‘দি রেইন’, ‘জাদুর বাঁশি’, ‘অ্যাক্সিডেন্ট’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘দেবদাস’, ‘প্রিয়া তুমি সুখী হও’, ‘তুমি আসবে বলে’ সিনেমাতে প্লে-ব্যাকের জন্য সেরা গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন। ভারতে পেয়েছেন সায়গল পুরস্কার ও দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার। পাকিস্তান থেকে পেয়েছেন নিগার, ক্রিটিক্স, গ্র্যাজুয়েটস পুরস্কার।

৬০ বছর উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠান

রেকর্ডিংয়ের হিসেবে ২৪ জুন ২০২৪ রুনা লায়লার সংগীতজীবনের ৬০ বছর পূর্ণ হয়েছে। চ্যানেল আই তাকে সম্মান জানিয়ে এ দিনটি উদ্্যাপন করেছে। প্রচার করেছে সরাসরি অনুষ্ঠান ‘রুনা লায়লা সংগীত জীবনের ৬০ বছর।’ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে আনন্দ আলো। এদিন চ্যানেল আইয়ের আমন্ত্রণে রুনা লায়লা এসেছিলেন অনুষ্ঠানে। লাল গালিচা সংবর্ধনার মাধ্যমে তাকে চ্যানেল আইয়ের ছাদ বারান্দায় নিয়ে যাওয়া হয়। রুনা লায়লা বলেন, ‘আপনাদের দোয়া, আশীর্বাদ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা আজ আমাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। এই ভালোবাসা, আশীর্বাদ ও শ্রদ্ধা যেন চিরকাল থাকে আমার সাথে।’

দেশ-বিদেশের শুভেচ্ছা

ক্যারিয়ারের ৬০ বছর পূর্তিকে ঘিরে দেশ ও বিদেশ থেকে অনেক শুভেচ্ছা বার্তা ও দোয়া পেয়েছেন তিনি। চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ বলেন, ‘নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য তো বটেই, গোটা উপমহাদেশের সংগীত পিপাসু সকলের জন্যই আনন্দের একটি দিন। রুনা লায়লা উপমহাদেশের সংগীতকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন, বাঙালি হিসেবে আমরা গর্ব বোধ করি। বাংলা চলচ্চিত্রের খ্যাতিমান অভিনেতা আলমগীর বলেন, ‘রুনা কাজের ব্যাপারে ভীষণ সিরিয়াস। ৬০ বছর টিকে থাকা এরকম সিরিয়াস না হলে, এরকম প্র্যাকটিস না করলে কোনো দিন সম্ভব নয়।’ আঁখি আলমগীর বলেন, ‘আমরা অনেক গর্বিত যে আমাদের একজন রুনা লায়লা আছেন।’ তার প্রতি আরও ভালোবাসা জানিয়েছেন খুরশিদ আলম, কাজী হায়াৎ, অঞ্জনা, অরুণা বিশ্বাস, ওমর সানি, লীনু বিল্লাহ, মানাম আহমেদ, ফুয়াদ নাসের বাবু, শওকত আলী ইমন, মুশফিকুর রহমান গুলজারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। ভিডিও বার্তায় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রুনা লায়লার ভাই, মেয়ে ও স্বজনরা। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেশ বিদেশের তারকারাও। ভিডিও বার্তায় সনু নিগাম বলেন, ‘আপনি এতো ভালো কলাকার, আপনি এতো সুন্দর, আপনার ব্যবহার এতো ভালো। আপনার সাথে দেখা করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। যখন থেকে আমার চোখ খুলেছে, তখন থেকে আপনাকে শুনছি। আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা। পৃথিবী আপনাকে ভালোবাসে, আমি আপনাকে ভালোবাসি।’ পাকিস্তানের অভিনেতা ইমরান আব্বাস বলেছেন, ‘আপনি বাকি জীবন গাইতে থাকুন, পৃথিবীকে সমৃদ্ধ করুন। পাকিস্তান থেকে ভালোবাসা জানাই।’ ভারতের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী হরিহরণ বলেন, ‘যখন থেকে আপনার সঙ্গে আমার পরিচয়, তখন থেকেই আপনার ভক্ত। আপনার একজন বন্ধুও। আমাদের এই বন্ধুত্বও চমৎকার। অনেক অনেক শুভকামনা রুনাজি।’

শেষ কথা

গুণী এই মানুষটি বরাবরই তার পরের প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার। তিনি নিজেও স্বপ্ন দেখেন এখনকার প্রজন্মকে নিয়ে। তিনি বলেন, ‘আমার পরের প্রজন্মের শিল্পীরা যেন আরও অনেক ওপরে ওঠে। অনেক নাম করে। ওরা ভালো করুক। আরও বড় প্ল্যাটফর্ম পাক। বিশ্বসংগীতাঙ্গনে নাম করুক।’ ভালো থাকুক সুরের দেশের মানুষটি। জয় হোক শিল্পের।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ব্যক্তিত্ব

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

20 − 6 =