ঝলমলে থাকুক শখের বারান্দা

ময়ূরাক্ষী সেন

ঘর সবাই সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে চান। বেডরুম থেকে বসার ঘর, বসার ঘর থেকে কিচেন সবকিছুই হওয়া চাই একদম গোছালো। কিন্তু ঘরের সবচেয়ে অবহেলিত স্থান যেন বারান্দা। ঘরের এই স্থানটি সাজিয়ে রাখতে অনেকেই ভুলে যান। আবার অনেকে মনে করেন, বারান্দায় কম জায়গা তাই সাজানো যাবে না। কিন্তু কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনার ছোট্ট বারান্দাটিও সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে পারেন। ঝলমলে সকালে কিংবা বিষণ্ন বিকালে সাজানো বারান্দায় গিয়ে যদি এক কাপ চায়ে চুমুক দেন তাহলে আপনার মন ভালো হয়ে যেতে বাধ্য। জেনে নেওয়া যাক কেমন করে সাজিয়ে তুলতে পারেন আপনার শখের বারান্দা।

বারান্দা সাজানোর ক্ষেত্রে প্রথমে আসবে গাছের কথা। বারান্দায় বাহারি গাছ লাগালে আপনি ঘরে বসে প্রকৃতি উপভোগ করতে পারবেন। তবে কি ধরনের গাছ দিয়ে বারান্দা সাজাবেন তা নির্ভর করছে বারান্দায় কেমন আলো বাতাস থাকে। যদি বারান্দায় পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশের সুযোগ থাকে তাহলে বিভিন্ন ফুল গাছ দিয়ে বারান্দা রঙিন করে সাজিয়ে তুলতে পারেন। নার্সারিতে গেলেই এখন মিলবে বিভিন্ন ধরনের ফুলের চারা, পাশাপাশি ছোট বড় সাইজের টব। জবা, বেলি, গোলাপ, হাসনাহেনা, অপরাজিতা ইত্যাদি ফুল দিয়ে বারান্দা রঙিন করে তুলতে পারেন।

ফুল থাকলে বারান্দায় প্রবেশ করার সাথে সাথে মিষ্টি গন্ধ যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। তবে বারান্দায় ফুল বাগান করতে চাইলে একটু বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হবে। কারণ ফুল গাছ চায় বাড়তি যত্ন। সঠিক সময়ে পানি সার দিয়ে ফুল গাছের যত্ন না নিলে কষ্ট করে সাজানো বাগান কিন্তু নষ্ট হয়ে যাবে। কোন ফুল গাছের কি ধরনের যত্ন প্রয়োজন সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিতে হবে। ফুলের জাতের উপর নির্ভর করছে গাছে কোন সার কিংবা কতটুকু পরিমাণ পানির প্রয়োজন। বারান্দা বড় হলে এক কোণায় করতে পারেন সবজি বাগান। বারান্দার গ্রিলে বিভিন্ন ধরনের শাক চাষ করতে পারেন। লাউ শাক, লাল শাক, মিষ্টি কুমড়া শাক ইত্যাদি যেকোনো ধরনের শাক সহজেই বারান্দায় চাষ করা সম্ভব। বড় আকারের টবে বারান্দার একপাশে রেখে দিতে পারেন মরিচ গাছ। মেহেদি, লেবু, পুদিনা, তুলসি ইত্যাদি দরকারি গাছও বারান্দায় রাখতে পারেন। এ ধরনের গাছ বারান্দায় থাকলে প্রয়োজনের সময় বাজারে না গেলেও চলবে।

আপনার ঘরের বারান্দা যদি এমন স্থানে হয় যেখানে পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশের সুযোগ নেই তাহলে সাজিয়ে তুলতে পারেন পাতাবাহার গাছ দিয়ে। কর্মব্যস্ত জীবনে অনেক সময় ফুল কিংবা অন্য ধরনের গাছের যত্ন নেওয়ার সময় পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে মানিপ্লান্ট, ক্যাকটাস, অ্যালোভেরা, পাম গাছ ইত্যাদি দিয়ে বারান্দা সবুজ করে তুলতে পারেন। পাতা জাতীয় গাছের খুব বেশি যত্নের প্রয়োজন হয় না। সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন পানি দিলেই যথেষ্ট। পাতাবাহার জাতীয় গাছের জন্য বিভিন্ন ধরনের রঙিন টব ব্যবহার করতে পারেন। আবার পাট কিংবা বাঁশের টবে গাছ সাজিয়ে রাখতে পারেন। ছবি আঁকার অভ্যাস থাকলে টবে নিজেই করে নিতে পারেন হ্যান্ড পেইন্ট। এতে গাছের টবে ফুটে উঠবে সৃজনশীলতা।

বারান্দায় করে নিতে পারেন জলজ বাগান। বিশাল গামলায় বা বালতিতে শাপলা, পদ্ম বা কচুরিপানা জাতীয় ফুল গাছ লাগাতে পারেন। এতে মনে হবে বারান্দায় এক টুকরা দিঘি যেন উঠে এসেছে। নয়নতারা কিংবা গোলাপের পাপড়ি বড় কাঁসার পাত্রে পানি দিয়ে বারান্দার এক পাশে রেখে দিতে পারেন। এতে বারান্দার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। তবে ফুলের পাপড়ি কিছুদিন পর পচে গেলে তা পরিবর্তন করে ফেলতে হবে। গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে রাখার ফলে বারান্দায় সুন্দর একাটা সৌরভ থাকবে। বারান্দা বড় হলে রাখতে পারেন অ্যাকুরিয়াম। জীবন্ত বাহারি রঙের মাছ সাঁতার কেটে বেড়াবে বারান্দায়। রাখতে পারেন গোল্ডফিশ, অ্যাঞ্জেল, শার্ক, টাইগার বার্ব, ক্যাট ফিশ, ঘোস্ট ফিশ, মলি, গাপ্পি, ফাইটার সাকার; আরো অনেক রকম মাছ। কিন্তু অ্যাকুরিয়ামে মাছ রাখতে চাইলে আপনাকে মাছ পালনের সঠিক নিয়ম জেনে নিতে হবে। অ্যাকুরিয়ামে আলোর ব্যবস্থা রাখতে চাইলে এনার্জি সেভিং বাল্ব ব্যবহার করতে পারেন। অ্যাকুরিয়াম কেনার আগে অবশ্যই বারান্দার সাইজের কথা খেয়াল রাখতে হবে। বারান্দার আয়তনের তুলনায় অ্যাকুরিয়াম বড় কিংবা ছোট হলে তা দেখতে বেমানান লাগবে। অ্যাকুরিয়ামে পাথর কুঁচির নিচে একটি ওয়েট ডাস্ট ফিল্টার রাখতে হয়। তার সাথে একটি এয়ার এক্সিকিউটর থাকে। যেটা দিয়ে বাতাস বের হবার সময় ভিতরে কিছুটা উর্ধ্বচাপের সৃষ্টি হয়। যার ফলে ময়লা খুব ধীরে ধীরে পাথরের ভিতর দিয়ে ঐ ফিল্টারের নিচে গিয়ে জমা হয়। সেক্ষেত্রে সব সময়ের জন্য এই যন্ত্রটি চালিয়ে রাখতে হবে।

বারান্দায় রাখতে পারেন কাঠ কিংবা বেতের দোলনা। সন্ধ্যায় দোলনায় দোল খেতে খেতে চায়ের কাপে চুমুক দেন তাহলে কিছুটা হলেও মন শান্ত হবে। তবে বৃষ্টির পানিতে কাঠ কিংবা বেত নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। সেক্ষেত্রে দোলনায় পাশে ঢাকনা রাখতে হবে। যাতে যেকোনো সময় ঝড় বৃষ্টি হলে দোলনাটি ঢেকে দেওয়া যায়। দোলনার উপর রঙিন কুশন রাখতে পারেন। কিংবা বারান্দাকে বানিয়ে ফেলতে পারেন আপনার লিভিং রুম। দুটো বেতের চেয়ার এবং একটি ছোট টি টেবিল সেখানে রাখতে পারেন। বারান্দায় সবুজের ছোঁয়া রাখতে চাইলে ঘাসের মতো কার্পেট পাওয়া যায় সে কার্পেট দিয়ে পুরো বারান্দাটি মুড়িয়ে দিতে পারেন। তবে বারান্দার কার্পেট রাখার ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে তা যেন হয় ওয়াটার প্রুফ। এছাড়া আরও রাখতে পারেন রঙিন যেকোনো শতরঞ্জি। বারান্দার মেঝেতে শীতল পাটি রেখে তার মধ্যে কয়েকটি ব্লক প্রিন্টের কুশন দিয়ে সাজিয়ে নিতে পারেন। বারান্দার রেলিংয়ে টানিয়ে দিতে পারেন বাঁশের পর্দা। এতে অতিরিক্ত রোদ আসলে তা টেনে দিলে বারান্দা কিছুটা ছায়া পাবে। অনেকে কিছুটা শান্ত সময় কাটানোর জন্য বারান্দায় বই পড়ার ব্যবস্থা রাখেন। সেক্ষেত্রে অনেক সময় টেবিল কিংবা আসবাবপত্র রাখতে হয়। তবে বারান্দার ক্ষেত্রে ভাঁজ করা যায় এমন আসবাবপত্র বেছে নেওয়া উচিত কারণ বৃষ্টি হলে তা যাতে সরিয়ে ফেলা যায়।

আপনার বারান্দায় রাখতে পারেন উষ্ণ আলোকসজ্জার ব্যবস্থা। বারান্দায় ব্যবহার করতে পারেন থিম লাইট। এ ছাড়া বারান্দার সিলিংয়ে বাঁশ কিংবা বেতের ঝুলন্ত লাইট সেট করে দিতে পারেন। সন্ধ্যার পর তা জ্বালিয়ে দিলে বারান্দা হয়ে উঠবে আরো বেশি নান্দনিক। বারান্দার রেলিং জুড়ে লাইট বসাতে পারেন। বারান্দার দেয়ালে ঝুলিয়ে দিতে পারেন বেতের আয়না কিংবা কোনো মাটির চিত্রকর্ম। বারান্দায় প্রবেশ করার দরজায় ঝুলিয়ে দিতে পারেন ঘণ্টা। বাতাসে তা নড়ে উঠলে ঝুন ঝুন মিষ্টি শব্দে বারান্দা এবং ঘর ভরে উঠবে। অনেকে বারান্দা ছোট হবার কারণে খুব বেশি সাজিয়ে রাখতে চান না। কিন্তু খুব অল্প কিছু জিনিস দিয়েই আপনি বারান্দা সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে পারবেন।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ইন্টেরিয়র

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

six − 6 =