সালেক সুফী: নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের দাপুটে ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচ জেতাকে কেউ কেউ বলছেন অঘটন, যদিও বিশ্বজুড়ে অধিকাংশ ক্রিকেট পন্ডিত করেছেন ভূয়সী প্রশংসা। তবে প্রশ্ন জাগে কোন জাদুর কাঠির পরশে ঝরা পালকের ধ্বংসস্তূপ থেকে জেগে উঠলো বাংলাদেশ। এ যেন রূপকথার অলৌকিক ঘটনা। আসলেও কি তাই!
মাউন্ট মানগুনাই বে ওভাল উইকেটে প্রথম সকালে সবুজ ঘাস ছিল। এই উইকেটে টস জয় ছিল বড় আশীর্বাদ। দুটি দলই কিন্তু আগের টেস্টে ব্যাটিং ধ্বসের কারণে বড় ব্যাবধানে হেরেছিল। বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে আর নিউজিল্যান্ড ভারতের কাছে। বাংলাদেশ টস হারলে ব্যাটিং করতে হতো। প্রথম দুই ঘণ্টায় পেস সহায়ক উইকেটে অনভিজ্ঞ বাংলাদেশের ব্যাটিং ভেঙে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। শুরুতে শরিফুলের জোড়া আঘাত এবং শেষ সেশনে এবাদতের দুটি উইকেট দলকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফিরিয়ে আনে।
দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশ চমৎকার বোলিং, ফ্লিডিং করে নিউজিল্যান্ড ইনিংস ৩২৮ রানে বেঁধে রাখায় প্রাথমিক অর্জন হয়। উইকেট কিন্তু অনেক শুষ্ক এবং ইজি পেসড হয়ে গিয়েছিলো। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা আফ্রিদি, হাসান অলিদের খেলতে আশায় দ্রুত গতির বোলিংয়ে ভীতি ছিল না। সাদমান, জয় দৃঢ়তার সঙ্গে শুরু করে। সাদমান ভালো খেলতে থাকা অবস্থায় ফিরে গেলেও জয় এবং শান্তর পার্টনারশিপ বাংলাদেশ শিবিরে গভীর আস্থা এবং নিউজিল্যান্ডের হতাশা তৈরি করে। শান্তু ছিল ছন্দময়, জয় ছিল আস্থার প্রতীক। শান্ত ফিরে গেলেও জয় উইকেট কামড়ে প্রকৃত টেস্ট মেজাজের পরিচয় দেন। দ্বিতীয় দিনশেষে ১৭৫/২ বাংলাদেশ শিবিরে গভীর আস্থা সৃষ্টি করে।
দিন বদলের বাঁকে তৃতীয় দিন পুরো দিন ব্যাটিং করে বাংলাদেশ। দিনের সূচনায় জয় (৭৮) ফিরে গেলেও আস্থার সঙ্গে ব্যাটিং করে মোমিনুল (৮৮), লিটন (৮৬) জয়ের ভিৎ গড়ে দেয়। চতুর্থ দিন সকালেও মিরাজ ইয়াসির দলের লিড ১৩০ পর্যন্ত টেনে তুলে। বাংলাদেশের ১৭৬.২ ওভার দীর্ঘ ইনিংস নিউজিল্যান্ড দলের সকল পরিকল্পনা পাল্টে দেয়। সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায়। যে উইকেটে সৌদি, বোল্ট, ওয়াগনার, জামিসন ঘাম ঝরিয়েছে সেখানেই ঝড় তুলে এবাদত, তাসকিন, শরিফুল।
চতুর্থ দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে নিউজিল্যান্ড ১৪৭/৫ করে মাত্র ১৭ রানে এগিয়ে থাকে। ম্যাচের ভাগ্যলিপি লিখা হয়ে যায়। বাংলাদেশের শীতের ভোরে লেপ কাঁথা মুড়ি দিয়েই ক্রিকেট প্রেমিকরা দেখতে পেল এবাদত তাসকিন সুনামি সৃষ্টি করে লন্ডভন্ড করেছে নিউজিল্যান্ড দলকে। ১৬৯ রানে সাঙ্গ হওয়া নিউজিল্যান্ড মাত্র ৩৯ রানে এগিয়ে থাকে। ৪২/২ করে ৮ উইকেটের বিশাল বাবধান জয়ী হয় বাংলাদেশ। ১৭ বছর পর দেশের মাটিতে টেস্ট পরাজয় হয় বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের, তাও টেস্ট ক্রিকেটে পুচকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে।
টস জয়, বোলিং সিদ্ধান্ত, গোটা দলের টেস্ট মেজাজে ব্যাটিং, এবাদত তাসকিন শরিফুল, মিরাজ এমনকি মমিনুলের বোলিং সবকিছুর সমীকরণে বাংলাদেশের জয় বিস্ময়কর হলেও অঘটন নয় কোনোক্রমেই। যোগ্য দলই জয় পেয়েছে শুরু থেকে শেষ অবধি ভালো খেলে।