বিদ্যুৎ বন্ধ করায় দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইলেন পবিস কর্মকর্তারা

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন আন্দোলনরত পবিসের কর্মকর্তারা। শৃঙ্খলা ফেরাতে মামলা প্রত্যাহার ও চাকরিচ্যুতদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়াসহ চার দফা দাবি জানিয়েছেন তারা।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভুক্তভোগীদের পরিবার ও সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীর ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা পবিস-১ এর জুনিয়র প্রকৌশলী (আইটি) তামজিদুল ইসলাম।

লিখিত বক্তব্যের শুরুতেই ১৭ অক্টোবর দেশের ৬৭টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ শাটডাউন করার বিষয়টি পরিকল্পিত ছিল না।  ওইদিন সকালে নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাকে আটক করলে ক্ষুব্ধ অফিসাররা স্থানীয়ভাবে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়। এরপর মামলা ও ২০ জন কর্মকর্তাকে অব্যাহতির খবর ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে। ক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্থানীয়ভাবে সমিতির কর্মকর্তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। আমরা এ জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

আরইবি কর্তৃক সৃষ্ট অস্থিতিশীল পল্লী বিদ্যুৎ খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে মামলা প্রত্যাহার করে ২৪ জনের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া ও স্ট্যান্ড রিলিজ এবং সংযুক্ত দুইজনকে পদায়ন করতে হবে। গ্রাহকের নিকট জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য সমিতি ও বোর্ড সংস্কার করে একীভূত করে একটি প্রতিষ্ঠান করা এবং স্থায়ী পদের বিপরীতে চুক্তিভিত্তিকদের নিয়মিত করা, সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত ছাত্র সমন্বয়কসহ স্বাধীন কমিশন গঠন করে পল্লী বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ করা, আরইবির দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। আমরা আশা করছি, সেখানে সমঝোতা হবে। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলোর সমাধান করা হবে। কিন্তু এরই মধ্যে কর্মসূচি প্রত্যাহার করার পরেও আরইবি কর্তৃক সংস্থার চাকরিবিধির বাইরে গিয়ে কোনো প্রকার তদন্ত, কারণ দর্শানো বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং হয়রানি করা দুঃখজনক। বর্তমানেও গ্রেফতার আতঙ্কে আমাদের অনেক কর্মকর্তারা স্টেশনে অবস্থান করতে পারছে না। এতে করে আবারও গ্রাহক ভোগান্তির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মূলত আরইবির স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের কারণেই এই সংকট তৈরি হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর ডিজিএম আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, ১৭ অক্টোবর আরইবি কর্তৃক উসকানি মূলক পদক্ষেপ হিসেবে ৩১ জন কর্মকর্তাকে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেওয়া, মামলা দায়ের ও কয়েকজন কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের মাধ্যমে অস্থিরতা তৈরি হয়। বর্তমানেও বিভিন্ন সমিতিতে কর্মকর্তাদের মাঝে গ্রেফতার আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা দেওয়ার জন্য এই পরিস্থিতির পরিত্রাণ প্রয়োজন।

তিনি বলেন, দুই দফা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আমরা বিদ্যুৎ সেবা চালু রেখেই আন্দোলন করে আসছিলাম। আলোচনার ও অহিংস কর্মসূচি মাধ্যমে আমাদের দাবি আদায়ের সচেষ্ট ছিলাম। এখন রাজনৈতিক রঙ দেওয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে।

বক্তারা বলেন, প্রকৃত সত্য মানুষের সামনে আসা উচিত শহর ও গ্রামের বিদ্যুৎ বৈষম্য নিরসন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ও উন্নত গ্রাহক সেবার জন্য পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সংস্কার প্রয়োজন। সরকারের কাছে আবেদন, প্রকৃত সত্য আড়াল করে কারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে, তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনুন। নিরীহ পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপদ ও বৈষম্যহীন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করুন।

সারাদেশে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি রয়েছে। দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ গ্রাহক তাদের আওতায়। সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দ্বৈত শাসন ও ৪৭ বছর ধরে চলমান শোষণ, বৈষম্য ও নিপীড়ন থেকে মুক্তির জন্য আরইবি-পবিস একীভূতকরণসহ অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন এবং সব চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিতকরণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। তারই ধারবাহিকতায় ২ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।

সর্বশেষ ২৭ আগস্ট বিদ্যুৎ ভবনের আন্দোলনকারী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ও বিদ্যুৎ বিভাগের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা। বৈঠকের পরেই আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের দাবি পূরণ না হওয়ায় আবার আন্দোলনে নামে তারা। অন্যদিকে ২০ জনকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে অব্যাহতি দিলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- চট্টগ্রাম পবিস-১ এর এজিএম আব্দুল্লাহ আল মামুন, নরসিংদী পবিসের ডিজিএম (টেকনিক্যাল) আব্দুল্লাহ আল হাদী, নরসিংদী পবিস -২ জুনিয়র প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম ভুঁইয়া, গাজীপুর পবিস-১ এর ওয়ারিং পরিদর্শক শেখ রহমতুল্লাহ নাজির, নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মিটার রিডার জাকের হোসেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

one × four =