চাই পরিবর্তিত বাংলাদেশ

সালেক সুফী

রাওয়ালপিন্ডি এবং কানপুর টেস্ট থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে বাংলাদেশ কি পারবে সাগরিকায় ঘুরে  দাঁড়াতে? শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৭ উইকেটের বিশাল ব্যাবধানে পরাজিত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সামনে আরো একটি সিরিজ ধবল ধোলাইয়ের আতংক। কিন্তু খেলাটির নাম যখন টেস্ট ক্রিকেট তখন বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়ে চমক দিবে সেই কথাটিও জোর গলায় বলা সমীচীন মনে করি না।

উপমহাদেশের  দুটি মাঠ রাওয়ালপিন্ডি আর কানপুরে সমসাময়িক সময়ে দুটি টেস্ট উপমা রেখে গেলো নিজেদের সেরাটি দিয়ে খেললে যে কোনো দল পাশার দান উল্টে দিতে পারে। কেউ কি ভেবেছিল বাংলাদেশের কাছে সিরিজে ধবল ধোলাই হওয়া পাকিস্তান দল তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি সহজে হেরে পরের দুটি টেস্ট দারুনভাবে জয় করবে শক্তিশালী ইংল্যান্ড দলের বিরুদ্ধে।

ক্রিকেট বিশ্বের কেউ ভাবেনি সব ফরম্যাটে সবার শীর্ষে থাকা নিজেদের দেশের মাটিতে অজেয় ভারত পর পর দুটি টেস্ট নিউ জিল্যান্ডের কাছে হেরে সিরিজ খোয়াবে? বাংলাদেশ কি পারে না এই ঘটনাগুলো থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ঘুরে দাঁড়াতে?

ফিরে তাকালে দেখবো ঢাকা টেস্টে প্রথম ইনিংস বিশেষত প্রথম সেশনে ৬টি উইকেট হারানোই ছিল টেস্ট পরাজয়ের মূল কারণ। কেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা আতংকিত ছিল? উইকেটে বাড়তি সিম মুভমেন্ট ছিল মানলাম। কিন্তু উইকেট ব্যাটসম্যানদের জন্য একেবারে বধ্যভূমি ছিল বলা যাবে না। আর যদি তাই হয় তাহলে এহেন উইকেট কেন কাদের পরামর্শে বানিয়েছিলো বিতর্কিত কিউরেটর ?

দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং দক্ষতাকে খাটো করবো না। কাগিসো রাবাদা এবং কেশব মহারাজ নিঃসন্দেহে বিশ্বমানের বোলার। কিন্তু ওদের সমমানের বোলারদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান এবং ভারতে খেলে এসেছে। ঢাকা টেস্টে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশের টেস্ট পরাজয় তরান্বিত করেছে।

এরপরেও তাইজুলের দক্ষতায় ঘুরে দাঁড়াতে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু টেস্টে বাংলাদেশের দুইজন পেসার না খেলানো ভুল কৌশল ছিল। ১৪০/৬ রান করে চাপে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। নাহিদ রানা বা তাসকিন থাকলে হয়ত দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২০০ রানে সীমিত রাখা যেত।

খেলোয়াড়দের ব্যার্থতা আর টিম ম্যানেজমেন্টের ভুল কৌশলের যোগফল বাংলাদেশের ৭ উইকেটে পরাজয়। দ্বিতীয় ইনিংসে মেহেদী হাসান মিরাজ এবং অভিষিক্ত জাকের আলী অনিকের সাহসী ব্যাটিং কাজে লাগলো না। দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং প্রথম ইনিংসে করলে ম্যাচের ফলাফল ভিন্ন হত।

সিরিজে এখন ব্যাকফুটে বাংলাদেশ।পাকিস্তান, নিউ জিল্যান্ড পেরেছে বলেই বাংলাদেশ পারবে এটির নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু তারপরেও বলবো বাংলাদেশের সক্ষমতা আছে ঘুরে দাঁড়াবার। নিজেদের সেরা ক্রিকেট উপহার দিয়ে টেস্ট ম্যাচটিকে স্মরণীয় করে রাখার।

তবে টপ অর্ডারে পরিবর্তন আনতে হবে। আতঙ্কগ্রস্ত টপ অর্ডার নতুন বলে রাবাদা, মুলডারকে মোকাবেলা করতে হিমশিম খেয়েছে। মেহেদি মিরাজের ব্যাটিং অর্ডার নিয়েও ভাবা প্রয়োজন। চট্টগ্রামে অবশ্যই মোমিনুল, মুশফিক, লিটনকে আরো দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করতে হবে। অধিনায়ক নাজমুল শান্তকে রানে ফিরতে হবে। ব্যাটসম্যানরা ৩৫০+ রান করতে না পারলে টেস্ট জয় অসম্ভব।

বাংলাদেশের অবশ্যই সক্ষমতা আছে ঘুরে দাঁড়াবার। জানিনা তাসকিন ম্যাচ ফিট কি না। আফগানিস্থানের বিরুদ্ধে ওডিআই সিরিজ খেলানোর বিবেচনায় টেস্ট  ম্যাচ না খেলানোর যুক্তি গ্রহণযোগ্য মনে হলো না। চট্টগ্রাম টেস্টে হয় নাহিদ রানা, না হয় খালেদ আহমেদকে খেলানোর সুপারিশ করব।  ঢাকা টেস্টে মমিনুলকে বোলিং করানো যেত যখন বাহাতি স্পিনারদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতা দৃশ্যমান ছিল।

আশা করি বাংলাদেশ টিমের থিংক ট্যাংক বাস্তবতা উপলব্ধি করে যথা প্রযোজ্য কৌশল অবলম্বন করবে। ঘুরে দাঁড়িয়ে চমক বাংলাদেশও দিতে পারে এই বিশ্বাস এখনো আমাদের আছে। আর যদি তাই হয় সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মেতে উঠবে বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমিকরা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

twelve − 1 =