লজ্জাজনক ব্যাটিং ব্যর্থতায় ভূমিধস পরাজয় বাংলাদেশের

সালেক সুফী

পতনের কালো গুহায় ধাবমান বাংলাদেশের ক্রিকেট কপোলে আরো একটি কলঙ্ক তিলক যোগ হলো। সংযুক্ত আরব দেশের শারজা মরুপ্রান্তরে ঐতিহাসিক ৩০০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচে লজ্জাজনক ব্যাটিং ব্যর্থতায় মাত্র ২৩ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ৯২ রানের বিশাল পরাজয় দিয়ে সিরিজ শুরু করলো বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিশাল জয়কে আদৌ খাটো করবো না। দলের বিপর্যয়ে যেভাবে দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যাটিং করেছে বিশস্ত মোহাম্মদ নবি (৭৯ বলে ৮৪) এবং অধিনায়ক হাসমাতুল্লাহ শাহিদী ( ৫২) এবং এর পর নবীন অফ স্পিনার এএম গাজানফার (৬/২৬) অফ স্পিনের ফাঁদে ফেলে যেভাবে একই ধসিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকে পূর্ণ কৃতিত্ব ওদের দিতেই হবে।

অস্ট্রেলিয়ার পর্যটন নগরীতে বসে রাত জেগে আফগানিস্তান ক্রিকেট বর্ডার ইউটিউবে খেলা সরাসরি দেখে ব্যর্থ মন নিয়ে কি লিখবো বুঝতে পারছি না। কি হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের? কেন খেলোয়াড়েরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে স্বাভাবিক খেলাটাই ভুলে গেছে? আফগানিস্তান ভালো দল। তাই বলে এমন নবিসের মতো ব্যাটিং করে লজ্জাজনক পর্যায়বরণ? কি ব্যাখ্যা, কি অজুহাত আছে ৭ জন ব্যাটসম্যান দুই অংকের স্কোর করতে না পারার?

মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, তাওহীদ হৃদয়, তানজিদ তামিম যেভাবে অকাতরে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছে কি জবাব আছে তার? নাজমুল শান্ত ( ৪৭), সৌম্য সরকার (৩৩), মেহিদি মিরাজ ( ২৮) উইকেটে স্থিতু হয়েও কেন ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলতে পারলো না? মনে হয় না বাংলাদেশ সিরিজে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। তাহলে কি আরো একটি সিরিজ ধবল ধোলাইয়ের পথে বাংলাদেশ? আর কত তলানিতে পৌঁছালে বোধোদয় হবে বিসিবির? জয়ে যদি বোনাস থাকে পর্যায়ে কেন দণ্ড হবে না ক্রিকেটারদের?

অথচ ভালো শুরু করেছিল বাংলাদেশ বোলিং। মুস্তাফিজ (৪/৫৪), তাসকিন (৪/৫৩) দাপুটে বোলিং করে আফঘানিস্তান ৫/৭১ কোনঠাসা করে ফেলেছিল। সেখান থেকে দেয়ালে পিঠ রেখে বর্ষীয়ান মোহাম্মদ নবী (৮৪) অধিনায়ক হাসমাতুল্লাহ শাহিদীকে (৫২) সাথী করে ষষ্ট উইকেট জুটিতে ১০৪ রান যোগ করে আফগান দলকে স্বস্তির স্থানে নিয়ে যায়। উইকেট একেবারে ব্যাটিং সহায়ক বলবো না। পেসার, স্পিনার, ব্যাটসম্যান সবার জন্যই কিছু ছিল উইকেটে। আফগানিস্তানের ২৩৫ রান তারা করে ম্যাচ জয় করা অনায়াস সাধ্য ছিল না।

বাংলাদেশ শুরুতে তানজিদ তামিমকে হারালেও ভালো খেলছিল সৌম্য (৩৩) স্বভাবসুলভ চঞ্চলা ছন্দে। নাজমুল শান্তর (৪৭) সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ৫৩ রান যোগ হয়েছিল। সৌম্য ফিরে যাবার পর মেহেদী মিরাজের (২৮) সঙ্গেও তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৫৫ যোগ হওয়ায় আশা জেগেছিল জয়ের পথে বাংলাদেশ। কিন্তু কি করুণ অবস্থা বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ের।

দলীয় ১২০ রানের মাথায় নাজমুল শান্ত আউট হবার পর তাসের ঘরের মতো ঝুর ঝুরিয়ে মাত্র ২৩ রানে ঝরে পড়লো বাংলাদেশ ইনিংস। মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ সহ ৭ জন ব্যাটসম্যান দুই অংকের ঘরেই রান করতে পারলো না। আফগানিস্তানের উদীয়মান তরুণ অফ স্পিনার এএম গাজানফার একই ২৬ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট নিয়ে ধসিয়ে দিলো বাংলাদেশকে। সঙ্গে ছিল শিকারী রাশিদ খান (২/২০)। প্রথম দর্শনে ১৮ বছরের তরুণ আল্লাহ মোহাম্মদ গাজানফারকে মনে ধরেছে। আফগানিস্তানের বিশ্বমানের স্পিন বোলিং দুর্গ আরো সমৃদ্ধ করবে বলে ধরে নিতেই পারি।

৯২ রানের বিশাল পরাজয় দিয়ে সিরিজ শুরু। সিরিজের শুরুতেই নক আউট পাঞ্চ।  ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কবে আশা নেই। আরো একটি সিরিজ ধবল ধোলাইয়ের কলঙ্ক হয়তো অপেক্ষা করছে বলে শংকা। যেভাবে বানভাসি মানুষের মতো উইকেট বিলিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ লজ্জা পেতেও লজ্জা হয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

5 × 4 =