মাসুম আওয়াল
এই দুই মিষ্টির নাম আছে জানা
এক হলো সীতাভোগ দুই মিহিদানা।
ওরা যেন দুই সই পাশাপাশি হাঁটে,
ছড়াকার ওদেরকে নিয়ে ছড়া কাটে।
বর্ধমানের সব বাঙালিরা চেনে,
উৎসবে সীতাভোগ, মিহিদানা কেনে।
হলদেটে, সাদা রঙ করে আহ্লাদ,
গুঁড়ো গুঁড়ো সুগন্ধী স্বর্গীয় স্বাদ।
এই দুই মিষ্টিতে আছে কী যে টান,
দেখলেই খেতে মন করে আনচান।
পানি মানে জল আর জল মানে পানি,
চলো এই মিষ্টির ইতিহাস জানি।
অনেক আগের কথা তবু নির্মল,
সময়টা চলছিল ব্রিটিশ আমল।
রাজারা সাহেবদের কেড়ে নিতে মন,
করতেন নিয়মিত কত আয়োজন।
নতুন সৃষ্টি কতো হয়ে যেত যোগ,
সেভাবেই এলো মিহিদানা সীতাভোগ।
কেটে গেছে কতো দিন কত মহাকাল,
সময়টা ঊনিশশো চারতম সাল।
বর্ধমানের রাজা ছিল সে সময়
বিজয়চন্দ মহাতাব মহাশয়।
ইংরেজ সরকার তাকে দেয় তাজ,
হঠাৎ উপাধি পায় সে রাজাধিরাজ।
সে খুশিতে রাজ্যতে হয় আয়োজন,
আসলেন বড় লাট লর্ড কার্জন।
রাজা মহাতাব তাকে খুশি করতেই
ময়রাকে ডাকলেন এই শোনো এই ।
নতুন মিষ্টি গড়ো এলো এ আদেশ,
বড় লাট খেয়ে যেন বলে আহা বেশ।
ভৈরব চন্দর নাগকে কী চেনো,
সে কালের সেরা কারিগর সে-ই জেনো।
আদেশ পেয়েই লেগে পড়ে ভৈরব,
সীতাভোগ-মিহিদানা করে কলোরব।
ভৈরব সকলের করে মন জয়,
এভাবেই সীতাভোগ মিহিদানা হয়।
বড় লাট বিজয়ের রাজ্যতে এসে,
মিষ্টির ঘ্রাণ পেয়ে উঠলেন হেসে।
সাহেব ও অতিথিরা সীতা-মিহি খেয়ে,
প্রসংসা করলেন খুব নেচে গেয়ে।
ভৈরব নাগদের প্রপিতার নাম,
ক্ষেত্রনাথ নাগ তা-ও জানলাম।
সীতাভোগ-মিহিদানা সে প্রথম গড়ে,
ভৈরব তার নয়া রূপ দেয় পরে।
প্রথমে সেসব ছিলো বোঁদে-পানন্তুয়া,
ভৈরব তাতে দেয় শিল্পের ছোঁয়া।
তারপর কী হয়েছে সকলের জানা,
সীতা-মিহি হয়েছিল সরকারি খানা।
সাদা সাদা হলদেটে গুঁড়ো ঝুর ঝুর,
এ মিষ্টি খেয়েছেন লাল বাহাদুর।
পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুও,
খেয়েছেন মিহিদানা ছিল তার প্রিয়।
ব্যাপারটা সিরিয়াস নয় মোটে ফানি
মিহিদানা তৈরির রেসিপিটা জানি-
চাল লাগে বাসমতি-গোবিন্দভোগ,
গুঁড়ো চালে জাফরান করে দাও যোগ।
বেশন মেশাও তাতে খুব ভালো করে,
তারপর পানি দিয়ে নাড়ো জোরে সোরে।
গাঢ় এই মিশ্রণ ঝাঁঝরিতে নিয়ে,
গাওয়া ঘিয়ে ভেজে নাও কড়াইতে দিয়ে।
দানাগুলি কড়া করে ভেজে নিতে থাকো,
তারপর ছেঁকে তুলে চিনি রসে রাখো।
এই ব্যাস হয়ে গেলো দামি মিহিদানা,
আহা মন কাড়া এক মজাদার খানা।
সীতাসের প্রজাতির গোবিন্দভোগ-
চাল দিয়ে গড়া হয় রাজ সীতাভোগ।
সীতাসের গোবিন্দ নেই সবখানে,
এই চাল পাবে শুধু বর্ধমানে।
এই চাল গুঁড়ো করে দেবে তাতে ছানা
কতটুকু ছানা দেবে নেই বুঝি জানা
এক ভাগ ছানা, তিন ভাগ চাল গুঁড়ো-
পরিমাণ মতো দুধ তার সাথে জুড়ো।
চাল গুঁড়ো দুধ ছানা মিশ্রণ করে,
ছাঁচে ফেলো সেই সব ঠিক মতো ধরে
মিশ্রণ বাসমতি চালে রূপ নেবে
তপ্ত তেলের মাঝে সেটা ভেজে নেবে।
শেষে কিছু নিকুতিও ভেজে নিতে পারো
গরম চিনির রসে সেই সব ছাড়ো।
ঝটপট হয়ে যাবে রাজ সীতাভোগ,
এরপর কাজু কিসমিস করো যোগ।
নিকুতি, গোলাপ জাম দিয়ে দিও তাতে,
এভাবেই সীতাভোগ গড়ো নিজ হাতে।
আপাতত ছড়া শেষ কোনো কথা নাই,
চলো চলো মিহিদানা-সীতাভোগ খাই।
লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ছন্দে ছন্দে