কম খরচেই সম্ভব ঘরের আলোকসজ্জা

ময়ূরাক্ষী সেন

নিজের ঘরকে মনের মতিা সাজিয়ে তুলতে কে না ভালবাসে! কিন্তু ঘর সাজানোকে বিলাসিতা মনে করে অনেকেই ঘর সাজানোর কাজে হাত দিতে চায় না। মনে করা হয়, ঘর সাজিয়ে কি লাভ এতে অনেক খরচপাতির ব্যাপার। বিশেষ করে যারা ভাড়া বাড়িতে থাকে তাদের ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অনীহা লক্ষ্য করা যায়। নিজের ফ্ল্যাট না বলে অনেকেই ঘর সাজাতে চায় না। কিন্তু ঘর আপনার নিজের হোক কিংবা না হোক যেখানে আপনি বসবাস করছেন সে স্থানটি তো আপনার। এবং আপনার বসবাস করা স্থানটি গুছিয়ে রাখা ভীষণ প্রয়োজন। কারণ আমাদের অজান্তেই ঘরের একটি প্রভাব আমাদের মন মেজাজের উপর পড়ে। তাই জীবন গোছাতে ঘর থেকে শুরু করতে হবে গোছানো। তাছাড়া আপনার ঘর ছোট নাকি বড়, ভাড়া কিংবা নিজের এসব তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আপনার থাকার স্থানটিকে আপনি কতটা নান্দনিকভাবে তুলে ধরছেন। তাছাড়া ঘর সাজানো যে সবসময় বিলাসিতা তা নয় অল্প কিছু জিনিস দিয়েও আপনার ঘরটি শখের মতো সাজিয়ে তুলতে পারেন। ব্যক্তির উপর নির্ভর করছে সে তার ঘরকে কিভাবে সাজাতে চায়। কারণ একজন ব্যক্তির ঘর সাজানো দেখে বোঝা সম্ভব তার রুচি ও ব্যক্তিত্ব। কেউ পছন্দ করে আসবাবপত্র দিয়ে ঘর সাজাতে কেউবা পছন্দ করে গাছ-গাছালি দিয়ে প্রকৃতির ছোঁয়া ঘরে রাখতে। এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে ব্যক্তির রুচির উপর। তাছাড়া একই উপকরণ দিয়ে ঘর সাজিয়েও একেকজনের ঘর দেখায় একেক রকম।

তবে আপনি যেমন করে ঘর সাজানো সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন না কেন ঘরের পরিবেশ মুহূর্তে বদলে দিতে পারে ঘরের আলোকসজ্জা। তাই যেকোনো ঘরে আলোকসজ্জার উপর বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। নিজের ঘরকে কোন আলোতে রাঙিয়ে তুলবেন তাও নির্ভর করছে রুচির উপর। কিন্তু ঘরে আলোকসজ্জা করার আগে অবশ্যই ঘরের আয়তনের দিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। ঘরের সাইজের উপরে মূলত নির্ভর করছে কোন রুমে কতটুকু আলোর প্রয়োজন। আয়তনে ছোট ফ্ল্যাটে যদি অতিরিক্ত আলোকসজ্জা করে ফেলেন তা যেমন মানানসই হবে না, আবার বড় ফ্ল্যাটে অল্প আলোকসজ্জাতে ঘর অন্ধকার লাগবে। বিশেষজ্ঞদের মতে আলোকসজ্জার প্রভাব আমাদের মনের উপর পড়ে। আলোকসজ্জা মুহূর্তে আমাদের মন ভালো কিংবা খারাপ করে তুলতে পারে। আলো যে আমাদের মুড-এর উপর প্রভাব ফেলে তার কথা আমরা ভুলে যাই। প্রতিদিন সকালে কাজ করতে যাবার আগের কর্মক্ষমতা এবং ঘুমানোর আগে শান্ত পরিবেশ পুরোটাই নির্ভর করে থাকে আলোর উপর। জার্মান বিজ্ঞানীরা ‘ডায়নামিক লাইট’-এর মাধ্যমে ঘরের মধ্যে আলোর চরিত্র বদলে দেবার চেষ্টা করছেন। আলো গবেষক অলিভার স্টেফানি বলেন, ‘আমাদের উপর আলোর মোটামুটি ৩ রকমের প্রভাব রয়েছে। একটা অবশ্যই বায়োলজিক্যাল প্রভাব। অর্থাৎ আলো আমাদের বায়োলজিক্যাল ক্লক নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়া অবশ্যই আলোর কারণে আমরা দেখতে পাই। সেই দৃশ্য মনের মধ্যে আবেগেরও সৃষ্টি করে। সেই আবেগ আমাদের ভালো থাকার জন্য জরুরি।’

আলো আমাদের ঘুম ও জেগে থাকার ছন্দও নিয়ন্ত্রণ করে। মনমেজাজ ও শরীরের অনেক ক্রিয়ার উপরেও এর প্রভাব রয়েছে। তাই ঘরের মধ্যে সচেতনভাবে আলোর ব্যবহার আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে আলো মোটেও অবহেলার জিনিস নয়, বরং এর ব্যবহারের আগে বেশ সতর্ক থাকা জরুরি। তা না হলে আলোর কারণে যে শুধু আপনার কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে কিংবা সারাদিন ঘুম ঘুম পাচ্ছে বা রাতে একদমই ঘুম আসছে না তা বোঝা যাবে না। আলো যে আমাদের শরীর ও মনে প্রভাব ফেলে তা অনেকে জানে না বলেই নানা রকম সমস্যা পোহাতে হয়। যেহেতু ঘর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান তাই এখানেও আলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে।

তবে ঘর সাজাতে আলোকসজ্জার ব্যবহারের কথা শুনে অনেকের মনে হতে পারে এটি বোধহয় ব্যয়বহুল। অবশ্যই আলোকসজ্জা একটি ব্যয়বহুল কাজ, অনেকের আলোকসজ্জার প্রতি বিশেষ শখ থাকায় তারা অনেক টাকা খরচ করে শুধুমাত্র ঘর আলো দিয়ে সাজায়। তবে সব সময় যে খুব খরচ করে আপনার ঘরকে উষ্ণ আলোতে সাজাতে হবে তা নয়।

যারা নিজের ঘরে হালকা আলো-আঁধার রাখতে চান তারা খুব কম খরচেই সাজিয়ে ফেলছেন ঘরকে। ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে এখন হলুদ রঙের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। ঘরে হালকা হলুদের আভা মন মুহূর্তে চনমনে করে তোলে। তবে ঝাড়বাতির মতো ব্যয়বহুল আলোকসজ্জা অনেকেই এড়িয়ে চলেন। কারণ সিলিংয়ের ঝাড়বাতি লাগানোর জন্য বেশ বড় ঘর হওয়া প্রয়োজন এবং এটি বেশ খরচের ব্যাপার। তাছাড়া ঝাড়বাতি একটি জাঁকজমকপূর্ণ জিনিস। এখন মানুষ জাঁকজমকপূর্ণ নয় হালকা জিনিস পছন্দ করে।

বাড়ির প্রবেশপথে চেষ্টা করা হয় হালকা আলো রাখার জন্য। এতে দেখতে বেশ সুন্দর লাগে। ঘরের মূল জায়গা ছাড়া বিভিন্ন স্থানে হালকা আলোর ব্যবহারে বেশি লক্ষ্য করা যায়। জনপ্রিয়তা পাচ্ছে কম খরচে সিলিং আলোসজ্জা। অনেকে দেয়ালের সাথে মিল রেখেও ঘরে আলোকসজ্জা করেন। ঘরে অন্য কোনো ধরনের আলোকসজ্জা না রাখলেও ল্যাম্পশেডের ব্যবহার খুব বেশি দেখা যায়। একটি ল্যাম্প শেড ঘরকে বদলে দিতে সক্ষম। আবার অনেকে ব্যবহার করেন টাস্ক লাইটিং। ঘরে বুক সেলফ কিংবা ফ্রেমকে হাইলাইট করে ব্যবহার করে স্পট লাইটিং।

তবে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে এখন রয়েছে মরিচ বাতি। অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে মরিচ বাতি আবার কি? কারণ এটিকে অনেকে ফেয়ারি লাইট হিসেবেও চিনেন। বিয়েবাড়িতে যে মরিচ বাতি দেখা যায় সেটিকে মূলত ঘর সাজানোর জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। প্রথমদিকের এটি জনপ্রিয়তা বেশি পায় শিক্ষার্থীদের কাছে। মরিচ বাতির দাম বাজেটের মধ্যে থাকার কারণে অনেক শিক্ষার্থী এগুলো কিনে নিয়ে নিজেদের ছোট্ট রুম সাজিয়ে তুলতেন। সাদা, নীল, লাল ইত্যাদি রঙের মরিচ বাতি বাজারে পাওয়া যায়। মরিচ বাতির আসল রূপ ফুটে উঠে যখন আপনি ঘরের মূল লাইট নিভিয়ে এই আলো জ্বালিয়ে দেন। অনেকে হালকা মরিচ বাতি জ্বালিয়ে রাতে শান্তির ঘুম পর্যন্ত দিতে পারে।

বাসায় যদি বিবাহবার্ষিকী কিংবা জন্মদিনের মতো ছোটখাটো আয়োজন করা হয় তাহলেও অনেকে মরিচ বাতি দিয়ে পুরো ঘর আলোকসজ্জা করেন। এছাড়া পহেলা বৈশাখ, ঈদ, পূজা পার্বণ এমন অনেক উৎসবেও অনেকে মরিচ বাতি সাহায্যে ঘর সাজিয়ে তোলেন। বেডরুম, বসার ঘর, লিভিং রুম যেকোনো স্থানে মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো সম্ভব। এখন শুধু শিক্ষার্থী নয়, সব মানুষই ঘর সাজানোর জন্য মরিচ বাতি বেছে নেন। কারণ কম দামে বেশ নান্দনিকভাবে ঘর সাজিয়ে তোলে এই বাতি।

শুধু যে মরিচের রূপে থাকে এ ধরনের বাতি তা নয়। ফুল, প্রজাপতি, পাখি ইত্যাদি আকারেও এ ধরনের ফেইরি লাইট বানানো হয়। অনেকের ছবির ফ্রেমের উপরেও মরিচ বাতি দিয়ে সাজিয়ে থাকেন। তারার মতো দেখতে ফেয়ারি লাইটিং করেন অনেকে ঘর জুড়ে।

সুতরাং ঘর আলো দিয়ে রাঙিয়ে তুলতে আপনার যে অনেক টাকা গুনতে হবে তা নয়। কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করলে ঘরকেও আপনি করে তুলতে পারেন নান্দনিক। ঘর মনের মতো সাজিয়ে তুলতে জানা প্রয়োজন কোথায় কি পাওয়া যায় এবং কেমন দামে পাওয়া যায়। অনেকে শুধু সঠিক তথ্য না জানার কারণে নিজের ঘর মনের মতো সাজাতে পারেন না। কারণ বেশিরভাগ মানুষের ধারণা ঘর সাজানো ব্যয়বহুল। তাই ঘর সাজানোর নিত্যনতুন আইডিয়া নিয়ে আপনার পাশে রয়েছে রঙবেরঙ।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ইন্টেরিয়র

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

fourteen − four =