পার্থ টেস্টে ভারতের দাপুটে জয়

সালেক সুফী

সূচনায় পিছিয়ে পড়া ভারত ঘুরে দাঁড়িয়ে ২৯৫ রানের দাপুটে জয় দিয়ে সিরিজে ১-০ এগিয়ে গেলো। অনেক বিশ্লেষকের মতে হাড্ডা হাড্ডি লড়াই হবার কথা সব ফরম্যাটেই শীর্ষে থাকা দল দুটির দৈরথে। কিন্তু অনেক হিসাব নিকাশ পাল্টে দেয়া প্রথম টেস্টে প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানে গুটিয়ে যাবার পর ভারত সেই যে জাসপ্রিত বুমরা ঝড়ে অস্ট্রেলিয়াকে ১০৪ লন্ড ভন্ড করলো, সেখান থেকে জয়সোয়াল, কোহলি আর রাহুলের অন্য গ্রহের ব্যাটিং ভর করে পৌছালো তুঙ্গে।৪৮৭/৬ ইনিংস ঘোষণা করে ৫৩৩ রানের অনতিক্রম্য টার্গেট দিয়ে ২৯৫ জিতে দারুন সংকেত দিলো ভারত।

আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুই মোড়লের বর্ডার-গাভাস্কার ৫ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে এই অবস্থান থেকে ফিরে আসতে অস্ট্রেলিয়াকে অনেক লড়াই করতে হবে। এডিলেড, ব্রিসবেন, মেলবোর্ন, সিডনি টেস্ট গুলোতে জয় পেতে দুটি দল কোমর বেধে লড়বে। কদিন আগে দেশের মাটিতে নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ধবল ধোলাই হওয়া ভারতের ৩৬০ ডিগ্রী ঘুরে দাঁড়ানোকে অনেকটা রূপকথার কল্প কাহিনী মনে হচ্ছে।

রাহুল দ্রাবিড় যুগের অবসানের পর দায়িত্বে এসেছে গৌতম গম্ভীর। পরিবর্তনের ছোয়া লেগেছে ভারত ক্রিকেটে। বলতেই হবে সূচনায় হোঁচট খেয়ে কঠিন সমালোচনার মুখে ছিল ভারত ক্রিকেট ব্যাবস্থাপনা। কিন্তু দেশের ক্রিকেট এতো সমৃদ্ধ যে ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগে নি। পার্থ টেস্টে নিয়মিত অধিনায়ক রোহিত শর্মা, তুখোড় ব্যাটসম্যান শুভমান গিল এবং শীর্ষস্থানীয় পেসার মোহাম্মদ সামিকে পায় নি ভারত। টেস্ট ক্রিকেটে অপরিহার্য দুই স্পিনিং অল রাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা আর রবিচন্দ্র অশ্বিনকে বিশ্রাম দেওয়া দেখে শুরুতে খটকা লেগেছে। এর পর যখন সবুজ ঘাসের উইকেটে প্রথম ব্যাটিং নিয়ে ১৫০ রানে বিপর্যস্ত হলো অনেক নিন্দুক নানা ভাবে দলকে শুলে চড়ানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু জাসপ্রিত বুমরা অনুপ্রাণিত ভারত বোলিং প্রচন্ড তান্ডবে ম্যাচে ফেরার পর থেকে সম্পূর্ণ পাল্টে গেলো ভারত। কস্মিন কালেও কেউ ভাবে নি ১০৪ রানে গুটিয়ে যাবে অস্ট্রেলিয়া। আর সেই উইকেটে প্রচন্ড ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ২২ বছরের তরতাজা যুবক যশবি জয়সোয়াল (১৬১) আর কে এল রাহুল ২০১ রানের অতিমানবীয় পার্টনারশীপ করে খেলার গতিধারা পাল্টে দিবে। ভাবতে পারেন ২২ বছরের যুবক ১৫ মাস টেস্ট খেলেই চার চারটি শত রান পেলো। গতির স্বর্গ পার্থ উইকেটে বিশ্ব সেরা পেস আক্রমণকে তুলো ধুনো করলো।  ভারত কিংবদন্তি বিরাট খলির অনবদ্দ ৩০ম শতরানের কথা নাই বা বললাম।

৫৩৪ রানের যে টার্গেট ছুড়ে দিয়েছিলো ভারত সেখান থেকে খেলার একটি মাত্র পরিণতি ছিল। আর তৃতীয়  দিন শেষে ১২ রান করতে ৩ উইকেট হারানো অবস্থান থেকে অপেক্ষা ছিল পরাজয়ের ব্যাবধান কতটা কমাতে পারবে অস্ট্রেলিয়া। চেষ্টা করেছিল ট্রাভিস হেড (৮৯), মিচেল মার্শ (৪৭)। কিন্তু দুর্গম গিরি কান্তার মেরু পেরুনোর মত রসদ মজুদ নেই এই অস্ট্রেলিয়া দলের। পরিণতি ২৯৫ রানের বিশাল ব্যাবধানে পরাজয়। ১-০ ব্যাবধানে এগিয়ে যাওয়া ভারত এখন সিরিজ জয়ে ফেভারিট।  তবে সিরিজে আরো অনেক নাটক হবে না সেটি নিশ্চিত করে বলা যাবে না।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

two × 3 =