অলকানন্দা মালা
যার কথা বলছি তিনি একজন গুণী অভিনেতা। তবে সচরাচর ক্যামেরায় ধরা দেন না। গল্প ও চরিত্র পছন্দ হলেই সায় দেন। এ কারণেই হয়তো কাজ অল্প হলেও অর্জনের গল্পটা বড়। একটি উদাহরণ দিলেই স্পষ্ট হবে। আশফাক নিপুনের জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ মহানগরের মলয় নামের পুলিশ অফিসারের কথা মনে আছে? সবার মন জয় করে নিয়েছিলেন অভিনয় দিয়ে। সেই মোস্তাফিজুর নূর ইমরানের কথা বলছি। ৮ নভেম্বর মুক্তি পেতে যাচ্ছে এ অভিনেতার ওয়েব সিরিজ ‘রঙিলা কিতাব’। কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। বিপরীতে আছেন পরীমণি। তার সঙ্গে কথোপকথন জমে উঠেছিল। কথায় কথায় উঠে এসেছে অভিনেতার পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবন।
মুক্তির আগেই ‘রঙিলা কিতাব’ বেশ সাড়া জাগিয়েছে সামাজিকমাধ্যমে। তার কতটা পূরণ হবে ভেবে কি চাপ বোধ করছেন?
না, এরকম কোনো চাপ বোধ করছি না। এর অবশ্য কারণ আছে। সেটি হচ্ছে, কনটেন্টের গল্প খুবই ভালো ছিল। নির্মাতা ভালো। সব মিলিয়ে খুবই ভালো কিছু হয়েছে। এজন্যই কাজটি করা। আশা করি সবার ভালো লাগবে। আমার মনে হয় প্রত্যাশার শতভাগ পূরণ হবে।
এর আগে সাহস, মহানগর, কাইজারে কাজ করেছেন। এক চরিত্র থেকে আরেক চরিত্রে ট্রান্সফরমেশন ব্যক্তিজীবনে কোনো প্রভাব ফেলে কি?
প্রত্যেক কাজ কোনো না কোনোভাবে একজন অভিনেতার জীবন থেকে কিছুটা করে সময় নিয়ে নেয়। বলতে পারেন, প্রতিটি চরিত্রকে ধারণ করতে কিছুটা করে জীবনীশক্তি যায়। সেটা ব্যক্তিজীবনে প্রভাব ফেলে, তবে খুব যে বেশি প্রভাব ফেলে ঠিক সেরকম না। একটি কথা আছে, আপনাকে সজ্ঞানে অবচেতনে যাওয়ার প্রক্রিয়া। ব্যাপারটা এরকমই। সেটা কিছুটা হয়তো কাজ করে। কিন্তু তা যে ব্যক্তিজীবনের ওপর খুব প্রভাব ফেলে তা একেবারেই না।
অভিনয়শিল্পীদের বলতে শুনি, চরিত্র থেকে বের হতে অনেক সময় লেগেছে। আপনার ক্ষেত্রে কখনও এরকম হয়েছে?
যেহেতু আমি প্রত্যেকটা কাজ দীর্ঘ সময় নিয়ে করি। ফলে যখন যে চরিত্রে কাজ করি তখন ওই চরিত্রের সঙ্গে জীবনযাপনের এক ধরনের অভ্যস্ততা তৈরি হয়। সেই অভ্যস্ততা থেকে বের হয়ে আসতে কখনও কখনও কিছুটা সময় লাগে। ওই সময়টা আমি নেই। কারণ নিজেকে পুনরায় ফিরে পাওয়ার একটা ব্যাপার থাকে। তাছাড়া ওই কাজ থেকে নতুন কী শিখলাম সেটি অনুধাবন বা উপলব্ধি করতেও খানিক সময় লাগে। মূলত এটাই চরিত্রে থাকা বা বের হয়ে আসার ব্যাপার।
‘রঙিলা কিতাবে’ আপনার চরিত্র সম্পর্কে জানতে চাচ্ছিলাম…
এখানে আমার চরিত্র বেশ ডায়নামিক। আমাদের চেনা পরিচিত মানুষের মতো। এরকম প্রায়ই আমরা দেখি। ‘রঙিলা কিতাব’ উপন্যাস যারা পড়েছেন তারা হয়তো ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। যারা পড়েননি তাদের জন্য বলব। চরিত্রটির নাম প্রদীপ। একটা সময় সে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকে। কোনো এক পর্যায়ে এসে সে রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। ঠিক তখন রাজনৈতিক ফাঁদে পড়ে তার বাস্তব জীবন ধ্বংসের মধ্য দিয়ে যায়। সেই জায়গাটা সে ডিল করতে থাকে। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে না সাধারণ মানুষ হিসেবে তার নতুন জীবনে রাজনীতিটা কীভাবে বাজে প্রভাব ফেলে। এটাই হচ্ছে প্রদীপের চরিত্র।
প্রস্তুতির জন্য কতটা সময় লেগেছে?
প্রতিটি চরিত্রের জন্য অভিনয়শিল্পীকে প্রস্তুতি নিতে হয়। এখানেও ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবে চরিত্রের প্রস্তুতিতে নির্মাতা অনম ভাই ভালো ভূমিকা রেখেছেন। তার সহযোগিতায় সহজ হয়ে উঠেছে বিষয়টি। দীর্ঘসময় তার সঙ্গে আলোচনা করেছি। যেহেতু এতে বেশ কিছু অ্যাকশন দৃশ্য আছে। সেকারণে প্রস্তুতিটা নিতে সময় লেগেছে। একজন মানুষকে ধন্যবাদ দিতে চাই। তিনি আসিফ হাসান সাগর। আমার প্রশিক্ষক। ওনার কারণেই দৃশ্যগুলো স্বাভাবিকভাবে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রস্তুতির সময়টা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মনস্তাত্ত্বিক ও শারীরিক প্রস্তুতি প্রিপারেশন নিতে কিছুটা সময় লেগেছে।
পরীমণির সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
যখন সহশিল্পীর অনুপস্থিতিতে আমাদের শট দিতে হয়, তখন তার অ্যাকশন আমরা পাই না। আমাদেরই এটা করতে হয়। আমি ওনার অ্যাকশনের অনুপস্থিতিটা অনুভব করেছি। কেননা ওনার অ্যাকশন এতটাই ভালো ছিল যে আমার ক্লোজ শটে যদি ওনার কাউন্টার পেতাম আমার রিয়্যাক্ট করতে সুবিধা হতো। অ্যাকশনটা এত ভালো ছিল যে আমাকে রিয়্যাক্ট করতে অনেকটা সাহায্য করেছে। তার মানে বলতে চাচ্ছি, উনি যেভাবে চরিত্রটাকে তুলে ধরেছেন সেটা দারুণ ছিল। মনে হয় দর্শক যখন দেখবেন তখন বুঝতে পারবেন। আমি বলব তিনি দারুণ অভিনয় করেছেন।
‘রঙিলা কিতাব’কে সবাই পরীমণির ওয়েব সিরিজ বলছে। আপনার নাম খুব কম আসছে…
না এটা কখনও হয়নি। এর আগে ‘মহানগর’র ক্ষেত্রেও না ‘কাইজার’র ক্ষেত্রেও না। একবার বলেছিলাম মানুষ আমাকে মনে রাখুক বা না রাখুক সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। আমার অভিনয় ও চরিত্রটাকে মনে রাখছে কি না সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
মেজবাউর রহমান সুমনের ‘রইদ’ সিনেমায় যুক্ত হয়েছেন। এ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছিলাম…
আপনি যেটুকু জানেন এর বাইরে কিছুই বলতে পারব না। এজন্য দুঃখিত। কেননা সংশ্লিষ্টদের নিষেধ আছে। যখন মুক্তি পাবে তখন বলব। সেসময় আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
আপনাকে টেলিভিশনে সেভাবে পাওয়া যায়নি। কারণ কী?
টেলিভিশনে কাজের পদ্ধতিটা আমার পছন্দ ছিল না, এখনও নেই। নাটকের শুটিংয়ের আগে পরিচালক বলতেন, এই এই কাপড় নিয়ে চলে আসবেন। স্ক্রিপ্ট কোথায়? বলত, স্ক্রিপ্ট নেই। ক্যামেরায় দাঁড়ানোর আগে পাবেন। এসব আমার একেবারেই পছন্দ হতো না। কারণ, আমি চরিত্রটা তৈরি করার সময় পেতাম না। যা কোনো অবস্থায় কোনো অভিনয়শিল্পীর পেশাদারিত্ব ও অভিনয়পদ্ধতির মধ্যে পড়ে না। এই বিষয়গুলোর সঙ্গে আপোষ করতে পারছিলাম না। সেকারণেই থিতু হওয়া হয়নি বোকাবাক্সে।
আপনার পূর্বপুরুষ কেউ অভিনয়ে যুক্ত ছিলেন?
আমার নানা আলী মনসুর পাইক অভিনয় করতেন। তার একটি বিশেষ দিক ছিল। তিনি যখন কোনো চরিত্রে অভিনয় করতেন, সেই চরিত্রের সঙ্গে লম্বা সময় ধরে বাস করতেন। যদিও এসব গল্প আমি শুনেছি। তার মৃত্যু ও আমার জন্ম যে একই সময়ে। অবিশ্বাস্য হচ্ছে, তিনি ও আমি দেখতে একই রকম। সাম হাউ তার কারণে অভিনয়ের স্বপ্নটা আমার ভেতরে বসবাস শুরু করে। তাই তো আমার চিন্তা, বড় পর্দায় কাজ করার। শুধু জাতীয় নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। শুরু থেকে এমন টেনডেন্সি ছিল। আমার মনে হয় তার এই দিকগুলো আমার ভেতর থাকাটা আমার জন্য ভালো।
প্রথম অভিনয়ের কথা জানতে চাই…
সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর। ২০০৭ সালের ঘটনা। সে বছর প্রথম অভিনয় করি। খুব ছোট চরিত্র ছিল। বড় ভাইদের প্রোডাকশন ছিল, সেখানে আমাকে প্রোডাকশন বয় হিসেবে ট্রিট করা হয়েছে। শুরুটা এভাবেই।
দাম্পত্য জীবন কেমন চলছে অর্ষার সঙ্গে?
এ বছর আমরা নতুন জীবনে পা রেখেছি। এক কথায় ফ্যান্টাস্টিক। আমরা খুবই ভালো বন্ধু। দুজনের বোঝাপড়াটা ভালো। সব মিলিয়ে ভালো আছি।
এক কথায় অর্ষাকে কি বলে মূল্যায়ন করবেন?
এক কথায় বলব, আমি খুবই ভাগ্যবান তাকে পেয়ে। আমি তার খুব বড় ভক্ত। বিশেষ করে তার ব্যক্তিত্বের। তার কাজেরও। দারুন একজন মানুষ সে। তার সঙ্গে আমি আমার জীবনটা কাটাচ্ছি। আগামীতে কাটাব ভাবতেই নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়।
লেখটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: আলাপচারিতা