পুরুষের হেয়ার কাট ও স্টাইলিস্ট দাড়ি

নাহিন আশরাফ

সব আয়োজন যেন শুধু নারীদের নিয়ে। কিন্তু স্টাইল ও ফ্যাশনে এখন পিছিয়ে নেই পুরুষ। পুরুষও চায় ভিন্নভাবে নিজেদেরকে ফুটিয়ে তুলতে। পুরুষদের ফ্যাশনের একটি বিশেষ অংশ জুড়ে রয়েছে দাড়ি ও চুল। দাড়ি ও চুলের স্টাইল পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের পুরো রূপ পাল্টে যায়। তাই চুল ও দাড়ির স্টাইলের ক্ষেত্রে পুরুষদের অবলম্বন করতে হয় সাবধানতা। সঠিক দাড়ির স্টাইল এবং হেয়ারকাট যেমন চেহারার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে পারে, তেমনি ভুল কাট চেহারা নষ্ট করেও দিতে পারে। তাই এখন সেলুনে পুরুষদের জন্য থাকে অনেক আয়োজন।

চুল ও দাড়ির স্টাইল কখনো অন্যকে অনুসরণ করে করা উচিত নয়। এটি পুরোপুরি নির্ভর করছে চেহারার আকার ও যার যার ব্যক্তিত্বের উপর। সব ধরনের চেহারার সঙ্গে সব ধরনের স্টাইল মানানসই হয় না। অনেকের সঠিক হেয়ার কাট কিংবা দাড়ির স্টাইল সম্পর্কে ধারণা থাকে না। ফলে তারা চিরাচরিত কাট দিয়ে থাকে। কিন্তু নিজের চেহারা সঙ্গে কোন ধরনের হেয়ার কাট কিংবা দাড়ির স্টাইল মানানসই এ সম্পর্কে ধারণা থাকলে মুহূর্তেই নিজের স্টাইল ও ব্যক্তিত্ব বদলে যে কাউকে মুগ্ধ করা সম্ভব। পুরুষরা যেহেতু নিজেদের উপর এক্সপেরিমেন্ট করতে কিছুটা দ্বিধাবোধ করে তাই কোনো নতুন ধরনের হেয়ারকাট কিংবা দাড়ির স্টাইল করতে চাইলে প্রথমে একজন হেয়ার এক্সপার্টের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।

এবারের রঙবেরঙের আয়োজন পুরুষের চুল ও দাড়ির স্টাইল। জেনে নেওয়া যাক কেমন হতে পারে আপনার চুল ও দাড়ির স্টাইল।

লেয়ার কাট

লেয়ার কাটের ধরনটা হলো, মাথার পেছনের দিকে একটু ছোট এবং কানের দুই পাশে একটু ঢেকে ছোট করে কাটা। আর সামনের চুল খুব ছোটও থাকবে না, আবার খুব বড়ও থাকবে না। মোটামুটি সব বয়সের পুরুষের এ ধরনের চুলের কাট বেশ মানাবে।

স্পাইক কাট

এখন তরুণদের কাছে খুব জনপ্রিয়। অনেকে শুধু মাথার সামনের অংশ স্পাইক করছেন। যাদের মুখ কিছুটা গোল, তারা কানের দুই পাশে চুল একটু ছোট রাখতে পারেন। এতে মুখ ভালমতো ফুটে উঠবে। যাদের মুখ কিছুটা লম্বাটে ধরনের, তারা কানের দুই পাশে কিছুটা চুল রেখে দিলে ভালো মানাবে।

ক্ল্যাসিক ট্যাপার

এ হেয়ার কাট নিতে হলে থাকতে হবে মাঝারি লম্বা চুল। এই কাটে মাথার পিছনে ও কানের উপরের চুল খাটো করে কাটা হয়। কিন্তু কপালের চুল রাখা হয় লম্বা, যাতে চুলগুলো কপালের ওপর ছড়িয়ে রাখা যায় বা ব্যাক ব্রাশ করা যায়।

ইমো স্টাইল

এর জন্যও মাঝারি লম্বা চুল থাকা প্রয়োজন। ইমো স্টাইল করতে অনেকটা এলোমেলোভাবে চুল কাটা হয়। কিন্তু সামনের চুল বড় রাখা হয়। আর মাথার পিছনের চুল স্পাইক স্টাইলে ছোট রাখা হয়। সামনে এবং কানের পাশের বড় চুল মুখের ওপর প্রায় ছেয়ে থাকে। এটিকে ‘ইমো সুইপ’ বলে।

ক্রু কাট

এ কাটের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, মাথার পেছনের ও পাশের চুল খুব ছোট করে কাটা হয়, কিন্তু ওপরের চুল ক্রমান্বয়ে কিছুটা বড় ও খাড়া করে রাখা হয়। ক্রু কাট পরিচর্যা করা খুব সহজ।

ফ্রন্ট ব্যাংস

এটি নতুন প্রজন্মের মধ্যে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে জনপ্রিয় হেয়ার স্টাইল। বেশিরভাগ পুরুষকেই এখন এই হেয়ার স্টাইলে দেখা যাচ্ছে। যদি কেউ এখনও দ্বিধায় ভোগেন যে, ফ্রিঞ্জ ব্যাংস হেয়ার স্টাইল তাদের চেহারার সঙ্গে যাচ্ছে কি না, তাদের জন্য ফ্রন্ট ব্যাংস উপযুক্ত।

মুলেট

এই ধরনের কাটে চুল সামনের দিকে, উপরের দিকে এবং পাশে ছোট করে কাটা হয়, কিন্তু পিছনে লম্বা হয়।

বাজ কাট

যারা খুব বেশি খেলা পছন্দ করেন অথবা যারা খেলোয়াড় তাদের অনেক ধরনের কাট দিতে দেখা যায়। তার মধ্যে বেশিরভাগ হলো বাজ কাট।

ক্লাসিক কাট

ক্লাসিক কাট সাধারণত মুখের গড়ন আর মাথার আকৃতি বুঝে দেওয়া হয়। এই স্টাইলের বিশেষত্ব হলো মাথার একপাশে সিঁথি করে চুল আঁচড়ানো।

সামার কাট

সামার কাট হলো পিছনের দিক ছোট করে সামনের দিক একটু লম্বা বা বড় রাখার স্টাইল। গোলাকার চেহারার শিশুদেরও এই কাট বেশ ভালো মানাবে।

ব্ল্যাংক কাট

সোজা বা ঢেউ খেলানো চুলের জন্য এই কাট খুব সুন্দর মানায়। বলে রাখা দরকার, এই কাটে শুধু ছেলেদের নয়, মেয়েদেরকেও বেশ ভালো দেখায়।

শর্ট কাট

এই স্টাইল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় তরুণদের কাছে। সব দিকের চুলই ছোট করে কেটে হেয়ার জেল দিয়ে স্টাইল করা যায়। একে অনেকে কক কাট বলে। দেশের বাইরে এটি আন্ডার কাট নামে পরিচিত।

ফেড কাট

এই স্টাইলে পিছনে ও কানের ওপরে চুল একদম থাকে না বলা চলে। কানের কমপক্ষে এক ইঞ্চি ওপর থেকে আর পিছনে মাথার অর্ধেক ওপর থেকে কাটা শুরু হয়।

মডার্ন পম্পাডর কাট

এই হেয়ার স্টাইলের ক্ষেত্রে মাথার মাঝখানের চুল লম্বা হবে। পাশের চুল ১-৩ মিলি লম্বা হবে। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো একবার চুল কেটে আসলে ১-২ মাস আর সেলুনে যেতে হবে না।

ক্লাসিক কোউফ কাট

ক্লাসিক কোউফ খুবই জনপ্রিয় ও ট্রেন্ডি একটি চুলের কাট। যারা চুল একটু বড় রাখেন, তাদের জন্য এই ধরনের কাট বেশ ভালো। সামনের চুল লম্বা রাখতে হবে ৭ ইঞ্চির মতো। আর পাশের চুল লম্বা হবে ২ ইঞ্চির মতো। কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্লাসিক কোউফ সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি হেয়ার স্টাইল।

ছেলেদের দাড়ি

স্টাবড বিয়ার্ড স্টাইল

আংশিক দাড়িতেই চেহারাতে আসবে পরিপক্ক ভাব। এই স্টাইলের জন্য শেভ করার একদিন পরে যতটুকু দাড়ি উঠে সেটাই সবচেয়ে উপযুক্ত। এই স্টাইলের জন্য তাই শেভ করে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারেন। এই লুক মেইনটেইন করাও সহজ। কয়েকদিন পরে কিছুটা ট্রিম করে নিলেই হবে। খেয়াল রাখবেন ট্রিম করার সময় যেন ট্রিমার ১ থেকে ৩ মিলিমিটার সেটিংসে থাকে। এই স্টাইলের জন্য আপনাকে সেলুনে গিয়ে মোটা অংকের টাকাও খরচ করতে হবে না।

নামের মতোই এই স্টাইলে একইসঙ্গে দাড়ি ও গোঁফ একত্রে কাঠামোয় আনতে হবে। এই স্টাইলের বিভিন্ন রকমের ভ্যারিয়েশন রয়েছে। দাড়ির সঙ্গে মোটা কিংবা চিকন গোঁফ রাখতে পারবেন। মূলত চেহারাতে যেই স্টাইল ভালো লাগে সেটা করতে পারেন। এই স্টাইলে আপনার পুরো ফেস জুড়ে দাড়ি আবৃত থাকবে। তাই অবশ্যই আপনাকে জানতে হবে কীভাবে ফেসিয়াল হেয়ারের যত্ন নিতে হয়। নিয়মিত যত্ন আর মাঝে মধ্যে যত্ন নিলেই এই স্টাইল আপনার জন্য নিখুঁত।

স্পার্টান বিয়ার্ড

করোনার সময় যখন সবাই লকডাউনে ছিল তখন চুল বড় করাটা অনেকটাই স্টাইলে রুপান্তরিত হয়ে যায়। এখনো লম্বা দাড়ি ফ্যাশনের শীর্ষে। এই স্টাইলে কেবল ধৈর্য ধরে দাড়ি বড় করাটাই সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। নয়তো সবকিছুই সহজ। এই স্টাইল মেইনটেইন করতে হয় না বললেই চলে। কিছুটা ধৈর্য থাকলেই এই গৃহত্যাগী স্টাইল আপনার জন্য।

ক্লাসিক বিয়ার্ড স্টাইল

সিম্পল ও মডার্ন লুকের জন্য ক্লাসিক বিয়ার্ড স্টাইলের কোনো জুড়ি নেই। এখানে দাড়ির পাশে একেবারে শার্প লাইন থাকে বলে মুখে একটা কাঠামো আসে। মাঝারি থেকে লম্বা স্টাইলে এই দাড়ি ভালো লাগে। তবে যদি মডার্ন লুক চান তাহলে অবশ্যই দাড়ি কিছুটা ছোট করে কাটবেন।

দ্য বিয়ার্ড ফেড

এই স্টাইল যদি নির্বাচন করেন তাহলে অবশ্যই সেটি সেলুনে ট্রাই করবেন। এই স্টাইল কিছুটা জটিল হওয়ায় বাসায় ট্রাই করলে ভালো নাও হতে পারে। মুখে চোয়াল অথবা গালের পাশে কিছুটা হালকা ও নিচু হতে হতে কিছুটা ঘন দাড়ির এই ফ্যাশনটি ইদানিং বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে।

ছবি সৌজন্যে: জাবেদ হাবিব সেলুন, গুলশান ২

লেখাটির পিডিএফে দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ফ্যাশন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

thirteen − nine =