সালেক সুফী
সফরকারী আয়ারল্যান্ডে ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে কাল মীরপুরে শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হেসে খেলে দাপুটে ১৫৪ রানের বিশাল জয় তুলে নিয়েছে। টস জয়ী হয়ে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ ২৫২/৪ উইকেট নতুন মাইল ফলক স্কোর গড়েছিল। জবাবে ব্যাটিং করতে এসে ঘূর্ণি উইকেটে বাংলাদেশের নারীদের বাহারি স্পিন আক্রমণের মোকাবিলায় ৯৮ গুটিয়ে যায় সফরকারী দল। বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত ভাবেই তুলে নেয় বিশাল জয়।
দুই দলের খেলোয়াড়দের মান তুলনায় বলা যায় বাংলাদেশ সিরিজ ধবল ধোলাই অর্জন করাটাই হবে স্বাভাবিক পরিণতি। অতিথি দল পরিবেশ মানিয়ে নিয়ে পরের ম্যাচ গুলোতে হয়তো ভালো করবে। কিন্তু অপেক্ষাকৃত অনেক শক্তিশালী এবং প্রস্তুত বাংলাদেশ সিরিজ জয় করবে অনেকটাই নিশ্চিত করে বলা যায়। বাংলাদেশ পুরুষ দলের সঙ্গিন অবস্থায় নারীদের জয় হয়তো কিছুটা উদ্দীপনা যোগায় বাংলাদেশ পুরুষ দলকে।
কাল সকালে উইকেটে কিছু ময়শ্চার ছিল। যেভাবে দুই ওপেনার দেখে শুনে বলের গুনাগুন বিচার করে ব্যাটিং করেছে সেখান থেকে পুরুষ দলের শেখার অনেক কিছু আছে। ১৮.৪ ওভারে ৫৯ রান সংগ্রহ করে ফারজানা হক (৬১) আর মুর্শিদা খাতুন (৩৮) দলের ভিত্তি গড়ে দেয়ার পর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ফারজানাকে সঙ্গী করে শারমিন সুপ্তা (৯৬) ১০৪ রানের জুটি গড়ে।
সুপ্তার ইনিংস ছিল নানা কারণেই ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণের মূল প্রতিপাদ্য। ১৪টি দর্শনীয় বাউন্ডারি ছিল ওর ইনিংসে। একটি শত রান ওর প্রাপ্য ছিল। দুর্ভাগ্য হয় নি। শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি ২৮ বলে ২৮ রানের গতিময় ইনিংস খেলে।
২৫২/৪ রানের বিশাল ইনিংসেও যে জিনিসটি চোখে পড়েছে বাংলাদেশের নারীরা অতিমাত্রায় অনসাইডে স্কয়ার লেগ এবং মিড্ উইকেটে খেলতে সব সময় চেষ্টা করে। অনেক ক্ষেত্রেই উইকেটে স্থিতু হয়ে ক্যাচ তুলে উইকেট বিলিয়ে দেয়। ব্যাটসম্যানদের উইকেটের চারদিকে স্ট্রোকস খেলা, স্ট্রাইক রোটেট করা আরো পরিশীলিত হওয়া প্রয়োজন।
আয়ারল্যান্ড দল ভিন্ন পরিবেশে ফিল্ডিং করে বাংলাদেশ দলের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং দেখে হয়তো ভড়কে গিয়েছিল। তদুপরি শুরুতেই মারুফা পর পর দুই বলে উইকেট তুলে নিয়ে ওদের ব্যাকফুটে ঠেলে দেয়। ধীর হয়ে আসা উইকেটে বাঁক নেওয়া শুরু করে।
বাংলাদেশের চার জন উঁচু মানের স্পিনারকে সামাল দেওয়া অতিথি দলের পক্ষে সহজ ছিল না। তদুপরি তুখোড় ফিল্ডিং করে জয়ের নেশায় মাতোয়ারা বাংলার বাঘিনীরা। দুটি রান আউট অতিথি দলকে পিছিয়ে দেয়। ৯৮ রানে সাঙ্গ হয় ইনিংস। সুলতানা (২৩/৩), নাহিদা (২৩/৩) আর মারুফা (১৮/২) উইকেট তুলে নিয়ে আইরিশ দলের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়।
বাংলাদেশ দলের নারীদের প্রশংসা করতেই হবে। অনেক সীমিত সুযোগের মধ্যেও ওরা নিয়মিত নিজেদের প্রমাণ করে চলেছে। দেশে বিদেশে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত খেলার সুযোগ পেলে বাংলার নারীরা দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে ভরসা আছে।
স্বস্তির বিষয় ছিল ফারজানা হক আর শারমিন সুপ্তার ব্যাটিং। ব্যাটিং সমস্যার কারণে বেশ কিছু দিন নিগার সুলতানাকে অনেকটা একই দলকে বহন করতে হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। বাংলাদেশের উইকেটে ২০০ প্লাস রান করলে শক্তিশালী বোলিং অনেক ম্যাচ জেতাবে বাংলাদেশকে।