বৃষ্টিতে মাঠ ভেজা থাকায় পাঁচ ঘন্টার পর শুরু হয় বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার দুই ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। প্রথম দিন এক সেশনে খেলা হয়েছে মাত্র ৩০ ওভার। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ২ উইকেটে ৬৯ রান তুলে দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। দু’বার জীবন পেয়ে ৫০ রানে অপরাজিত আছেন ওপেনার সাদমান ইসলাম। একবার জীবন পেয়ে শাহাদাত হোসেন অপরাজিত আছেন ১২ রানে। খবর বাসস
জ্যামাইকার কিংস্টনে গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় টস এবং রাত ৯টায় টেস্ট শুরুর কথা ছিলো। কিন্তু আগের কয়েক দিনের বৃষ্টিতে মাঠ ও উইকেটের আশেপাশে ভেজা থাকায় নির্ধারিত সময় টস ও খেলা শুরু হতে পারেনি। মাঠ খেলার উপযোগী করে তুলতে পাঁচ ঘন্টা সময় লেগেছে মাঠ কর্মীদের। ফলে বাংলাদেশ সময় রাত দেড়টায় টস ও ২টায় প্রথম দিনের খেলা শুরু হয়।
প্রথম টেস্টের মত এবারও টস ভাগ্যে জয় পান বাংলাদেশ অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ। প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। প্রথম টেস্টের একাদশ থেকে দু’টি পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ। জাকির হাসান ও পেসার শরিফুল ইসলামের জায়গায় একাদশে সুযোগ পান সাদমান এবং নাহিদ রানা। একাদশে কোন পরিবর্তন করেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
প্রথম ৪ ওভারে দেখেশুনে খেলে ৭ রান তুলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও সাদমান। পঞ্চম ওভারের শেষ বলে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অভিজ্ঞ পেসার কেমার রোচ। উইকেটের পেছনে ক্যারিবীয় উইকেটরক্ষক জশুয়া ডা সিলভাকে ক্যাচ দেন ১২ বলে ৩ রান করা জয়।
তিন নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকতে পারেননি মোমিনুল হক। রোচের অফ স্টাম্পে আউটসুইং ডেলিভারিতে ডিফেন্স করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। শূন্যতে আউট হওয়ায় লজ্জার রেকর্ডের মালিক হয়েছেন মোমিনুল। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে এখন সবচেয়ে বেশি ১৭বার শূন্যতে আউট হলেন তিনি।
সপ্তম ওভারে ১০ রানে ২ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। এ অবস্থায় চাপ আরও বাড়তে পারতো টাইগারদের। পেসার আলজারি জোসেফের করা দশম ওভারের শেষ বলে দ্বিতীয় স্লিপে সাদমানের ক্যাচ ফেলেন অ্যালিক আথানাজে।
জীবন পেয়ে শাহাদাতের সাথে জুটি গড়ায় মনোযোগ দেন সাদমান। ১৭তম ওভারে বাংলাদেশের রান ৫০ স্পর্শ করে।
১৯তম ওভারে দ্বিতীয়বারের মত জীবন পান সাদমান। পেসার জাস্টিন গ্রেভসের ডেলিভারিতে শর্ট কাভারে সাদমানের ক্যাচ ফেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রার্থওয়েট।
ব্যক্তিগত ১৫ ও ৩৫ রানে সাদমানের ক্যাচ ফেলার পর অন্যপ্রান্তে থাকা শাহাদাতকেও জীবন দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
২০তম ওভারে পেসার জেইডেন সিলেসের বলে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন শাহাদাত। হাত বাড়িয়ে বল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি আথানেজ। তার হাতে লেগে বল চলে যায় প্রথম স্লিপে কাভেম হজের কাছে। বলে হাত ছোঁয়ালেও, বল তালুবন্দি করতে পারেননি হজও। এতে ৮ রানে জীবন পান শাহাদাত।
২০ ওভারের মধ্যে তিনবার জীবন পেয়ে দিনের বাকী সময় আর কোন সুযোগ দেননি সাদমান ও শাহাদাত। ২৭তম ওভারে জুটিতে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তারা। ২৯তম ওভারে স্পিনার হজের দ্বিতীয় বলে লং-অন দিয়ে ছক্কা মেরে হাফ-সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যান সাদমান। পরের ডেলিভারিতে ১ রান দিয়ে ২০তম টেস্টে পঞ্চম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান ৯৩ বল খেলা সাদমান। এরমধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনটি অর্ধশতক করেছেন তিনি।
হাফ-সেঞ্চুরির পর শাহাদাতকে নিয়ে দিন শেষ করেছেন সাদমান। ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ১০০ বলে ৫০ রানে অপরাজিত থাকেন সাদমান। ১টি বাউন্ডারিতে ৬৩ বলে ১২ রানে অপরাজিত আছেন শাহাদাত। রোচ ২০ রানে ২টি উইকেট নেন।
এ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে টানা সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলার রেকর্ড গড়েছেন অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েট। ক্যারিবীয়দের হয়ে টানা ৮৬ ম্যাচ খেলে কিংবদন্তি স্যার গ্যারি সোবার্সকে পেছনে ফেলেন তিনি। ২০১৪ সালের ১৬ জুন থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সব টেস্ট খেলেছেন ব্র্যাথওয়েট। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৯৬টি টেস্ট খেলেছেন তিনি।
টেস্ট ইতিহাসে টানা ম্যাচ খেলার বিশ্ব রেকর্ড ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুকের। দেশের হয়ে টানা ১৫৯টি টেস্ট খেলেছেন তিনি। মোট ১৬১ টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ক্যারিয়ার শেষ করেছেন কুক।
সংক্ষিপ্ত স্কোর : (টস-বাংলাদেশ)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৩০ ওভারে ৬৯/২ (সাদমান ৫০*, শাহাদাত ২০*, রোচ ২/২০)।