ধারাবাহিক ক্রিকেট সাফল্যের জন্য ধৈর্য্য অপরিহার্য

সালেক সুফী

আধুনিক ক্রিকেটে ধারাবাহিক সাফল্য অর্জনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো উন্নয়ন, মেধা অন্নেষণ, সুদূরপ্রসারী পর্যায়ক্রমিক পরিশীলিত উন্নয়ন ছাড়া কোন সংক্ষিপ্ত পথ নেই। বাংলাদেশ ক্রিকেট কোন ফরম্যাটেই ধারবাহিক সাফল্য অর্জন করতে পারে না। আর কালে ভদ্রে সাফল্য আসলেই সেটি নিয়ে আমাদের স্বপ্নের পরিধি বিস্তৃত হয়।

এই সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয়ের পর বাংলাদেশ পর্যায়ক্রমিক পরাজয়ের কালো গহ্বরে নিপতিত ছিল। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা বাংলাদেশের ক্রিকেট সম্ভ্রম নিয়েই ছিনিমিনি খেলেছে। অবশেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের খর্ব শক্তির টেস্ট দলের কৃতিত্বপূর্ণ জয় এলো কঠিন খরার পর শান্তির বারী বর্ষণ হয়ে।

ভেবে দেখুন সাকিব, মুশফিক, শান্ত নানা কারণে দলে নেই। মূল ব্যাটসম্যান মোমিনুল দুই ইনিংসে করেছে শূন্য রান। সেই অবস্থায় বিশ্বের অন্যতম দ্রুততম উইকেটে স্বাগতিক দলকে ১০১ রানের ব্যাবধানে হারানো দলকে এই জয়ে মোটিভেটেড রাখার কৃতিত্ব অবশ্যই টিম ম্যানেজমেন্ট পেতে পারে। যদি আবিষ্কার করা জয় কোন জিওন কাঠির ছোয়ায় পাল্টে গেলো বাংলাদেশ তাহলে সেটিকে পুঁজি করে এগিয়ে যেতে হবে এখন। তবে একটি জয় নিয়ে স্বপ্নের সীমানা যেন আকাশ ছুঁয়ে না যায়।

স্বীকার করতেই হবে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ এখন বিশ্বের সেরা দেশগুলো থেকে খুব একটা পিছিয়ে নেই। তাসকিন, হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা, শরিফুল, তানজীম সাকিব ছাড়াও আছে এবাদত, খালেদ। সাকিব আল হাসান অনিশ্চিত হয়ে পড়ে স্পিন আক্রমণ বিকল্প কিছু সীমিত হলেও মিরাজ, তাইজুলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নাসুম, লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন।

এখন দেখতে হবে পাইপ লাইনে বিশ্বমানের ব্যাটসম্যান কেন উঠে আসছে না। কেন তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাদের বিকল্প বিকশিত হচ্ছে না? এই টেস্ট সিরিজে যেভাবে লেট্ মিডল অর্ডারে জাকের আলী অনিক সাহসের সঙ্গে ব্যাটিং করেছে ওকে সুযোগ দেওয়া হলে ক্রমান্বয়ে মাহমুদুল্লার বিকল্প হয়ে উঠতে পারে।

মেহেদী মিরাজ অচিরেই প্রমাণিত হতে পারে ম্যাচজয়ী অল রাউন্ডার হিসাবে। বাংলাদেশের বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটে মেধা সম্পন্ন ব্যাটসম্যান আছে। ওদের মেধা বিকাশের জন্য পরিচর্যা এবং যথাসময়ে যথাযথ ফরম্যাটে সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে ঘাটতি নিশ্চয় আছে।

আমরা দেখি একই পর্যায়ে একই মানের খেলোয়াড় ভারত, শ্রীলংকা, পাকিস্তান জাতীয় দলে বিকশিত হলে বাংলাদেশে হারিয়ে যায়। এই বিষয়টি কেন হয়, কি কারণে বাংলাদেশের তরুণরা  যসওয়াল, বাবার আজম, কামিন্দু মেন্ডিজ, শুভমান গিল হতে পারে না ?

বাংলাদেশ সম্প্রতি কোচিং কৌশল পরিবর্তন আনতে শুরু করেছে।  দেশীয় কোচদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে দেশীয় ক্রিকেটের অবকাঠামো আমূল পরিবর্তন করা, আইসিসির সহায়তা নিয়ে ক্রিকেট কোচদের গুণগত উন্নয়ন, দেশীয় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে ভারত, শ্রীলংকার মত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া ক্রিকেটে বাংলাদেশের ধারাবাহিক সাফল্যের পথ উন্মুক্ত করবে।

একই সঙ্গে ক্রিকেট নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনিয়ন্ত্রিত উন্মাদনায় রাশ টেনে ধরতে হবে। ভিউ ব্যাবসায়ীদের জন্য কোড অফ কন্ডাক্ট সৃষ্টি করতে হবে। বাংলাদেশকে ক্রিকেটের সকল ফরম্যাটে ধারাবাহিক সাফল্য অর্জন করতে হলে সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে নিয়ে সম্মিলিত ভাবে ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হবে। সাফল্যের কোন সংক্ষিপ্ত পথ নেই।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

20 + fourteen =