মাসুম আওয়াল
লাগলো দোলা ওই দেখো ওই শিশু-বুড়োর মন দেশে,
মন মজেছে নওগাঁ জেলার দারুণ প্যাড়া সন্দেশে।
খাচ্ছে কারা খাচ্ছে সবাই, খেতে মোটেও মন্দ না।
শিশু-বুড়ো সবাই করে এই মিষ্টির বন্দনা।
নওগাঁ জেলার গাইয়ের দুধের স্বাদ পাবে এই মিষ্টিতে,
কিনতে হবে লিখে রাখো সদাই কেনার লিস্টিতে।
কীভাবে এই প্যাড়া বানায় হবে সবই জানানো,
মিষ্টি দুধের ক্ষীর দিয়ে হয় মজার প্যাড়া বানানো।
মিলবে প্যাড়া নওগাঁ ছাড়াও অন্যান্য জেলাতে,
এই মিষ্টির সঙ্গে সেসব পারবে না কেউ মেলাতে।
চলো এবার সোনার কাঠি ছোঁয়াই রূপার কাঠিতে,
প্যাড়া সন্দেশ কে এনেছে বাংলাদেশের মাটিতে।
মন জুড়ানো এই মিঠাইয়ের কোথায় আদি বাড়ি-ঘর
জানতে হবে এ সন্দেশের কেইবা প্রথম কারিগর।
নাটোর জেলায় গিয়েছিলাম মিষ্টি পাগল বাহিনী,
একটা বুড়ো শুনাচ্ছিল সেই মিষ্টির কাহিনী।
একশো বছর আগের কথা ঘটনা বেশ পুরানো,
ইতিহাসের পাতা থেকে হচ্ছে মানিক কুড়োনো।
মহেন্দ্রী দাস এই মিষ্টির প্রথম আদি কারিগর,
দূর ভারতের বিহারে তার ছিল আসল বাড়ি-ঘর।
মহেন্দ্রী দাস ময়রা ছিলেন, বিহারের এক নবাবের,
ছিলেন ধ্যানী হাসি খুশি ভীষণ শান্ত স্বভাবের।
একদিন এক যুদ্ধে গিয়ে নিহন হন রাজা যে,
মহেন্দ্রী দাস একা একা পেলেন কঠিন সাজা যে।
পেটের দায়ে মন হারালো দুখি লোকের বহরে,
চলে এলেন নওগাঁ জেলার কালীতলা শহরে।
এখানে তার কাটছিল দিন অভাব অনটনে রোজ,
নতুন করে কী করা যায় মনে মনে চলে খোঁজ।
মহেন্দ্রী দাস এলোমেলো, কাটছিল দিন বৈরী,
এমন সময় করেন প্রথম প্যাড়া সন্দেশ তৈরি।
মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে বিক্রি করেন ওইসব,
খাচ্ছে সবাই এতেই যেন লুকিয়ে আছে শৈশব।
দেব-দেবীদের আরাধনার প্রসাদেও তা লাগছে,
মহেন্দ্রী বেশ ভালো বোঝে তার ব্যবসা জাগছে।
এবার কালীতলার মোড়ে একটা দোকান খুললেন,
জমলো দোকান মহেন্দ্রী দাস দুঃখ ব্যথা ভুললেন।
মন্দিরটার পাশেই দোকান সবাই সেদিক ছুটলো,
‘নওগাঁর প্যাড়া সন্দেশ’ ভালোই জমে উঠলো।
এলাকাতে নেই সমাগম লোক ছিল খুব অল্প,
স্বাদ ও গুণের কারণে আজ ছড়িয়েছে তার গল্প।
দেশ বিদেশে একই সাথে সেরা প্যাড়া সন্দেশ,
খেতে খেতে জুড়িয়ে যায় সব মানুষের মনদেশ।
মহেন্দ্রী দাস বুড়ো হলে বলেন, দোকান চাস কে
দোকানটা দেন প্রিয় ছেলে ধীরেন্দ্রনাথ দাসকে।
ধীরেন্দ্রনাথ দোকান চালান একটা জীবন ভর,
বিমল মহন্তকে তিনি বানান কারিগর।
ধীরেন্দ্রনাথ-বিমলও নেন যখন অবসর,
ব্যাবসা ছেড়ে অন্যখানে যখন বাঁধেন ঘর।
তত দিনে তিরিশ বছর গিয়েছিল কেটে,
দোকানটাকে বিক্রি করে দূরে গেলেন হেঁটে।
সুরেশ চন্দ্র কেনেন দোকান তিরিশ বছর পর,
নারায়ণ চন্দ্র দাস হয়েছেন নতুন কারিগর।
সেই দোকানের মালিক এখন বৈদ্য রতন দাস,
নারায়ণ চন্দ্রই মিষ্টি বানান মৌ মৌ চারপাশ।
অনেক হলো গল্প চলো নতুন কিছু জানি,
এই মিষ্টি গড়তে লাগে দুধ, চিনি আর পানি।
এক কেজি সন্দেশ বানাতে সাত কেজি দুধ লাগে,
দুইটি ধাপে সন্দেশ হয় জানতে হবে আগে।
প্রথম ধাপে, দুধ ও পানি একত্রে মিশ করে,
কড়াইতে জ্বাল দিতে হবে অনেক সময় ধরে।
দুধ ও পানি ফুটবে যখন ধীরে ধীরে নাড়ো,
এক সময় ক্ষীর তৈরি হলে জ্বাল করাটা ছাড়ো।
দ্বিতীয় ধাপ শুরু হলো কী করতে হবে
বন্ধু তুমি দাও মনযোগ বলছি শোনো তবে।
দুধের সে ক্ষীর কড়াই হাতায় জড়িয়ে আসার পরে,
থামিয়ে চুলো এবার সেটা নিয়ে এসো ঘরে।
জড়িয়ে যাওয়া গরম সে ক্ষীর হাতের তালুই দিয়ে,
রোল করে নাও জোড়া লাগাও সামান্য চাপ দিয়ে।
হালকা চাপেই প্যাড়া সন্দেশ তৈরি হয়ে যাবে,
কী মজাদার মিষ্টি হলো কখন তুমি খাবে!
হালকা পাতলা খয়েরি রঙ প্যাড়া সন্দেশ কিনছি,
চওড়াতে হাফ ইঞ্চি এবং লম্বাতে দুই ইঞ্চি।
এক কেজিতে আশি থেকে বিরাশিটা ধরবে,
কে খেয়েছো প্যাড়া সন্দেশ হাতটা উঁচু করবে।
খাওনি যারা, যারা অনেক ঘুরতে ভালোবাসো,
রইলো দাওয়াত সময় করে নওগাঁ চলে এসো।
লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ছন্দে ছন্দে