জলবায়ু-সহিষ্ণু উন্নয়নে ১.১৬ বিলিয়ন ডলার অনুমোদন বিশ্বব্যাংকের

বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালনা পর্ষদ বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন, পানি ও স্যানিটেশন সেবা বৃদ্ধি এবং আরও সবুজ ও জলবায়ু-সহিষ্ণু উন্নয়নের জন্য ১.১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তিনটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। খবর বাসস

বাংলাদেশ ও ভুটান বিষয়ক বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আব্দুলায়ে সেক বলেছেন, ‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি এবং দেশটি দূষণের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। প্রতিটি খাতে জলবায়ু সহনশীলতার বৃদ্ধি এবং দূষণ মোকাবেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অগ্রাধিকার হয়ে উঠেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই নতুন অর্থায়ন বাংলাদেশের জনগণের জন্য স্বাস্থ্য, পানি ও স্যানিটেশন সেবার মতো প্রয়োজনীয় সুবিধা আনবে এবং পরিষ্কার, জলবায়ু-সহিষ্ণু এবং টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি তৈরি করবে।’

আজ এখানে বিশ্বব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় বাংলাদেশ সবুজ ও জলবায়ু সহনশীল উন্নয়ন ক্রেডিটের (সেকেন্ডে বাংলাদেশ গ্রীন রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট ক্রেডিট) জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে, যা দেশের সবুজ ও জলবায়ু-সহিষ্ণু উন্নয়নের রূপান্তরকে সহায়তা করবে।

এই অর্থায়ন নীতি সংস্কারকে সমর্থন করবে, যা স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে সবুজ ও জলবায়ু-সহিষ্ণু কার্যক্রমের জন্য জনপরিকল্পনা, অর্থায়ন এবং বাস্তবায়ন উন্নত করবে এবং গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন খাতে পরিচ্ছন্ন এবং রির্সোস-ইফিসিয়েন্ট উৎপাদন ও সেবাকে উৎসাহিত করবে।

এই ঋণের পূর্বশর্ত হিসেবে, পরিকল্পনা কমিশন মধ্য-মেয়াদি বাজেট কাঠামোর সাথে সমন্বয় করে গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর জন্য দীর্ঘ-মেয়াদি জন বিনিয়োগ কর্মসূচির নির্দেশিকা গ্রহণ করেছে।

এছাড়া এ অর্থায়ন বায়ু দূষণ কমানো, পরিবেশগত আইন কার্যকর করা, কার্বন বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়ানো, টেকসই পানি ও স্যানিটেশন সেবা সম্প্রসারণ, বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০-এর দক্ষতা উন্নয়ন এবং জলবায়ু-সহিষ্ণু ও টেকসই পরিবেশ এগিয়ে নেওয়ার নীতি সমর্থন করে।

ডেল্টা পরিকল্পনা কার্যকর করতে পরিকল্পনা বিভাগ ডেল্টা অ্যাপ্রেজাল ফ্রেমওয়ার্ক গ্রহণ করেছে। অর্থায়নটি পরিবেশগত ও সামাজিক বিবেচনা অন্তর্ভুক্ত করে টেকসই সরকারি ক্রয়কে সহায়তা করবে।

এটি বিল্ডিং এবং যন্ত্রপাতির জ্বালানি সক্ষমতা উন্নত করতে এবং নির্মাণ খাতকে আরও পরিবেশবান্ধব করতে প্রণোদনা দেবে।

৩৭৯ মিলিয়ন ডলারের স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং জনসংখ্যা খাত উন্নয়ন কর্মসূচি সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে মানসম্মত স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবা উন্নত করতে এবং জলবায়ু-সহিষ্ণু স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।

এটি প্রায় ৫.১ মিলিয়ন মানুষের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা সেবা প্রদান করবে। কর্মসূচিটি সরকারি হাসপাতালে স্বাভাবিক ও সিজারিয়ান প্রসবের সংখ্যা বাড়ানোর মাধ্যমে মাতৃ ও নবজাতক মৃত্যুহার কমাতে সাহায্য করবে।

এটি জলবায়ুর জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোর দুর্বল বা দুঃস্থ নারীদের সেবার আওতায় আনবে। এছাড়া, এটি উচ্চ রক্তচাপ ও অন্যান্য রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার মতো স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা শক্তিশালী করবে।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের পাশাপাশি, গ্লোবাল ফাইন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি ফর উইমেন, চিলড্রেন অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্টস (জিএফএফ) সরকারকে শিশু পুষ্টি, কিশোর স্বাস্থ্য, গুণগত মাতৃ ও নবজাতক সেবা, ডেটার ব্যবহার এবং সমন্বয়কে অগ্রাধিকার দিতে ২৫ মিলিয়ন ডলারের অনুদান দিচ্ছে।

২৮০ মিলিয়ন ডলার চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্প নতুন এবং পুন:স্থাপিত পাইপলাইনে পানি সংযোগের মাধ্যমে চট্টগ্রামে ১০ লাখেরও  বেশি মানুষকে নিরাপদ পানি সরবরাহ করবে।

এটি নতুন করে প্রায় ২ লাখ পরিবারকে পানি সংযোগ লাইন দেবে এবং নিম্ন আয়ের প্রায় ১ লাখ মানুষের জন্য উন্নত স্যানিটেশন সেবা প্রদান করবে।

প্রকল্পটি বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক উদ্যোগের অংশ, যা ২০৩৫ সালের মধ্যে এই অঞ্চলের প্রায় ১০ কোটি মানুষকে পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি (ডব্লিইএএসএইচ) পরিষেবা সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।

এটি চট্টগ্রাম ওয়াসার কার্যক্রমের দক্ষতা এবং আর্থিক স্থায়িত্ব উন্নত করবে এবং পানি অপচয় যেমন লিকেজ, মিটারিং ত্রুটি এবং অবৈধ সংযোগ মোকাবেলা করবে।

প্রকল্পটি পানির অপচয় কমাতে নতুন পানির মিটার স্থাপন করবে এবং ৪৬টি স্মার্ট ডিস্ট্রিক্ট মিটারড এরিয়া (ডিএমএ) চালু করবে, যা নির্ভরযোগ্য পানি সরবরাহ, লিকেজ শনাক্তকরণ এবং পানি ব্যবহারের তাৎক্ষণিক র্ট্যাকিং নিশ্চিত করবে।

এটি সিস্টেম শক্তিশালী করতে, ট্যারিফ রোডম্যাপ প্রণয়নে সহায়তা করতে এবং দীর্ঘমেয়াদি অবকাঠামো ও ব্যবসা পরিকল্পনা, ডেটা ব্যবস্থাপনা, সম্পদ ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ কৌশল এবং দুর্যোগ প্রস্তুতির জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসার সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশকে প্রথম উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে সমর্থন দেওয়া অংশীদারদের মধ্যে বিশ্বব্যাংক অন্যতম।

এরপর থেকে বিশ্বব্যাংক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সমিতির (আইডিএ) অনুদান, সুদমুক্ত ঋণ এবং রেয়াতি ঋণের মাধ্যমে ৪৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থায়ন করেছে, যা দেশের উন্নয়ন অগ্রাধিকার মোকাবেলায় সাহায্য করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের সুদমুক্ত ঋণের অন্যতম বৃহত্তম প্রাপক দেশ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

8 − 5 =