ধীর গতির শুরুর পর সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ম্যাচের নাটাই নিজেদের হাতে নিয়েছিল ফরচুন বরিশাল। তবে জয় থেকে যখন মাত্র ৩৪ রান দূরে তখন এক ওভারেই তিন উইকেট নিয়ে চাপ বাড়িয়ে দেয় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। কিন্তু যেই দলে জিয়াউর রহমান ও ডোয়াইন ব্রাভোর মতো হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান ক্রিজে থাকেন তাদের আর ভয় কিসের?
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) উদ্বোধনী ম্যাচে চট্টগ্রামকে ৪ উইকেটে হারিয়ে শুভসূচনা করে সাকিবের দল বরিশাল। শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চট্টগ্রামের দেওয়া ১২৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৮ বল বাকি থাকতে বরিশাল ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়ে।
মুকিদুল ইসলামের করা ১৭তম ওভারে ১৮ রান নিয়ে কার্যত ম্যাচ বের করে নিয়ে আসেন জিয়া। শেষ তিন ওভারে প্রয়োজন হয় মাত্র ১৮ রান। ১৮তম ওভারের প্রথম বলেই শরিফুল ইসলামকে চার মারেন ব্রাভো। ২ চার ১ ছয়ে ১২ বলে ১৯ রান করে জিয়া ও ১০ বলে ১২ রান করে ব্রাভো অপরাজিত থাকেন। ব্রাভো ক্রিজে আসেন ১৫তম ওভারে আর জিয়া পরের ওভারে।
শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি বরিশালের। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে আসে প্রথম চার। মাত্র ১১ রান আসে প্রথম চার ওভার থেকে, ২৪ বলের মধ্যে ১৪টিই ডট। এমন ধীর গতির শুরুর পর মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের কল্যাণে রানের চাকা থাকে সচল। ১৫তম ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়লেও শেষ পর্যন্ত জয়ের জন্য বেগ পেতে হয়নি।
ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ফিরলে তিনে নেমে ব্যাট হাতে রীতিমত সংগ্রাম করেছেন সাকিব আল হাসান। পুরো সময়টা জুড়ে ছিলেন এলোমেলো, ব্যাটে-বলে সংযোগ হচ্ছিল না। মিরাজকে মিডউইকেটে চার মারার পরের বলেও ব্যাট চালিয়েছেন, কিন্তু দুর্ভাগ্য, বোল্ড হয়ে ফেরেন সাজঘরে। ২ চারে ১৬ বলে ১৩ রান করেন।
ক্রিজে থাকা আরেক ওপেনার সৈকত আলীর সঙ্গে এবার জুটি গড়েন তৌহিদ হৃদয়। সিঙ্গেলস-ডাবলস খেলে দুজনে বলে-রানে সমান রাখার চেষ্টা করেছেন। ১৭ বলে ১৬ করে তৌহিদ ফেরেন মুকিদুল ইসলামের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে। ভেঙে যায় ৩৪ রানের জুটি।
তৌহিদ ফিরলে সৈকতের সঙ্গী হন ইরফান শুক্কুর। দুজনে রানের চাকা সচল রাখেন দারুণভাবে। সিঙ্গেলস-ডাবলের সঙ্গে ছিল ওভার বাউন্ডারিও। দারুণ খেলতে থাকা এই জুটি থামিয়ে দেন মিরাজ। পরপর ফেরান সৈকত ও ইরফানকে। একই ওভারে রানআউট হয়ে ফেরেন সালমান হোসেন। তিন উইকেট হারানোর চাপ উড়ে যায় জিয়া-ব্রাভোর ইনিংসে। ৩৫ বলে সর্বোচ্চ ৩৯ রান আসে সৈকতের ব্যাট থেকে। ইরফান করেন ১৩ বলে ১৬ রান।
আন্তর্জাতিক ও স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো মিরাজ ৪ উইকেটের দেখা পেয়েছিলেন। এর আগে মোট ৯৯ ম্যাচে তার সর্বোচ্চ উইকেট ছিল ২টি। আজ নিজেকে ছাড়িয়ে যান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হাসতে পারেননি। ৪ ওভারে ১৬ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন তিনি। হন ম্যাচসেরাও। এ ছাড়া মুকিদুল নেন ১টি উইকেট।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে নির্ধারিত ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে চট্টগ্রাম তোলে মাত্র ১২৫ রান। ব্যাটসম্যানদের আসা যাওয়ার মিছিলে ব্যতিক্রম ছিলেন অলরাউন্ডার বিনি হাওয়েল। দেশি-বিদেশি অন্য ব্যাটসম্যানরা যেখানে খাবি খেয়েছেন সেখানে রানের ফোয়ারা ছুটিয়েছেন তিনি। আলজারি জোসেফের করা ১৯তম ওভারে নিয়েছেন ১৬ রান! ৩টি করে চার-ছড়ে শেষ পর্যন্ত তিনি থামেন ২০ বলে ৪১ রান করে। এ ছাড়া কোনো ব্যাটসম্যান পেরোতে পারেনি ২০ রানের ঘর।
প্রথম ৫ ব্যাটসম্যানের মধ্যে একমাত্র লড়াই করেছিলেন উইল জ্যাকস। তবুও নামের সঙ্গে সুবিচার করতে পারেননি এই বৃটিশ ব্যাটসম্যান। টি-টোয়েন্টিতে তার স্ট্রাইক রেট দেড়শর বেশি (১৫৪.৮২)। আজ ২০ বলে ১টি ছয়ের মারে করেন ৬ রান। বাকি চার ব্যাটসম্যান লুইস, আফিফ হোসেন, সাব্বির রহমান ও মেহেদি হাসান মিরাজ আউট হয়েছেন দুই অঙ্কের ঘর ছোঁয়ার আগেই।
এরপর খেলার হাল ধরার চেষ্টা করেন শামীম হোসেন পাটোয়ারি ও নাইম ইসলাম। বেশ কিছুদিন ধরেই শামীমের ব্যাটে দেখা যাচ্ছে রান খরা। আজও বিপদের মুহূর্তে হাল ধরতে পারেননি। আউট হন ২৩ বলে ১৪ রান করে। ইনিংসে ১টি চার ছিল, তাও এসেছে শর্ট থার্ডম্যান অঞ্চল দিয়ে ডোয়াইন ব্রাভোর মিসফিল্ডিংয়ে। শামীমের পর ক্রিজে থিতু হয়ে ফেরেন নাইম ইসলামও। তার ব্যাট থেকে আসে ১৮ বলে ১৫।
দারুণ বোলিং করেছেন তিন স্পিনার নাঈম হাসান, সাকিব ও জ্যাক লিনটট। নাঈম ২টি ও সাকিব-লিনটট ১টি করে উইকেট নেন। ৪ ওভারে নাঈম দিয়েছেন ২৫ রান ও আর সাকিব ৯ ও লিনটট দেন ১৮ রান। আলজারি জোসেফ সর্বোচ্ছ ৩ উইকেট নিয়েছেন ৩২ রান দিয়ে। সবচেয়ে খরুচে ছিলেন ব্রাভো, ৪ ওভারে দিয়েছেন ৩৯ রান! নিয়েছেন ১টি মাত্র উইকেট।
রাইজিংবিডি