শীতের পোশাকে রঙের ছোঁয়া

নাহিন আশরাফ

বাংলাদেশ গ্রীষ্ম প্রধান দেশ হবার কারণে স্বাভাবিকভাবে শীত যেহেতু অল্প সময় থাকে তাই এই সময়টা সবাই চেষ্টা করে নিজের মতো করে উপভোগ করার। শীতে আনন্দের পাশাপাশি অনেক সময় নিয়ে আসে বিষণ্নতা ও মলিনতা। গাছের ঝরে যাওয়া পাতা, থমথমে পরিবেশ, ঠান্ডা হাওয়া অনেক সময় মানুষের মন বিষণ্ন করে তোলে। আবার অপরদিকে মন ভালো করে দেওয়ার জন্য থাকে নানা রকম উৎসব, আনন্দ, পিকনিক, বিয়ে, দাওয়াত।

বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতের সময় দাওয়াত এবং অনুষ্ঠানের মাত্রা বেড়ে যায়। আর সকলেই চায় অনুষ্ঠানে নিজেকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে। তাই প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানের জন্য সঠিক পোশাক নির্বাচন করা জরুরি। শীতের মলিনতা কাটিয়ে নিজেকে সুন্দরভাবে উজ্জ্বল করে সাজিয়ে তুলতে সঠিক পোশাক ও সাজসজ্জা প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞদের মতে শীতের সময় বেছে নেওয়া উচিত উজ্জ্বল পোশাক। কারণ শীতের সময় আবহাওয়া থাকে কিছুটা মলিন। উজ্জ্বল পোশাক সাময়িক সময়ের জন্য হলেও আমাদের মধ্যে সজীবতা ফিরিয়ে আনবে। সারা বছর গরমের কথা চিন্তা করে অনেকেই বিভিন্ন উজ্জ্বল রঙ যেমন লাল, মেরুন, কমলা, হলুদ আলমারির কোণে রেখে দেয়। কিন্তু শীতের সময় চাইলেই আপনি সেসব পোশাক বের করে নতুন করে আবার নিজেকে সাজিয়ে তুলতে পারেন। উজ্জ্বল রঙের এই পোশাক সৌন্দর্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে উষ্ণতাও দিবে।

উজ্জ্বল রঙ শরীরকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে। আমাদের অজান্তেই রঙ মনের উপর বিশেষ প্রভাব ফেলে। উজ্জ্বল রঙ মনকে ফুরফুরে রাখতেও সাহায্য করে। শুধু দাওয়াত কিংবা অনুষ্ঠান নয় নিত্য দিনের ক্লাস অফিস যেকোনো কাজের জন্য হুটহাট বেছে নিতে পারেন উজ্জ্বল রঙের পোশাক। ফ্যাশনপ্রেমীদের জন্য শীতকাল কিন্তু বেশ প্রিয় একটি ঋতু। কারণ গরমের সময় অনেক পছন্দের পোশাক চাইলেও পরিধান করা যায় না। কিন্তু শীতের সময় যেকোনো রঙের যেকোনো ধরনের পোশাকই পরে ফেলা যায়। পোশাক দিয়ে স্টাইল করা যায়। তাই নিজের ফ্যাশন সেন্সকে তুলে ধরার জন্য শীতের জন্য অপেক্ষা করেন অনেকেই। আবার ঢাকায় কিন্তু তীব্র শীতের পরিমাণও কম থাকে। দেখা যায় দুপুরের দিকে গরম কিছুটা কম লাগলেও সন্ধ্যার পর ঠান্ডা আমেজ বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে সময় বুঝেও পোশাক নির্ধারণ করা জরুরি।

গরম হোক কিংবা ঠান্ডায় বর্তমানে সুতির পোশাক সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তাই সুতির পোশাকের মধ্যে নানা রকম এক্সপেরিমেন্ট করে ডিজাইনাররা সব ঋতুতে পরার উপযোগী করে তোলে। সুতির পোশাক নিত্যদিনের ব্যবহারসহ এখন যেকোনো উৎসব কিংবা অনুষ্ঠানেও মানুষ এটি নিশ্চিন্তে পরিধান করছে। একটা সময় মনে করা হতো সুতির পোশাক শুধুমাত্র নিত্যদিনের ব্যবহার কিংবা বাসায় পরিধান করার জন্য। কিন্তু এখন সুতির পোশাকের মধ্যে ডিজাইনাররা এমন সব নকশা করছেন এবং এমন সব কাটে তা তৈরি করা হচ্ছে যা যেকোনো ধরনের অনুষ্ঠানে ফ্যাশনেবল ভাবে নিজেকে তুলে ধরা যায়। তাই শীতের সময় বেছে নিতে পারেন মোটা সুতির পোশাক যাতে নানা ধরনের ব্লক এবং উজ্জ্বল রঙের নকশা রয়েছে। ব্লকের পোশাক আপনাকে উষ্ণ রাখবে এবং শীতের সময় সজীবতা দিবে।

বর্তমানে ট্রেন্ডে রয়েছে শর্ট কটন কুর্তি যা ফরমাল প্যান্টের সঙ্গে পরা হয়। নিত্যদিনের ক্লাস, অফিস ইত্যাদির জন্য তরুণীরা এসব পোশাক বেছে নিচ্ছেন। শীতের সময় শর্ট কুর্তির উপর পরতে পারেন কটি কিংবা রঙিন ব্লেজার। হালকা রঙের পোশাক পরিধান করতে চাইলে তার ওপর রঙিন ব্লেজার পরে ফেলতে পারেন। লাল, নীল, হলুদ ইত্যাদি রঙের ব্লেজার আপনার লুককে করবে আরও বেশি ফ্যাশনেবল। একটা সময় ব্লেজার মানে ছিল সাদা কিংবা কালো। কিন্তু এই ধারণা ভেঙে এখন বৈচিত্র্য আনার জন্য মানুষ বিভিন্ন রঙের ব্লেজার দিয়ে নিজের সাজ নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করছে।

শীতের সময় সাধারণত আমরা পোশাকের উপর ব্লেজার, সোয়েটার কিংবা শাল পরিধান করে থাকি। পোশাক হালকা রঙের পরতে চাইলে শাল, ব্লেজার কিংবা সোয়েটার বেছে নিতে পারেন উজ্জ্বল রঙের। শীতের পোশাকের মধ্যে এখন আর একঘেয়েমি দেখা যায় না। ডিজাইনাররা বিভিন্ন ধরনের রঙ, এমব্রয়ডারি এবং বিভিন্ন নকশার কাজ করছেন। যেকোনো বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য ভারী এমব্রয়ডারি করা ব্লেজার কিংবা পোশাক বেছে নেওয়া যেতে পারে। সাধারণত ভারী এমব্রয়ডারি পোশাক আমরা আলমারিতে তুলে রাখি গরমের জন্য। কিন্তু শীতই এর উপযুক্ত সময় ব্যবহার করার। নিত্যদিনের ব্যবহার করার জন্য বেছে নেওয়া যেতে পারে কটি। কটি পরিধানের ফলে অতিরিক্ত গরম লাগবে না আবার উষ্ণতাও পাওয়া যাবে। অনেকেই টি-শার্ট কিংবা টপসের উপরে বিভিন্ন রঙের কটি পরিধান করে নিজের লুকে পরিবর্তন আনছেন।

ভারী সুতির পাশাপাশি শীতে বেছে নেওয়া যেতে পারে খাদির পোশাক। উজ্জ্বল খাদির পোশাক শীতে আপনাকে দিতে পারে উষ্ণতা। তরুণদের কাছে এখন বেশ জনপ্রিয় সুতির কুর্তি। ভারী ব্লকের কাজ করা সুতির কুর্তির সঙ্গে পরতে পারেন জিন্স যা শীত থেকে রক্ষা করবে ও সাজেও ভিন্নতা আনবে। ফ্যাশনেবল লুকের জন্য পোশাকের সঙ্গে বেছে নিতে পারেন রঙিন স্কার্ফ।

শীতের সময় যেহেতু আবহাওয়ার আর্দ্রতা কমে যায় ও বাইরের রুক্ষতার পাশাপাশি থাকে অনেক ধূলাবালি, তাই চুল রক্ষা করতে মাথায় পেঁচিয়ে নিতে পারেন রঙিন স্কার্ফ। এতে চুল রক্ষার পাশাপাশি আপনাকে দেখতেও ভিন্নধর্মী লাগবে। এখন ডিজাইনাররা বিভিন্ন রকমের শাল তৈরি করছেন। দেশীয় পোশাকের পাশাপাশি ওয়েস্টার্ন পোশাকের সঙ্গে মানানসই শালের মধ্যে ভিন্নতা আনতে কবিতার লাইন কিংবা গ্রামীণ চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে। লাল, কমলা, মেরুন, নীল, সবুজ ইত্যাদি রঙের শাল বেছে নিতে পারেন পোশাকের সঙ্গে। বেশিরভাগ শাল এখন তৈরি করা হয় ভারী সুতির ও ব্লকের এবং সাইজে কিছুটা ছোট থাকায় যে কেউ এটি স্বচ্ছন্দে বহন করতে পারে।

ছেলেরাও কিন্তু নিজেদের লুকে এখন নিয়ে আসতে চায় ভিন্নতা। ছেলেদের পোশাকেও দেখা যায় নানা রঙ ও প্রিন্টের খেলা। নিজেকে ফ্যাশনেবল ভাবে তুলে ধরতে ছেলেরাও এখন বিভিন্ন রঙের ব্লেজার এবং শার্টের মধ্যে নানা ধরনের প্রিন্টের পোশাক পরিধান করে থাকে। ছেলেদের চাহিদার কথা চিন্তা করে ডিজাইনাররা তাদের শোরুমের একটি অংশ জুড়ে ছেলেদের জন্য শীতের কালেকশন রেখে থাকে। শুধু মেয়েরা নয় ছেলেরাও এখন লাল, হলুদ, কমলা, নীল রঙের পোশাক পরিধান করে থাকে। শীতের সময় যেহেতু অনেক দাওয়াত থাকে তাই রঙিন পাঞ্জাবি অনেকের পছন্দের তালিকায় থাকে।

কি ধরনের পোশাক বেছে নিবেন তা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আপনার ব্যক্তিত্বের উপর। রঙের ক্ষেত্রেও তাই। শীতের সময় উজ্জ্বল রঙের প্রাধান্য বেড়ে গেলেও অবশ্যই তেমন রঙ বেছে নিতে হবে যা আপনার ব্যক্তিত্বকে সঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে। উজ্জ্বল পোশাক সাধারণত উষ্ণতা দেয়, সেজন্য শীতের সময় উজ্জ্বল পোশাককে বেছে নিতে বলা হয়। তবে এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আপনার উপর, আপনি কোন ধরনের পোশাক ও কেমন রঙ পরতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

এই লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ফ্যাশন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

four × one =