দিন কয়েক আগেই নিউ জিল্যান্ডের কাছে ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা হাতছাড়া করেছিল পাকিস্তান। সেই হারের প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ ছিল এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। তবে এখানেও ব্যর্থ স্বাগতিকরা। ঘরের মাঠে হার দিয়ে আসর শুরু করল মোহাম্মদ রিজওয়ানের দল। অন্যদিকে উড়তে থাকা কিউইরা ৬০ রানের বড় জয়ে সেমির সমীকরণ সহজ করল।
করাচিতে উদ্বোধনী ম্যাচে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩২০ রান সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড। জবাবে খেলতে নেমে ৪৭ ওভার ২ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৬০ রানের বেশি করতে পারেনি পাকিস্তান।
শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকে পাকিস্তান। বাবর আজম একপ্রান্ত আগলে রাখলেও রানের গতি বাড়াতে পারেননি। ৯০ বল খেলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৬৪ রান করেন তিনি। সৌদ শাকিল ১৯ বলে মাত্র ৬ রান করে ফেরেন। ফখর জামানও ছিলেন নিষ্প্রভ—৪১ বলে ২৪ রানেই থামেন তিনি। অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান তো আরও হতাশাজনক, ১৪ বলে ৩ রান করে ফিরে যান সাজঘরে।
একটু লড়াইয়ের আভাস দেন সালমান আলি আগা ও খুশদিল শাহ। আগা ২৮ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৪২ রান করেন, খুশদিল ৪৯ বলে ১০ চার ও ১ ছক্কায় ঝড়ো ৬৯ রান করেন। তবে জয়ের জন্য তা যথেষ্ট হয়নি।
শেষদিকে শাহিন আফ্রিদি ১৩ বলে ১৪, নাসিম শাহ ১৪ বলে ১৩ ও হারিস রউফ ৮ বলে ১৩ রান করেন। কিন্তু ততক্ষণে পরাজয় নিশ্চিত হয়ে গেছে। নিউ জিল্যান্ডের হয়ে বল হাতে দুর্দান্ত উইল ও’রুর্ক, ৪৭ রানে ৩ উইকেট নেন তিনি। অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনারও শিকার করেন ৩ উইকেট।
ঘরের মাঠে হতাশাজনক শুরু হলো পাকিস্তানের। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ঘুরে দাঁড়াতে হলে রিজওয়ানদের সামনে এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ!
এর আগে, শাহিন শাহ আফ্রিদিকে চার মেরে ৯৯ রানে পৌঁছে যান টম ল্যাথাম। এক বল পর লং অনে ঠেলেই দিলেন দৌড়। কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পা রেখে ফেললেন স্বস্তির নিঃশ্বাস। দীর্ঘ বিরতির পর পেলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরির স্বাদ।
করাচিতে বুধবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে বহুল কাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্কে পা রাখেন ল্যাথাম। ১১৮ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। তার ১০৪ বলের ইনিংসটি সাজানো ৩ ছক্কা ও ১০ চারে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটি ল্যাথামের ২১তম সেঞ্চুরি। সবশেষটি ছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। সেটিও পাকিস্তানের বিপক্ষে এই করাচিতেই। সেবার পাকিস্তান সফরের প্রথম টেস্টে ১১৩ রান করেছিলেন তিনি। এরপর দীর্ঘ অপেক্ষা। ৭৮৪ দিন ও ৭৯ ইনিংস পর আবার সেঞ্চুরির স্বাদ পেলেন নিউ জিল্যান্ডের বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তৃতীয় কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি করলেন ল্যাথাম। ২০০২ আসরে ভারতের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার ১৪৫ ও ২০১৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারা অপরাজিত ১৩৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।
ওয়ানডেতে চলতি বছরের শুরুটা দুঃস্বপ্নের মতো ছিল ল্যাথামের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জানুয়ারিতে ১ রান করার পর টানা তিন ম্যাচে রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি। এই সংস্করণে টানা ‘ডাকের’ তালিকায় যৌথভাবে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
ব্যর্থতার বৃত্ত ল্যাথাম ভাঙেন ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে। পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তোলার ম্যাচটিতে করেন ৫৬ রান। পরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে করতে পারেন কেবল ১৫। এরপর, বৈশ্বিক আসরে প্রথম ম্যাচেই নিজেকে সেরা রূপে মেলে ধরলেন তিনি।
৭৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে যখন চাপে দল, তখন ক্রিজে যান ল্যাথাম। ইয়াংকে নিয়ে হাল ধরেন তিনি। তাদের দুইজনের ১১৮ রানের জুটিতে শক্ত ভীত পায় কিউইরা। ইয়াং সেঞ্চুরি করে বিদায় নিলেও শেষ পর্যন্ত খেলে যান ল্যাথাম। ৬১ বলে ফিফটি করার পর দ্রুত রান তুলতে থাকেন তিনি। পরের পঞ্চাশ করতে তার লাগে কেবল ৩৪ বলে। কাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্কে পা রাখেন তিনি ৯৫ বলে।
শেষ দিকে ঝড় তোলেন গ্লেন ফিলিপস। ৪ ছক্কা ও ৩ চারে ৩৯ বলে ৬১ রান করেন তিনি। ৫ উইকেট হারিয়ে ৩২০ রান করে নিউ জিল্যান্ড।