বৃথা হলো হৃদয় -জাকের বীরোচিত লড়াই

সালেক সুফী

বলবো না বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হেসে খেলে জয় পেয়েছে পরাক্রমশালী ভারত। বাংলাদেশের ছুড়ে দেয়া ২২৯ টার্গেট তাড়া করে জয় পেতে ভারতকে ৪৬.৩ ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। রেকর্ড খাতায় ভারতের ৬ উইকেটের  জয় ঢেকে দিয়েছে দেয়ালে পিঠ রেখে হৃদয় অনিকের ১৫৪ রানের মাইল ফলক জুটি। তবু সান্তনা লড়াই করে হেরেছে বাংলাদেশ।

কাল রাতে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিশাল কিছু অর্জন করার স্বপ্ন দেখেছিলো। টসে জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়ে পাওয়ার প্লেতে ৩৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে প্রায় ধরাশয়ী হয়ে পড়েছিল বেঙ্গল টাইগার্স। সেখান থেকে বাঘের বিক্রমে লড়াই করেছিল তাওহীদ হৃদয় (১০০) আর জাকের আলী অনিক (৬৮)। ষষ্ট উইকেট জুটিতে ১৫৪ রানের মাইল ফলক রেকর্ড সৃষ্টির কল্যানে ২২৮ রানের মাঝারি মানের স্কোর গড়েছিল বাংলাদেশ। এই স্কোর প্রতিরক্ষায় দারুন লড়াই করেছে বাংলাদেশ। ভারতকে জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে রীতিমত সংগ্রাম করতে হয়েছে। ৪ উইকেট হারিয়ে ২৩১ করতে ভারতকে ৪৬.৩ ওভার খেলতে হয়েছে। ভারতের ব্যাটিং গভীরতা ওদের ৬ উইকেট জয়ে সহায়তা করেছে। টুর্নামেন্ট ফেভারিট ভারতের বিরুদ্ধে লড়াকু খেলাকে সাধুবাদ জানাবো। তবে টপ অর্ডার ব্যার্থতা, মাহমুদুলহ রিয়াদ, নাহিদ রানাকে ডাগ আউটে বসিয়ে রাখা নিয়ে সমালোচনা হবে। একপর্যায়ে ভারত যখন চাপে পড়েছিল তখন তাসকিনের বলে জাকের আলীর সহজ ক্যাচ ফেলে দেয়া আলোচনায় আসবে। সবাই বলছে বাংলাদেশ অন্তত ২৫-৩০ রান কম করেছিল। এই উইকেটে ২৫০-২৬০ রান করলে জয় পেতেও পারতো।

শঙ্কা ছিল বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটিং নিয়ে। অধিনায়ক নাজমুল শান্ত ফরচুন বরিশালের হয়ে বিপিএল ২০২৫ অধিকাংশ সময় ডাগ আউটে বসে কাটিয়েছে। সৌম্য দীর্ঘ বিরতিতে ম্যাচে ফিরে পুরোপুরি ম্যাচ ফিট ছিল কিনা নিশ্চিত নয়। ওপর দিকে ভারত বোলিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ মোহাম্মদ সামি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেই প্রমান করলো এবারে বর্ডার গাভাস্কার টেস্ট সিরিজে বুমরার সঙ্গে সামি থাকলে হয়তো পাশার দান পাল্টে যেতেও পারতো। বাংলাদেশের টপ অর্ডার স্কোর দেখলেই বোঝা যাবে কিভাবে সংগ্রাম করেছে হৃদয় আর অনিক। সৌম্য (৫ বল খেলে ০),শান্ত (২ বল খেলে ০), মেহেদী মিরাজ (১০ বল খেলে ৫), মুশফিক (১ বলে ০)। একমাত্র তানজিদ তামিম ভালো খেলছিল। কিন্তু ২৫ বলে ২৫ রান করার পর আক্সার প্যাটেলের বলে ফিরে যাবার পর মুশফিক এসে প্রথম বলে আনাড়ির মত আউট হয়। হ্যাট্রিক পেতে পারতো আক্সার প্যাটেল। রোহিত স্লিপে সহজ ক্যাচ ফেলে দেয়। সুযোগটা দারুন ভাবে কাজে লাগিয়ে জাকের অনিক হৃদয়ের সাথে ১৫৪ রানের রেকর্ড জুটি গড়ে। এই ম্যাচে বাংলাদেশ মাহমুদুল্লাকে দারুণভাবে মিস করেছে। হয়তো টিম কম্বিনেশনের ধুয়া তুলবে বাংলাদেশের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক। বাংলাদেশের এই দলে মাহমুদুল্লা খেলবে না ভাবাই যায় না। সত্যি কথা বলতে কি অধিনায়ক শান্তকে বিশ্রাম দিয়ে হলেও খেলানো যেত রিয়াদকে।

যাহোক কয়েকবার ভারত ফিল্ডারদের বদান্যতায় সুযোগ পেয়ে দারুন ব্যাটিং করেছে তাওহীদ হৃদয় এবং জাকের আলী দারুন ব্যাটিং করেছে। ফিরতি স্পেলে এসে কালকের খেলায় ভারত বোলিং নেতা মোহাম্মদ সামি যাকেরকে ফিরিয়ে না দিলে হয়তো ২৫০ হতেও পারতো। শেষ দিকে একা লড়তে হয় হৃদয়কে।  কিন্তু পরিশ্রান্ত এবং আহত ছিল হৃদয়। উইকেটের চরিত্র বিবেচনায় ২২৮ রান মন্দের ভালো বলবো। ১০০ রান করার পথে হৃদয় ৬ টি চার এবং ২ টি ছক্কা মেরেছে। ১১৪ বলে করা জাকের আলীর ৬৮ রানের ইনিংসে ছিল মাত্র ৪ টি চারের মার। ৬ জন ব্যাটসম্যান দুই অংকের স্কোর করতে পারে নি। টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান করেছে ০।  কিভাবে টুর্নামেন্ট সেরা দলের বিরুদ্ধে জয়ের আশা করতে পারে বাংলাদেশ।

পরিকল্পনা করে ব্যাটিং করেছে ভারত। তাসকিন ভালো বোলিং করলেও মুস্তাফিজ এবং তানজিম সাকিবকে দারুন পিটিয়েছে ভারতের ব্যাটসম্যানরা।  তবে মিরাজ, রিশাদের টাইট বোলিং ২০ ওভারে ৭৫ রানে ২ উইকেট তুলে নেয়। রোহিত (৪১), বিরাট (২২), আয়ার (১৫) ফেরায় একসময় ভারতের স্কোর ছিল ৪/১৪৪)। একপ্রান্তে পরিণত ব্যাটসম্যানের মত দারুন ব্যাটিং করেছে শুভমান গিল। আক্রমণে ফিরে আসা তাসকিনের বলে জাকের  রাহুলের সহজ ক্যাচ ফেলে না দিলে ভারতকে আরো কঠিন সংগ্রাম করতে হত।  বলতে পারি কাল নাহিদ রানাকে না খেলানো ভুল হয়েছে। কাল কিন্তু ভালো বোলিং করেছে রিশাদ হোসেন (২/৩৮)। উইকেট না পেলেও ভালো বোলিং করেছে মেহেদী মিরাজ।

প্রথম ম্যাচ হেরে বাংলাদেশের জন্য কঠিন হয়ে গেলো ঘুরে দাঁড়ানো। পরের ম্যাচ স্বাগতিক পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রাওয়ালপিন্ডিতে। এই মাঠে নিকট অতীতে টেস্ট সিরিজে পাকিস্তানকে ধবল ধোলাই করেছে। নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেছে পাকিস্তান। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের কঠিন পরীক্ষার পর কি অবস্থায় থাকে পাকিস্তান দেখতে হবে। সঠিক একাদশ নির্বাচন করে খেললে বাংলাদেশকে হারানো সহজ হবে না। কাল লিখেছিলাম লড়াই করলে খুশি হবো। লড়াই করেই হেরেছে বাংলাদেশ। লড়াই চালু থাকুক সেই প্রত্যাশা করি।

সালেক সূফি, ক্রীড়া লেখক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

nine − 6 =