আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫: আফগানিস্তান বীরত্বে ইংরেজ সিংহদের বিদায় ঘন্টা বাজলো

সালেক সুফী: আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গ্রূপ অফ ডেথে অসামান্য শৌর্য বীর্য প্রদর্শন করে বীরপ্রসবা আফগানিস্তান ক্রিকেট দল টুর্নামেন্ট জয়ের অন্যতম ফেভরিট ইংল্যান্ডকে ছিটকে দিলো। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৩৫১/৮ আর আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ৩১৭ রান করেও জয় বঞ্চিত থেকে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিলো থ্রী লায়ন্স খাত ইংল্যান্ড। নিজ দেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পর্যাপ্ত অবকাঠামো নেই ,নাই বিদেশী দলগুলোর জন্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা , অনুশীলন করতে হয় ভারতে ,সংযুক্ত আরব এমিরেটসকে হোম বানিয়ে খেলতে হয় দ্বিপাক্ষিক সিরিজ , আইসিসি রাংকিংয়ে শীর্ষ দলগুলোর সঙ্গে খেলার সুযোগ সীমিত। এমনি একটি দল সুযোগ পেলেই আইসিসি টুর্নামেন্টে সকল ফরম্যাটে আলোড়ন সৃষ্টি করে চলেছে নিয়মিত। এবারের টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচে বিশাল ব্যাবধানে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে হেরে যাবার পরেও গুণীজন ধারণা করেছিল কিছু একটা করবে আফগান দল।  কাল বিস্ময় জাগানিয়া ক্রিকেট খেলে আফগানিস্তান টুর্নামেন্টে বড় ধরণের অঘটন ঘটালো।

টস জয় করে কাল লাহোরের রান প্রসবা উইকেটে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আফগানিস্তান।  ইংল্যান্ড দলে মার্ক উড ,জোফরা আর্চার , আদিল রশিদের মত তুখোড় বোলার ,ভারতে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলে দারুন প্রস্তুত ইংরেজ বাহিনী।  শুরুতেই রামানুল্লাহ গুরবাজ, সাদিকুল্লাহ অতল আর রাহমাত শাহর উইকেট তুলে নিয়ে আফগান দলকে ব্যাক ফুটে ঠেলে দিয়েছিলো দারুন গতিতে বল করা জোফরা আর্চার। মার্ক উড অপর প্রান্তে গতির ঝড় তুলেছিল। ৮.৫ ওভারে ৩৭ রানে ৩ উইকেট হারানো আফগানিস্তান কোনঠাসা হয়ে পড়েছিল। কিন্তু অপর প্রান্তে ২৩ বছরের আফগান যুবক ইব্রাহিম জাদরান আহত বাঘের মত প্রতি আক্রমণে জ্বলে উঠলো। হাসমাতুল্লাহ শাহিদী ,আজমাতুল্লাহ ওমারজাই এবং মহামাদ নবীকে সাথী করে চতুর্থ ,পঞ্চম এবং ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে যোগ হলো যথাক্রমে ১০৩, ৭২ এবং ১১১ অমূল্য রান। ইব্রাহিম জাদরানের ব্যাটে রানের ঝর্ণাধারা।  ১৪৬ বল খেলে ১৭৭ রানের নতুন মাইল ফলক আফগান ইনিংসকে ৩২৫/৭ রান চূড়ায় পৌঁছে দিলো।  আফগান ব্যাটসম্যানদের তীব্র প্রতি আক্রমণের মুখে এলো মেলো হয়ে পড়েছিল ইংলিশ প্রতিরক্ষা।  মার্ক উড এক পর্যায়ে আহত হয়ে পরে , ইংল্যান্ড দলের ফিল্ডিং এলোমেলো হয়ে যায়. জাদরান ১৪৬ বল খেলে ১২ দর্শনীয় চার এবং ৬ ছয়ে সাজানো নয়ন মনোহর ১৭৭ রানের ইনিংস উপহার দেয়।  আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান ,যারা দেখেছেন অনেক দিন মনে রাখবেন সন্দেহ নেই. আফগান ইনিংসে হাসমাতুল্লাহ শাহিদী (৪০) ,আজমাতুল্লাহ ওমারজাই (৪১) এবং মোহাম্মদ নবি (৪০) ইব্রাহিম জাদরানের সঙ্গী হয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

তবুও ধারণা করা হয়েছিল ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে দারুন ব্যাটিং লাইন আপ নিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে ইংল্যান্ড। কিন্তু ইংল্যান্ড ইনিংসের সূচনায় আজমাতুল্লাহ ওমারজাই এবং মোহাম্মদ নবি দ্রুত ফিল সল্ট এবং জামী স্মিথকে ফিরিয়ে দিয়ে কোনঠাসা করে ফেলে। ইংল্যান্ড ইনিংসে দারুন ব্যাটিং করে জো ৰূট (১১১ বলে ১২০) এবং বেন ডাকেট (৩৮) ,জোস্ বাটলার (৩৮) করলেও আজমাতুল্লা ওমারজাই চৌকষ বোলিং ( ৫/৫৮) এবং সমগ্র দলের হার না মণ মানসিকতার কারণে ইংলিশ ইনিংস ৩১৭ রানে গুটিয়ে যায়. যোগ্য দল হিসাবেই ৭ রানের জয় ছিনিয়ে নেয় লড়াকু আফগানিস্তান। দুই ম্যাচ খেলে প্রচুর রান করেও অস্ট্রেলিয়া এবং আফঘানিস্থানের কাছে পরাজয় বরণ করা ইংল্যান্ড ছিটকে পড়েছে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে। জমে উঠেছে গ্রূপ বি থেকে সেমী ফাইনালে ওঠার লড়াই। অস্ট্রেলিয়া ,দক্ষিণ আফ্রিকা এবং আফগানিস্তান থেকে যে কোনো দুটি দল যাবে সেমী ফাইনালে।

টুর্নামেন্টের ফলাফল যাই হোক আফগানিস্তান বিশ্ব জোড়া ক্রিকেট আমুদেদের হৃদয় জয় করেছে।  সাবাশ আফগানিস্তান আকাশ তোমাদের সীমানা। শুভেচ্ছা অবিরাম। অস্ট্রলিয়াকে হারিয়ে সেমী ফাইনালে খেললে বিস্মিত হবো না. অথচ এই ইংল্যান্ড দল অক্রিকেটীয় কারণ দেখিয়ে আফগানিস্তানের সঙ্গে খেলতে অনীহা প্রদর্শন করেছিল।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

nine + four =