পিঠার রাজা পাটিসাপটা
মাসুম আওয়াল
শীতটা দারুণ মজার ঋতু শীতটা দারুণ মিঠা,
সব বাঙালির ঘরেই পাবে মজার মজার পিঠা।
কোনটা রেখে কোনটা খাবে
শহর ছেড়ে গ্রামে যাবে!
খেঁজুর রসের ঘ্রাণে মাতাল গেরোস্ত বাড়ির ভিটা,
শীতটা দারুণ মজার ঋতু শীতটা দারুণ মিঠা।
উঠোন কোণে মাথা দোলায় মোরগ ফুলের কলি,
পিঠার রাজা পাটিসাপটার গল্পটা আজ বলি।
কে খেয়েছো পাটিসাপটা খেতে কেমন লাগে
আজ এখানে সেসব কথাই হবে আগে ভাগে।
বন্ধু তোমার আছে সময় পিঠা নিয়ে ভাবার!
বাঙালি লোকইতিহাসে পিঠা প্রাচীন খাবার,
নানান রঙের পিঠার মাঝে পাটিসাপটা সেরা,
অতিথিদের প্লেটেও দারুণ হাসতে পারে এরা।
এদেশ ছাড়া কলকাতাতেও দারুণ জনপ্রিয়,
এই পিঠা না খেয়ে থাকলে আজই খেয়ে নিও।
শীত ঋতু না শুধু, পাবে অন্য ঋতু জুড়েও,
হাতের কাছেই পাবে কিংবা পাবে গিয়ে দূরেও।
ষোল শতক শেষের দিকে, কত্ত আগে ভাবো,
মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর চণ্ডিকাব্যে যাবো।
চণ্ডিকাব্যেও পেয়ে যাবে পাটিসাপটার নাম,
সাধে কী এ পিঠা নিয়ে এই ছড়া লিখলাম।
কাব্যেই নয় তুমি যখন গল্প পড়তে যাবে,
মজার পিঠার কথা তুমি গল্প মাঝেও পাবে
বিভূতিদার ছোট গল্প পুঁই মাচাতেও আছে,
পাটিসাপটা পাটিসাপটা ধরে কী আর গাছে!
নিজে নিজে ঘরে বসেও নিতে পারো গড়ে,
পাটিসাপটা গড়ার নিয়ম পাবে ছড়া পড়ে।
ময়দা, চিনি, চালের গুঁড়ো, দুধ নারিকেল লাগে,
পিঠার মাঝে দেয়ার জন্য পুর বানাবে আগে।
বন্ধু এবার চলো তবে কাজে নেমে পড়ি,
যত্ন করে ঘরেই পাটিসাপটা তৈরি করি।
পাটিসাপটা গড়ার নিয়ম ভাগ করো দুই ভাগে,
পারবে তুমি মুখখানা ভার করো না প্লিজ রাগে।
নারিকেল ও চিনি দিয়েও পুর বানাতে পারো,
অথবা ক্ষীর পাক করে নাও মজা পাবে তারও।
ক্ষীর বানাবে কেমন করে দিচ্ছি বলে শোনো,
ক্ষীর বানানো ভীষণ সহজ, ঝঞ্জাট নেই কোনো।
দুধের সঙ্গে পানি মেশাও এবার করো জ্বাল,
উঠলে বলক অল্প করে দিও তাতে চাল।
না হয় যেন দলা, সেটা ছেঁচকি দিয়ে নাড়ো,
এবার তাতে নারিকেলের গুঁড়োগুলো ছাড়ো।
অল্প আঁচে সেদ্ধ করো, সেদ্ধ হয়ে এলে,
দাও পরিমাণ মতো চিনি, যেন সেটা মেলে।
চিনির বদল খেঁজুর গুড়ও দিতে পারো তাতে,
ক্ষীরটা ঘন হয়ে এলে নামাও হাতে নাতে।
ঠান্ডা করো এবার সেটা চুলার পাশে রেখে,
খেতে কেমন হলো এবার দেখতে পারো চেখে।
ক্ষীরের বদল নারিকেলের পুর বানাতেও পারো,
ক্যামনে হবে দিচ্ছি বলে নিয়ম কানুন তারও।
একটা কড়াই চুলোয় বসাও চিনি ঢালো তাতে,
একটুখানি পানি দিয়ে জ্বাল করো নিজ হাতে।
চিনিগুলো গলে গেলে নারিকেলের গুঁড়ো-
তাতে ঢেলে পাক করে নাও পেয়ে যাবে ‘পুর’ও।
নারিকেল পাক হয়ে গেলে ঠান্ডা করো সেটাও,
পাটিসাপটার লেচির ভেতর দিতে পারবে এটাও।
দ্বিতীয় ভাগ শুরু, লাগবে ময়দা, দুধ ও পানি,
চালগুঁড়ো দাও তাতে, সবাই মণ্ড পাকাতে জানি।
মণ্ড হয়েছে এবার বানাও গোল করে খুব লেচি,
লেচি বেলে রুটি বানাও শেষে এসে গেছি।
পুর দিয়ে দাও বেলা লেচির উপরিভাগ দিয়ে,
পাটির মতো এটাকে দাও ঠিক মতো মুড়িয়ে।
আলতো করে চ্যাপ্টা করো, এবার ঘিয়ে ভাজো,
ভাজা হওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হবে ভাই কাজও।
চিনির রসে ডুবিয়ে রাখো পিঠা কিছুক্ষণ,
ভিজবে যখন খেও তুলে জুড়িয়ে যাবে মন।
বাংলাদেশটা মজার মজার পিঠা দিয়ে ঘেরা,
নানান রঙের পিঠার মাঝে পাটিসাপটা সেরা।
লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ছন্দে ছন্দে