চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫: কি পেলো বাংলাদেশ?

পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড আয়োজিত পাকিস্তান এবং দুবাইতে অনুষ্ঠিত হাইব্রিড পদ্ধতির আট জাতির আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারত  নিউজিল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়ে কাঙ্ক্ষিত শিরোপা অর্জন করেছে। টুর্নামেন্টে আইসিসির নীলনয়না দল একই শহর, একই মাঠ, একই পরিবেশ এবং নিজেদের উপযোগী উইকেটে সব ম্যাচ খেলে বাড়তি সুবিধা পেয়েছে কিনা সেই বিতর্কিত আলোচনায় যাবো না। যতদিন বিশ্বের অন্যান্য ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোর আত্মপোলব্ধি না হবে ততদিন ভারতের প্রভাব থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মুক্তি পাবে না। আমার আলোচনার মূল বিষয় বস্তু  ক্রিকেটের আরো একটি বিশ্ব আসরে অংশগ্রহণ করে কি অর্জন হলো বাংলাদেশ ক্রিকেটের।

টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি রিকি পন্টিং বলেছিলেন, বাংলাদেশ আট দলের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল দল। নিজেদের গ্রূপে দুটি ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন ভারত এবং রানার্সআপ নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে বড় ব্যাবধানে পরাজিত হয়েছে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টের অপর দুর্বল দল পাকিস্তানের সঙ্গে শেষ খেলাটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ কাগজে কলমে আট দলের মধ্যে ষষ্ট স্থান পেয়েছে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে। কিন্তু খেলার বিচারে বাংলাদেশকে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে দুর্বল দল বললে তর্ক করার মতো জোরালো যুক্তি দেওয়া যাবে না।

প্রশ্ন করতেই হবে একটি বৈষয়িক টুর্নামেন্ট খেলতে পুরোপুরি অপ্রস্তুত দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত কোন বিবেচনায় টুর্নামেন্টের জয়ের অলীক স্বপ্ন দেখেয়েছিলেন দেশ ছাড়ার প্রাক্কালে?

টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকালী তিনটি দল  পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা পাকিস্তানে একটি তিন জাতির ওডিআই টুর্নামেন্ট খেলেছিল। ভারত আর ইংল্যান্ড ভারতে দ্বিপাক্ষিক ওডিআই সিরিজ খেলেছে। অস্ট্রেলিয়া শ্রীলংকা সফরে টেস্ট, ওডিআই খেলা ছাড়াও দুবাইতে কিছু দিন প্রস্তুতি নিয়েছে। আফগানিস্তান পাকিস্তান এবং দুবাই পরিস্থিতির সাথে দারুন ভাবে পরিচিত।

বাংলাদেশের প্রস্তুতি বলতে ছিল বিতর্কিত কলংকিত সাধারণ মানের বিপিএল টি২০ টুর্নামেন্ট। তদুপরি বিসিবির ব্যর্থতায় বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুই কিংবদন্তি সাকিব আল হাসান এবং তামিম ইকবালকে স্কোয়াডে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ অন্যান্য দলগুলোর থেকে অনেক দুর্বল একটা অপ্রস্তুত স্কোয়াড নিয়ে বৈষয়িক আসরে খেলতে  গেছে বললে অত্যুক্তি হবে না। তাই ভারত বা নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মোকাবিলায় দাঁড়াতেই পারবে না সেটি অনুমিত ছিল। সৌভাগ্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ায় পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ দুই দলের মুখরক্ষা হয়েছে।

বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং ব্যর্থতা দুটি ম্যাচে দৃষ্টিকটু ভাবে ধরা দিয়েছে। টপ এবং মিডল অর্ডার শোচনীয় ব্যার্থতার জন্য ভারতের বিরুদ্ধে কোনঠাসা হয়ে পড়েছিল। তাওহীদ হৃদয় এবং জাকের আলীর বীরত্বে মুখ রক্ষা হলেও বাংলাদেশের সংগ্রহ কোনভাবে ভারত দলের কাছে চ্যালেঞ্জিং মনে হয় নি।

দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানের ব্যাটিং স্বর্গ উইকেটেও বাংলাদেশ ব্যাটিং আবারো ব্যর্থ হয়। এবারে অবশ্য নাজমুল শান্ত আর জাকের আলী ভালো ব্যাটিং করে মুখ রক্ষা করে। এবারেও কিন্তু হেসে খেলে জয় পায় নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশ বোলাররা দুই ম্যাচেই মামুলি স্কোর ডিফেন্ড করতে পারেনি। পারার কথাও নয়। অনেকেই বলেছেন বাংলাদেশের স্থানে শ্রীলংকা থাকলে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারতো।

ফিরে তাকালে দেখবো মাশরাফির পর তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদ্দুল্লাহ পর্ব শেষ হতে চলেছে।উঁচু মানের ৫ ক্রিকেটারের পর বাংলাদেশ ক্রিকেটে এখন ট্রান্সিশন চলবে। বিসিবির পরিকল্পনা এবং কৌশলের ব্যর্থতায় পাইপলাইনে আন্তর্জাতিক মানের কুশলী খেলোয়াড় প্রস্তুত না থাকায় আগামীতে জিম্বাবুয়ে ছাড়া অন্য দলের বিরুদ্ধে দেশে এবং বিদেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেই হিমশিম খাবে বাংলাদেশ।

প্রশ্ন করাই  যায় কেন বিসিবি টুর্নামেন্টের জন্য কোন প্রস্তুতি নিলো না? তাহলে কি বলির পা‍ঁঠা করেই পাঠানো হয়েছিল অপ্রস্তুত বাংলাদেশ দলকে? কারো কি কোনো দায়িত্ব নেই? কি উত্তর আছে বিসিবি ক্রিকেট অপারেশন বা নির্বাচন কমিটির? বিসিবি সভাপতি বা কি অজুহাত দিবে? দেশের ১৮ কোটি ক্রিকেট প্রেমিক জনতা কি জবাবদিহি চাইতে পারে না?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

eleven − 6 =