মেহেদী মিরাজের মাইল ফলক অর্জনের টেস্টে বাংলাদেশের লজ্জাজনক পরাজয়

ঘূর্ণি বলে তৃতীয় বারের মত  ৫+৫ = ১০ উইকেট, টেস্ট ক্রিকেটে মেহেদী হাসান মিরাজের  ২০০ উইকেট অর্জন সত্ত্বেও টেস্ট ক্রিকেট পরিবারের তলানিতে থাকা দেশ জিম্বাবুয়ের কাছে ৩ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। টস জয় করে প্রথমে ব্যাটিং করে ১৯১ রানের মামুলি সংগ্রহ করেছিল বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে ভালো ব্যাটিং করে ২৭৩ করে ৮২ রানের গুরুত্বপূর্ণ লিড নেয়। দ্বিতীয় ইনিংসেও ভালো ব্যাটিং করেনি বাংলাদেশ। ২৫৫ রানে গুটিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ ১৭৪ রানের টার্গেট দিতে পেরেছিলো। মিরাজ বীরত্বে অতিথি দলকে চেপে ধরলেও শেষ রক্ষা হয় নি। ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭৪ রান করে ৩ উইকেটে জয় লাভ করে জিম্বাবুয়ে। ২০২১র পর প্রথম টেস্ট জয়। আর এই সিলেট মাঠেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্ট জয়। রাখঢাক না করেই বলা যায় দেশের মাটিতে পরিচিত পরিবেশে বাংলাদেশের পরাজয়ের মূল কারণ উভয় ইনিংসে দুর্বল মেরুদন্ডহীন ব্যাটিং, স্কোয়াড নির্বাচন এবং একাদশ নির্বাচনে ব্যার্থতা। টেস্ট ক্রিকেটের ধারবাহিক ব্যার্থতার চর্বিতচর্বন আলোচনা সমালোচনা বিশ্লেষণ অর্থহীন  থেকেছে। পরিণতি তাই এখন সুস্পষ্ট ভাবে  দৃশ্যমান। বিশেষত প্রজন্মের বিবর্তনের সময়ে মেধাহীন বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন পতনের পিচ্ছিল পথে। দুর্বলতম দলের সঙ্গে দেশের মাটিতেও বরণ করতে হলো লজ্জাজনক পরাজয়।

বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডার বিশেষত ওপেনার সমস্যা দীর্ঘদিনের। তামিম ইকবাল ছাড়া কেউ স্থিতু হয়নি। আর সেই তামিমের অবসরের পর শুধু টেস্ট ক্রিকেট নয় সকল ফরম্যাটেই ওপেনার সমস্যা, রীতিমত দুর্ভিক্ষের আকাল। জয়, সাদমান বা জাকের কেউ ধারাবাহিক নয়। এবারেও সিলেটে উভয় ইনিংসে ভালো সূচনা দিতে ব্যার্থতা দলকে ভালো সংগ্রহের ভিত্তি দিতে বার্থ হয়েছে। টপ অর্ডারে শান্ত ( ৪০,৬০) এবং মোমিনুল ( ৫৬,৪৭) ভাগ্যের কিছুটা সহায়তা পেয়ে দীর্ঘ সময় উইকেটে থেকেও দলকে বড় ধরণের স্কোর গড়ে দিতে বার্থ হয়েছে। ভুল সময়ে দায়িত্বহীন খেলে উইকেট ছুড়ে দিয়েছে। দৃষ্টিকটু ভাবে উভয় ইনিংসে উইকেট ছুড়ে দিয়েছে মুশফিক আর মেহেদী। লেট্ মিডল অর্ডারে জাকের অনিক সাদ্ধমত চেষ্টা করলেও দলের প্রয়োজনে পর্যাপ্ত ছিল না। প্রথম ইনিংসে ১৯১ রানে গুটিয়ে যাওয়া এবং জিম্বাবুয়ে ২৭৩ রান করে ৮২ রানে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশকে কোনঠাসা করে ফেলে। জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংসে ব্রায়ান বেনেট (৫৭), সিন্ উইলিয়ামস (৫৯) ছাড়াও দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যাটিং করে লেজের সারির ব্যাটসম্যানরা দলের প্রথম ইনিংসের স্কোর ৮২ রানের অগ্রগামী করে। উইকেটে যথেষ্ট গতি এবং কিছুটা অসম বাউন্স থাকলেও জিম্ববুয়ান মুজারামবাণীর মত নাহিদ ছাড়া খালেদ বা হাসান মাহমুদ ফায়েদা নিতে পারেনি। মেহেদী মিরাজ স্বভাব সুলভ বোলিং করে ৫২ রানে ৫ উইকেট তুলে নিলেও সঙ্গী হয়ে উইকেট শিকার করতে পারে নি তাইজুল। আর সেখানেই ৮২ রানের ব্যাবধান বিপদে ফেলে বাংলাদেশকে।

আশা ছিল প্রথম ইনিংসের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। আবারো সূচনায় ব্যর্থ সাদমান, জীবন পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেনি জয়। ভালো খেলছিল মোমিনুল আর শান্ত। কিন্তু উইকেটে স্থিতু হয়েও দলের বাটিংকে শক্ত মেরুদণ্ডের উপর দাঁড় করাতে পারেনি। চতুর্থ দিনের সকালে ৬০ রান করার শান্তর উইকেট ছুড়ে দেওয়া ছিল রীতিমত দৃষ্টিকটু। প্রথম ইনিংসের মোট দ্বিতীয় ইনিংসেও বার্থ মুশফিক, মেরাজ। জাকের অনিক একই লড়েছে। কিন্তু লেজের ব্যাটসম্যানদের আড়াল করে খেলার কৌশল না নেয়ায় জিম্বাবুয়েকে ১৭৪ রানের বেশি টার্গেট দেয়া সম্ভব হয়নি।

টার্গেট তাড়া করার লক্ষ্যে দারুন সূচনা করে স্বল্প অভিজ্ঞ ব্রায়ান বেনেট (৫৪) আর বেন কুরান (৪৪)। প্রথম উইকেট জুটিতে যোগ হয় ৯৫ রান। এর পর জলে উঠে মেরাজ। এবার কিন্তু সাঙ্গ দেয় তাইজুল। ৯৫ থেকে ১৬১ সাত সাতটি উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। তীব্র উত্তেজনার মাঝে ওয়েসলি মাধবীযার ৫৫ বলে অপরাজিত ১৯ রান করে দলকে ঐতিহাসিক জয় উপহার দেয়।  দীর্ঘ ৪ বছর পর প্রথম টেস্ট জয় করে জিম্বাবুয়ের। মেহেদী মিরাজ তৃতীয় বারের মত ইনিংসে ১০ উইকেট এবং টেস্ট ক্রিকেটের ২০০ উইকেটের মাইলফলক অর্জন দলের পর্যায়ে ম্লান হয়ে যায়। লজ্জাহীন বাংলাদেশ ক্রিকেটকে কে দিবে লজ্জা?

একই ভুল বার বার কেন করে বাংলাদেশ। খেলোয়াড়, টিম ব্যাবস্থাপনা বা বিসিবির কেন বোধোদয় হয় না ? কারো কি কোনো দায়িত্ববোধ নেই ? কারো কাছে জবাবদিহি করতে হয় না? হয়তো চট্টগ্রাম টেস্টে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। ঢাকা পড়ে যাবে প্রথম টেস্টের ব্যার্থতা। এভাবেই চলবে বাংলাদেশের ক্রিকেট। যতই লিখুক বলুক বিশ্লেষক, কনটেন্ট ক্রিয়েটার, বিশেষজ্ঞরা।  কিছুতেই কিছু হবে বলে মনে হয় না।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

8 + 5 =