পাকিস্তান বাংলাদেশ টি ২০ সিরিজ দুই দলের জন্য অগ্নি পরীক্ষা

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে পাকিস্তান বাংলাদেশ দুটি দেশেরই এখন দুঃসময় চলছে। কোনো ফরম্যাটেই কোনো দলের সঙ্গেই দাঁড়াতে পারছে না। বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে জিম্বাবুয়ে এমনকি ইউএইর সঙ্গেও হেরেছে। নিকট অতীতে পাকিস্তনকে পাকিস্তানে টেস্ট সিরিজে ধবল ধোলাই করলেও এবারের টি ২০ সিরিজে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে বিশ্বাস করার ভরসা নেই। কিছু দিন আগে কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান ভারত খন্ড যুদ্ধ শুরু হওয়ার কারণে বাংলাদেশের পাকিস্তান সফর অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হওয়ায় এবং পাকিস্তান সরকার ক্রিকেট দলের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ায় বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ দলকে সফরের অনুমতি প্রদান করে। তবে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ তিন ম্যাচে সংক্ষিপ্ত করা হয়। ২৭,২৯ মে এবং ১ জুন লাহোরে তিনটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ দল কিছুদিন আগেই আইসিসি সহযোগী দেশ ইউএইর সঙ্গে তিন ম্যাচের টি ২০ সিরিজে ১-২ পরাজিত হওয়ায় সমর্থকরা হতাশ হয়েছে। পাকিস্তান খেলোয়াড়রা সদ্য পিএসএল ২০২৫ শেষ করে ফর্মের তুঙ্গে আছে। বাংলাদেশের ঘোষিত স্কোয়াড থেকে ফাস্ট বোলার নাহিদ রানা ব্যক্তিগত কারণে পাকিস্তান সফরে যেতে রাজি হয়নি। সৌম্য এবং মুস্তাফিজ আহত থাকায় দলে নেই। মেহেদী হাসান মিরাজ এবং খালেদ আহমেদকে শেষ মুহূর্তে দলে নেওয়া হয়েছে। মেহেদী মিরাজ এবং রিশাদ হোসেন পিএসএল বিজয়ী লাহোর কালান্দার্স দলে খেলার কারণে পাকিস্তানে আছে। পাকিস্তান স্কোয়াডে বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান এবং শাহীন শাহ আফ্রিদিকে বিশ্রাম দিয়ে কয়েকজন তরুণ উদীয়মান সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। বর্তমান অবস্থায় সিরিজটি দুই দলের জন্যই হবে অগ্নি পরীক্ষা।

বাংলাদেশ স্কোয়াড:

লিটন কুমার দাস (অধিনায়ক), জাকের আলী, নাজমুল হোসেন শান্ত, পারভেজ হোসাইন ইমন, তাওহীদ হৃদয়, মাহেদী হাসান ( সহ অধিনায়ক), রিশাদ হোসাইন, শামীম হোসাইন, মেহেদী হাসান মিরাজ, তানজীম হাসান শাকিব, হাসান মাহমুদ, শরিফুদিন, তানভীর ইসলাম, খালেদ আহমেদ।

পাকিস্তান স্কোয়াড: সালমান আলী আগা (অধিনায়ক), সাদাব খান (সহ অধিনায়ক), ফাহিম আশরাফ, ফখর জামান, হারিস রউফ, হাসান আলী, হাসান নাওয়াজ, হোসাইন তালাত, খুশদিল শাহ, মোহাম্মদ হারিস, মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র, মুহাম্মদ ইরফান খান, নাসিম শাহ, সাহেবজাদা ফারহান, সাইম আইয়ুব।

সিরিজে মূল পরীক্ষা হবে পাকিস্তানের শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অনিশ্চিত ব্যাটসম্যানদের লড়াই। বাংলাদেশের টপ এবং মিডিল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা দীর্ঘদিন ফর্মহীন। শক্তিশালী দলগুলোর বিরুদ্ধে কথাই নেই অপেক্ষাকৃত কম শক্তির বোলিং আক্রমণের মুখে এমনকি দেশের মাটিতেও ধারাবাহিক ভাবে  ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাটিং। বাংলাদেশের সোনালী প্রজন্মের ৫ খেলোয়াড় একে একে বিদায় নেয়ায় তাঁদের মাপের কোনো খেলোয়াড় গড়ে না ওঠায় বাংলাদেশ দল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খাবি খাচ্ছে। ইতিহাসের সেরা বোলিং শক্তি নিয়েও ক্রমাগত ম্যাচ আর সিরিজ হারছে বাংলাদেশ সব ফরম্যাটে। সবচেয়ে বড় সমস্যা টপ অর্ডার ব্যাটিং নিয়ে। তামিম ইকবাল দীর্ঘ সময় বাংলাদেশ দলকে আশায় আশায় রেখে অবসরের ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্ব বরেণ্য চৌকষ খেলোয়াড় সাকিব আল হাসানকে রাজনৈতিক কারণে অপাংতেয় রাখা হয়েছে। মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ নিজে থেকে সরে গেছে। সবাই জানে বাংলাদেশের ঘরোয়া অবকাঠামো নড়বড়ে থাকায় এতগুলো বিশ্বমানের খেলোয়াড়দের শুন্যতা এতো সহজে পূরণ করা বাংলাদেশের সাধ্যের অতীত। ওদের স্থানে অনেক সুযোগ পেয়েও লিটন, সৌম্য, শান্ত নিজেদের পরিণত করতে পারে নি।  দল, স্কোয়াড নির্বাচন নিয়েও বিতর্ক আছে। টি ২০ ফরম্যাটে ভালো খেলতে হলে প্রয়োজন শক্তিশালী টপ অর্ডার এবং শেষ দিকে স্লগ ওভারে প্রমাণিত পাওয়ার হিটার। দুটি স্থানেই বাংলাদেশের দুর্বলতা। পারভেজ ইমন নবীন, লিটন এবং শান্ত আস্থাহীন, তাওহীদ হৃদয় সাম্প্রতিক সময়ে বিতর্কিত। জানিনা নির্বাচকরা কেন মেহেদী মিরাজকে মুল দলে স্থান দেয়নি। যাহোক সৌম্য ছিটকে পড়ে সুযোগ হয়েছে। এই সিরিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে টপ এবং মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের জ্বলে উঠতে হবে। জাকের আলী, শামীম হোসেন এবং রিশাদকে নিয়মিত এবং দ্রুত রান করতে হবে। পাকিস্তান দলে বেশ কয়েকজন উঁচু মানের অল রাউন্ডার এবং শাদাব খানের মত উঁচু মানের লেগ স্পিনার আছে। লাহোর উইকেট ব্যাটিং বান্ধব। সেখানে ২২০ রান তাড়া করেও ম্যাচ জয় করা যায়। বাংলাদেশ ২০০-২২০ রান করার পরিকল্পনা করতে হবে। বোলিং আক্রমণে তাসকিন, মুস্তাফিজ, নাহিদ রানা নেই। হাসান মাহমুদ, তানজিম সাকিব, শরিফুলকে নিয়মিত উইকেট নিতে হবে। ভরসা রিশাদ হোসেন, মেহেদী মিরাজ।

পাকিস্তান দলের অধিকাংশ খেলোয়াড় সদ্য পিএসএল ২০২৫ খেলেছে। ফখর জামান, সাইম আয়ুব, মোহাম্মদ হারিস, সালমান আগা, খুশদিল শাহ রানের মধ্যে আছে। দলে ৬-৭ জন উঁচু মানের অল রাউন্ডার আছে। পাকিস্তান আগে ব্যাটিং করে ২০০-২২০ করে ফেললে চাপে মুষড়ে পড়তে পারে বাংলাদেশ। আক্রমণে শাহীন আফ্রিদি না থাকলেও নাসিম শাহ, হারিস রউফ, হাসান আলী, ফাহিম আশরাফদের সামাল দেওয়া সহজ হবে না। শাদাব খান বাড়তি শক্তি যোগাবে।

যে অবস্থাই হোক। সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভালো খেলেছে বাংলাদেশ। এবারের সিরিজটি হবে দুটি প্রায় সমান শক্তির দলের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। সুযোগের পরিপূর্ণ ব্যবহার করা দল সিরিজ জিতবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

17 − 3 =