বাংলাদেশ – শ্রীলংকা ওডিআই সিরিজ: প্লেগ রোগ আক্রান্ত ব্যাটিং বিশাল পরাজয় এনে দিলো বাংলাদেশকে

কাল কলম্বোতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ – শ্রীলংকা তিন ম্যাচ ওডিআই সিরিজের প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকার করা ২৪৪ রানের জবাবে ১৬.৩ ওভারে ১ উইকেটে ১০০ রান করে ভালো অবস্থানে ছিল। কিন্তু হটাৎ করে ভারত মহাসাগৰে সুনামি উঠলো। হাসারাঙ্গা (৪/১০) আর কামিন্দু মেন্ডিস (৩/১৯) যুগল আক্রমণে প্লেগ আক্রান্ত হয়ে মড়ক লাগলো বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে। ১০০-১০৫ মাত্র ৫ রানে ৮ উইকেট উবে গেলো। তবুও জাকের আলীর (৬৪ বলে ৫১ রানের) বীরত্বে বাংলাদেশ পৌঁছতে পেরেছিলো ১৬৭ রানে। পরাজয় ৭৭ রানে। ওডিআই বাংলাদেশের প্রিয় ফরমেট। সোনালী প্রজন্মের মাশরাফি, শাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লার হাত ধরে অনেক অর্জন আছে বাংলাদেশের। সেই প্রিয় ফরম্যাটে কাল ৫ পান্ডব বিহীন বাংলাদেশ মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বে খেলতে নেমেছিল নতুন শুরুর স্বপ্ন নিয়ে। বলতেই হবে নতুন সুচনাটি রাঙাতে পারলো না বাংলাদেশ। অথচ ম্যাচের সূচনা লগ্নে বেশ কিছু সময় ম্যাচটি বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তাসকিন, তানজিব সাকিব, মুস্তাফিজ ভালো শুরু করেছিল। ২৯ রান তুলতেই শ্রীলংকা হারিয়েছিল ৩ উইকেট। কিন্তু বাংলাদেশ চাপ ধরে রাখতে পারেনি। শ্রীলংকান অধিনায়ক চারিথা আসালংকা (১০৬) স্বভাব সুলভ চমৎকার ব্যাটিং করে দলের হাল ধরেন। বিপর্যয়ের মুখে কামিন্দু মেন্ডিস (৪৫) যোগ্য সঙ্গ দেয়। শ্রীলংকার করা ২৪৪ খুব বিশাল স্কোর না হলেও কলম্বো উইকেটে রান তাড়া করে ম্যাচ জয়ের জন্য ছিল পর্যাপ্ত।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে এ মাঠে ২১৪ রান করেও অস্ট্রেলিয়াকে ৪৯ রানে হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। গত বছর আগস্টে তার আগের সিরিজে ভারতের বিপক্ষে দুই ম্যাচ জিতেছিল ২৪০ আর ২৪৮ রান করে। সর্বশেষ এই দুই সিরিজের চার ম্যাচে টসে জিতে আগে ব্যাটিং নিয়ে জিতেছে শ্রীলঙ্কাই এবং সেটা ও রকম কম রান করে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের আতঙ্কিত ব্যাটিংয়ের সৌজন্যে সেই ধারাবাহিকতায় লঙ্কানরা কাল যোগ করে নিল আরেকটি সাফল্য।

টস জয় করে ব্যাটিং করার সিদ্বান্ত নিয়েছিল স্বাগতিক দল।  সবুজ ঘাসের অস্তিত্ব হীন উইকেট হার্ড এবং শুরুতে পেস সহায়ক ছিল। বাংলাদেশ ৩ পেসার, দুই স্পিনার নিয়ে আক্রমণ সাজিয়েছিল। কিছুটা ফিটনেস সমস্যা থাকায় লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের স্থানে দলে ছিল বাম হাতি তরুণ তানভীর ইসলাম। উইকেটের পেস বাউন্স বিচক্ষণতার সঙ্গে ব্যবহার করে তাসকিন, তানজিম শুরুতে তিন তিনটি উইকেট (পিথুন নিঃশঙ্কা, নিশান মাধুস্কা আর কামিন্দু মেন্ডিসের) উইকেট তুলে নিয়ে কোনঠাসা করে ফেলেছিলো শ্রীলংকাকে।  উইকেটে তখন অধিনায়ক চরিথা আসালংকা সঙ্গী কুশল মেন্ডিস।  মেহেদী মিরাজ এই সময় একজন পেসারকে বল আউট করার ঝুঁকি নিতে পারতো। কিন্তু বাংলাদেশ আক্রমণে ৬তম বিকল্প ছিলনা। চরিথা -মেন্ডিস  জুটি গুটিয়ে না থেকে পাল্টা আক্রমণ করে কোনঠাসা অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসে। বিশেষ করে আসালংকার ব্যাটিং ছিল উপমধর্মী। একসময় মেন্ডিস ফিরে গেলেও লিয়েনাগে, রত্নায়েকে আর হাসারাঙ্গার সঙ্গে ছোট ছোট জুটি গড়ে আসালংকা দলকে স্বস্তির অবস্থানে নিয়ে যায়। দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের ভালো বোলিং করে থাকা মুস্তাফিজ আহত হয়ে পড়ায় মিরাজকে নাজমুল শান্তকে ব্যবহার করতে হয়। তবুও বাংলাদেশ স্বাগতিক দলকে ২৪৪ রানে সীমিত রাখতে পারে ফিরতি স্পেলে তাসকিন আর তানজিম উইকেট তুলে নেয়ায়।

বাংলাদেশ শুরুতে পারভেজ ইমনের উইকেট হারালেও তানজিদ তামিম আর নাজমুল শান্ত দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৭১ রান যোগ করে দলকে স্বপ্ন দেখায়। কিন্তু কেউ কি ভেবেছিলো ২৩ রান করা শান্ত দুৰ্ভাগ্যজনকভাবে রান আউট হবার পর হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়বে বাংলাদেশ। ১০০-১০৫ বাংলাদেশ হারায় ৭ উইকেট (নাজমুল, তানজিদ, লিটন০, হৃদয় ১, মিরাজ ০, তানজিম ১, তাসকিন ০)। হাসারাঙ্গা আর কামিন্দু মেন্ডিসের  ঘূর্ণি বলে আতঙ্ক গ্রস্থের মত পথ হারায় বাংলাদেশ। একমাত্র জাকের আলী বীরের মত একাই লড়াই করে দলের স্কোর কিছুটা সহনীয় ১৬৭ রানে পৌঁছালেও পরাজয়ের ব্যাবধান রয়ে যায় ৭৭। তিন ম্যাচের সিরিজে শ্রীলংকা এগিয়ে যায় ১-০।

জানিনা মেরুদন্ডহীন ব্যাটিং নিয়ে বাংলাদেশ সিরিজ পরাজয় এমনকি ধবল ধোলাই এড়াতে পারবে কিনা।

শ্রীলংকা ২৪৪ অল আউট (চরিথা আসালংকা ১০৬, কুশল মেন্ডিস ৪৫, জনিত লিয়ানাগে ২৯, মিলান রত্নায়েকে ২২, ওয়ানিন্দু হাশরঙা ২২, তাসকিন আহমেদ ৪/৪৭, তানজিম সাকিব ৩/৪৫)।

বাংলাদেশ ১৬৭ অল আউট (তানজিদ হাসান তামিম ৬২, জাকের আলী অনিক ৫১, নাজমুল হোসেন শান্ত ২৩, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ৪/১০, কামিন্দু মেন্ডিস ৩/১৯)

শ্রীলংকা ৭৭ রানে জয়ী

ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়: চরিথা আসালংকা

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

nineteen + eighteen =