বিদেশি শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের অবস্থানের সময়সীমা সীমিত করছে ট্রাম্প প্রশাসন

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের অবস্থানের সময় সীমিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে। এটি দেশটিতে বৈধ অভিবাসন আরও কঠোর করার সর্বশেষ উদ্যোগ।

ওয়াশিংটন এএফপি জানায়, প্রস্তাবিত নতুন নিয়মানুযায়ী বিদেশি শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ চার বছরের জন্য শিক্ষার্থী ভিসায় থাকতে পারবেন। সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে এই সীমা হবে মাত্র ২৪০ দিন, যদিও তারা চাইলে আরও ২৪০ দিনের জন্য সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন করতে পারবেন।

এতদিন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত একজন শিক্ষার্থীর পুরো শিক্ষাজীবন বা একজন সাংবাদিকের কাজের মেয়াদ পর্যন্ত ভিসা দিতো। তবে কোনো নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসার মেয়াদ ১০ বছরের বেশি হতো না।

ট্রাম্প প্রশাসনের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট অভিযোগ করেছে, অনির্দিষ্ট সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী নিজেদের পড়াশোনা দীর্ঘায়িত করে ‘চিরস্থায়ী শিক্ষার্থী’ হিসেবে দেশটিতে থাকতে চাচ্ছেন।

বুধবার সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ‘পূর্ববর্তী প্রশাসনগুলো অনেক বছর ধরে বিদেশি শিক্ষার্থী ও অন্যান্য ভিসাধারীদের অনির্দিষ্টকালের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি দিয়েছে। এতে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, করদাতাদের অর্থ ব্যয় হয়েছে এবং মার্কিন নাগরিকদের ক্ষতি হয়েছে।’

তবে ডিপার্টমেন্ট কোনোভাবে ব্যাখ্যা করেনি কীভাবে মার্কিন নাগরিক ও করদাতারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

অপরদিকে, বাণিজ্য বিভাগের তথ্যমতে ২০২৩ সালে বিদেশি শিক্ষার্থীরা মার্কিন অর্থনীতিতে ৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি অবদান রেখেছেন।

২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রে ১১ লাখের বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়, যা বিশ্বের অন্য কোনো দেশের তুলনায় বেশি। তারা সাধারণত পুরো টিউশন ফি প্রদান করে, যা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস।

যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নেতাদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সংগঠন নতুন নিয়মকে অপ্রয়োজনীয় প্রশাসনিক জটিলতা, ব্যয়বহুল ও শিক্ষার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপকারী হিসেবে সমালোচনা করেছে। তারা বলছে, এতে সম্ভাব্য শিক্ষার্থীরা গবেষণা ও চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারে।

প্রেসিডেন্টস অ্যালায়েন্স অন হায়ার এডুকেশন অ্যান্ড ইমিগ্রেশন-এর প্রেসিডেন্ট মিরিয়াম ফেল্ডব্লুম বলেন, ‘এ প্রস্তাবিত নিয়ম বিশ্বের মেধাবী শিক্ষার্থীদের কাছে বার্তা দেয় যে তাদের অবদান যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যায়ন করা হয় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ক্ষতির পাশাপাশি মার্কিন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মেধা আহরণের ক্ষমতাকেও দুর্বল করে দিবে। ফলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

নতুন নিয়মের ঘোষণাটি এমন সময়ে এসেছে যখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু করছে। অনেক প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের পূর্ববর্তী পদক্ষেপের কারণে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভর্তি কমেছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

20 − 1 =