মেয়েদের বিশ্বকাপে কাল শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অসম যুদ্ধে নেমেছিল বাংলাদেশ। নিজেদের সামর্থ্যের সবকিছু দিয়ে যুদ্ধ জমিয়ে দিয়েছিলো বাংলাদেশ। ভাগ্যের সহায়তা পেলে এবং অন্তত দুটি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে বঞ্চিত না করলে জয়ী হতেও পারতো বাংলাদেশ।
প্রথমে ব্যাটিং করে ১৭৮ রানের সংগ্রামী সংগ্রহ করেছিল বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড ইনিংসের শুরুতেই দুই দুইটি মোক্ষম আঘাতে বিস্ময় বালিকা মারুফা ইংরেজ সিংহীদের বোতলবন্দি করে ফেলেছিলো। ফিরে যেতে পারতো ০ রানে ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলা হেদার নাইট।
শূন্য রানে নাইটের ক্যাচ উইকেটের পেছনে নিগার সুলতানা নেওয়ার পর আঙুল তোলেন আম্পায়ার। তবে যথেষ্ট প্রমাণ না পাওয়ায় তৃতীয় আম্পায়ার সেই সিদ্ধান্ত বদলে দিলে বেঁচে যান নাইট। এরপর ১৩ রানে তার ক্যাচ মুঠোবন্দি করেন স্বর্ণা আক্তার। কিন্তু টিভি আম্পায়ার ভারতের গায়াত্রী ভেনুগোপালান এবারও একই কারণে আউট দেননি।
ম্যাচের পর খোদ নাইটই জানিয়েছেন, তিনিও নাকি ভেবেছিলেন আউট হয়ে গিয়েছিলেন। নাইট ০ অথবা ১৩ রানে আউট হলে ইংল্যান্ডের পক্ষে ম্যাচ জয় করা সহজ হত না। বাংলাদেশ বোলাররা কিন্তু শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছে। তবে নাইট শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ৭৯ রান করে বিজয় ছিনিয়ে নেয়। ৪৬.১ ওভারে ১৮২/৬ করে ৪ উইকেটে ম্যাচ জয় করে বাংলাদেশ। লড়াই করে পরাজয়ে তৃপ্তি আছে। জানিনা বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোন দেশের বিরুদ্ধে পরিষ্কার আউটের সিদ্দান্ত এভাবে উল্টে যেত কিনা।
কাল গৌহাটীতে ছিল প্রচণ্ড গরম। আর্দ্রতা ছিল পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য অসহনীয়। টস জয় করে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ঝুঁকি নিয়েছিল নাট সিভার ব্রান্ট। হয়তো ভেবেছিলো স্বল্প রানে গুটিয়ে যাবে বাংলাদেশ। কিন্তু ইংরেজ মেয়েদের ভালো বোলিংমোকাবিলা করে ৪৯.৪ ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করে বাংলার বাঘিনীরা।
১৭৮ রান উইকেট পরিবেশ অনুযায়ী লড়াই করার পুঁজি ছিল। যদিও আরো ২০-২৫ রান হলে ভালো হত। টপ অর্ডারে সুবহানা মোস্তারী ৬০, শারমিন আখতার ৩০, আর শেষ দিকে রাবেয়া খানের অপরাজিত ৪৩ রানের সঙ্গে আরো দুই একজন কিছু সংগ্রহ করলে কাল বাংলাদেশ ২০০ করতে পারতো।
দুর্ভাগ্য কাল আগের ম্যাচের সফল রুবায়া ঝিলিক (৪) আর অধিনায়ক নিগার সুলতানা (০) বার্থ হয়েছে। ৭ জন ব্যাটসম্যান ১০ রানের নিচে আউট হয়েছে। আশা করি অবশিষ্ট খেলাগুলোতে বাংলাদেশ দলের সবাই কিছু ব্যাট হাতে কন্ট্রিবিউটে করবে। ইংল্যান্ডের হয়ে সোফি একস্টোন ( ৩/৩৪), চার্লি ডিন (২/২৮) , এলিস ক্যাপ্সি (২/৩১) এবং উনসে স্মিথ (২/৩৩) ছিল সফল বোলার।
ইংল্যান্ড ইনিংসের শুরুতে সেই বিস্ময় বালিকা মারুফা দুর্দান্ত সুইং করে এমি জোন্স আর টামি বেউমন্টকে সাজঘরে পাঠিয়ে ইংরেজ শিবিরে কাঁপুনি ধরিয়েছিল। কালকের ম্যাচের প্লেয়ার অফ টি ম্যাচ হেডার নাইট ০ এবং ১৩ রানে দুইবার আম্পায়ারের বদান্যতায় রক্ষা না পেলে খেলার ভাগ্য হয়ত বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকে পড়তো।
তার পরেও যুদ্ধ করেছে বাংলার মেয়েরা। ফাহিমা (৩/১৬), মেঘলা (১/২৪), সঙ্গে নাহিদা, রাবেয়া, স্বর্ণা সামর্থ্যের সবকিছু দিয়ে লড়াই করে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাধার প্রাচীর গড়ে তুলেছিল। মারুফাকে কেন যে আরো দুই এক ওভার বোলিং করলো না জ্যোতি বুঝতে পারিনি।
ইংল্যান্ড অনেক অভিজ্ঞ দল। বিশেষত হেদার নাইট সুযোগের সঠিক ব্যবহার করে ১১১ বল খেলে অপরাজিত ৭৯ রান করে বিজয় ছিনিয়ে নিলো বাংলাদেশ থেকে।
বাংলাদেশ কিন্তু শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছে। এই পরাজয়ে তৃপ্তি আছে। এমনিতেই বাংলার মেয়েরা বড় দলের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ পায় কালে ভদ্রে। তার পরেও কাল টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট ইংল্যান্ড দলকে রীতিমত কাঁপিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। এই দল ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে অন্যান্য দলকেও সহজে ছাড় দিবে না বলা যেতেই পারে।