কপে চতুর্থ দিনে স্থবির আলোচনা, তীব্র চাপ, আর ন্যায়ভিত্তিক সমাধানের দাবি জোরালো
আফরোজা আখতার পারভীন, ঢাকা
বেলেমে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন COP30-এর চতুর্থ দিন ছিল উত্তেজনা, অনিশ্চয়তা ও তীব্র কূটনৈতিক আলোচনায় ভরপুর। মূল আলোচনায় স্পষ্ট হয়েছে—ফসিল জ্বালানির ভবিষ্যৎ, অর্থায়ন, এবং ‘ফেয়ার শেয়ার্স’ ভিত্তিক এনডিসি নিয়ে দেশগুলোর অবস্থান এখনও কঠোর, অথচ সময় ক্রমশ ফুরিয়ে যাচ্ছে।
প্রধান আলোচ্য: ফসিল ফুয়েল ফেজআউট বনাম “ফেজডাউন” বিতর্ক তীব্রতর
চতুর্থ দিনের আলোচায় ফসিল জ্বালানির “ফেজআউট” (সম্পূর্ণ পরিত্যাগ) বনাম “ফেজডাউন” (ক্রমশ কমানো)—দুটি শব্দ নিয়ে তীব্র মতভেদ দেখা দেয়।
- ছোট দ্বীপরাষ্ট্র ও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো (AOSIS, LDCs) জোরালোভাবে ফেজআউটের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা দাবি করেছে।
- তেল উৎপাদনকারী দেশ ও কিছু বৃহৎ অর্থনীতি বলছে, সম্পূর্ণ ফেজআউট অর্থনৈতিকভাবে অযৌক্তিক, তারা চায় ফেজডাউন + কার্বন ক্যাপচার প্রযুক্তি। আলোচনা রাতে পর্যন্ত চললেও কোনো ঐকমত্য হয়নি।

অর্থায়ন: “ট্রিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি কোথায়?”
ফিনান্স ট্র্যাকের আলোচায় চতুর্থ দিন ছিল বিশেষ উত্তপ্ত।
গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো স্পষ্ট করে জানিয়েছে:
- ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য Loss & Damage ফান্ডে প্রকৃত অর্থায়ন কোথায়?
- নতুন অর্থায়ন লক্ষ্যমাত্রা (NCQG) কি ট্রিলিয়ন ডলারে যাবে?
- পূর্ববর্তী প্রতিশ্রুতি (১০০ বিলিয়ন ডলার) পূরণ না হলে নতুন লক্ষ্য কতটা বাস্তবসম্মত?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আলোচনার অগ্রগতি খুবই ধীর।
ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (NDCs): ন্যায়ভিত্তিক পুনর্বিন্যাসের চাপ
বেলেমে প্রকাশিত নতুন বিজ্ঞানভিত্তিক মূল্যায়ন দেখাচ্ছে— বর্তমান NDC দিয়ে ১.৫°C লক্ষ্য সম্পূর্ণ অপ্রাপ্য। তাই আজকের আলোচনায় গুরুত্ব পায় “ফেয়ার শেয়ার্স NDC”—যেখানে নির্গমন কমানো এবং অর্থায়ন উভয়ের ক্ষেত্রে দেশের ঐতিহাসিক দায়, ক্ষমতা ও ন্যায্যতার মানদণ্ড বিবেচনা করার দাবি তোলা হয়।
কপ৩০ প্রেসিডেন্সির ব্রিফিং: “অচলাবস্থা ভাঙতে সাহসী সিদ্ধান্ত প্রয়োজন”
আজকের প্রেস ব্রিফিং-এ কপ৩০ প্রেসিডেন্সি জানায়—
- ফসিল ফুয়েল বিষয়ক টেক্সট এখনো অত্যন্ত বিতর্কিত।
- অর্থায়নে বড় অগ্রগতি না হলে চূড়ান্ত ঘোষণাপত্র দুর্বল হতে পারে।
- আগামী ৪৮ ঘণ্টা “হাই-লেভেল পলিটিক্যাল এনগেজমেন্ট” বাড়ানো হবে।
প্রেসিডেন্সি সরাসরি স্বীকার করেছে:“বিশ্ব এখনো বাস্তবতার সাথে তাল মিলিয়ে চলছে না। আমরা বিজ্ঞানকে উপেক্ষা করতে পারি না।ত্
গুরুত্বপূর্ণ সাইড ইভেন্টসমূহ
আমাজানের আদিবাসী রীডার সামিট
- আমাজনের আদিবাসী নেতারা সতর্ক করেন—“আমাদের বন না বাঁচলে বিশ্ব বাঁচবে না।”
- তারা দাবি করেন, বন রক্ষা ও পর্যবেক্ষণে তাদের নেতৃত্বকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
জলবায়ু অর্থায়ন সংলাপ
- আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবিদরা বলেন—বর্তমান আর্থিক ব্যবস্থায় জলবায়ু কার্যক্রম অসম্ভব, তাই প্রয়োজন
ঋণ মওকুফ
গ্রান্ট-ভিত্তিক ফাইন্যান্স
গ্লোবাল ট্যাক্সেশন রেজিম
যুব জলবায়ু ন্যত্যতা ফোরাম
- তরুণরা রুদ্ধশ্বাস বক্তব্যে বলেন— “প্রতিশ্রুতি নয়—কংক্রিট পরিকল্পনা চাই।”
- তারা ফসিল ফুয়েল লবির প্রভাব কমানোর দাবি তোলে।
প্রকৃতি নির্ভর সমাধান প্রদর্শনী
- বিশেষ গুরুত্ব পায় বাংলাদেশ, কেনিয়া, ব্রাজিলসহ কয়েকটি দেশের ম্যাংগ্রোভ পুনরুদ্ধার ও জলবায়ু-সহনশীল কৃষি মডেল।
চতুর্থ দিনের সারসংক্ষেপ
- ফসিল ফুয়েল নিয়ে মৌলিক মতভেদ রয়ে গেছে
- অর্থায়নে ট্রিলিয়ন ডলার দাবিতে চাপ বাড়ছে
- ফেয়ার শেয়ার্স NDC-র বিষয়ে বৈজ্ঞানিক অবস্থান আরও স্পষ্ট
- প্রেসিডেন্সি উদ্বিগ্ন: “সময় কম, ঝুঁকি বেশি”
- আদিবাসী নেতৃত্ব ও জলবায়ু ন্যায়বিচার নিয়ে জনগণের কণ্ঠ আরও জোরালো
