আফরোজা আখতার পারভীন
ছয় দিনের বৈঠক, রাজনৈতিক আলোচনার উত্তাপ এবং একের পর এক সাইড ইভেন্ট শেষে কপ৩০ এখন প্রাথমিক আনুষ্ঠানিকতা থেকে বের হয়ে কঠোর টেকনিক্যাল ড্রাফটিং এবং রাজনৈতিক দরকষাকষির পর্যায়ে পৌঁছেছে।
বিভিন্ন ট্র্যাক থেকে এসেছে একাধিক খসড়া পাঠ, অর্থায়ন-বন-জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ে আলোচনায় বেড়েছে চাপ, আর কপ৩০ প্রেসিডেন্সি স্পষ্ট বলছে: এখন কথার সময় নয়, সিদ্ধান্তের সময়।
নিচে দেওয়া হলো প্রথম ৬ দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি, খসড়া পাঠে কী আছে, কোন সাইড ইভেন্টগুলো রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে দিয়েছে এবং সামনে কী অপেক্ষা করছে।
১) আলোচনা থেকে যে বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়েছে
- খসড়া পাঠ প্রকাশ
গত কয়েক দিনে আলোচকরা কয়েকটি ট্র্যাকে (প্রশমন/জীবাশ্ম জ্বালানি, আর্টিকেল ৬ কার্বন বাজার, অভিযোজন ও লস অ্যান্ড ড্যামেজ, এবং ২০২৫-পরবর্তী অর্থায়ন লক্ষ্য) “০-ড্রাফট” ও অপশন টেক্সট প্রকাশ করেছেন।
এগুলো এখনো সিদ্ধান্ত নয়, বরং কোন জায়গায় বিরোধ আছে তা স্পষ্ট করেছে।
- জীবাশ্ম জ্বালানি ভাষা প্রধান রাজনৈতিক বিভাজন
ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো স্পষ্ট “ফেজ-আউট” চাইছে।
অন্যদিকে বড় নির্গমনকারী ও তেল-গ্যাস উৎপাদক দেশগুলো চাইছে “ফেজডাউন” বা নরম ভাষা, যেখানে প্রযুক্তি বা কার্বন অপসারণের ভূমিকা জুড়ে দেওয়া থাকবে।
- অর্থায়নই মূল বিতর্ক
অর্থায়ন নিয়ে বিকল্পগুলো ভিন্ন মাত্রার— কেউ বছরে কয়েকশো বিলিয়ন, কেউ ট্রিলিয়ন ডলারের কাঠামো চাইছে।
মূল লড়াই:
- ঋণ নাকি অনুদান
- পাবলিক নাকি প্রাইভেট
- এবং ঐতিহাসিক দায়িত্ব কি নতুন অর্থায়ন লক্ষ্যে (NCQG) প্রতিফলিত হবে কিনা।
২) খসড়া পাঠে কী আছে
- প্রশমন / MWP
“ফেজ-আউট বনাম ফেজডাউন”-এ দ্বন্দ্ব স্পষ্ট।
“অ্য unabated fossil fuels”, CCS, নির্দিষ্ট সময়সীমা— এসব অংশে ভারী ব্র্যাকেট।
- আর্টিকেল ৬ (কার্বন বাজার)
নতুন নোটে বাজারের সততা, কঠোর ক্রেডিটিং নিয়ম ও স্বচ্ছতার দাবি উঠেছে। তবে দ্বিমত তীব্র— বিশেষ করে ডাবল কাউন্টিং ও নিম্নমানের অফসেট ঠেকাতে কী নিয়ম হবে তা নিয়ে।
- অভিযোজন ও লস অ্যান্ড ড্যামেজ
লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডের অপারেশনাল নিয়ম এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর আশঙ্কা— বাস্তব অর্থ না থাকলে ফান্ডটি কাগজে-কলমে থেকে যাবে। অভিযোজন পাঠে সূচক বাড়ানো হলেও ধরা-বাঁধা অর্থায়ন কাঠামো অনির্ধারিত।
- NCQG / অর্থায়ন
অপশন পাঠে বছরে ৬০০ বিলিয়ন থেকে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিভিন্ন পথ দেখা যাচ্ছে।

গ্লোবাল সাউথ জোর দিচ্ছে:
- পূর্বানুমানযোগ্য সরকারি অর্থায়ন
- অনুদানভিত্তিক সহায়তা
- এবং ঋণমুক্তি কাঠামোতে।
৩) যে সাইড ইভেন্টগুলো প্রভাব ফেলেছে
- Climate Finance Reset Dialogue
ঋণ সংকট, অনুদানের ভাগ, বৈশ্বিক নতুন লেভি (জ্বালানি উইন্ডফল, শিপিং/এভিয়েশন)— সবই প্রথমবারের মতো বড় মঞ্চে আলোচনা হয়েছে। গ্লোবাল সাউথের দাবিগুলো আরও জোরালো হয়েছে।
- অ্যামাজন ও আদিবাসী ফোরাম
আদিবাসী প্রতিনিধিরা স্পষ্ট দাবি তুলেছেন:
অধিকার স্বীকৃতি এবং বন রক্ষায় পৃথক ফাইন্যান্স উইন্ডো। ট্রপিক্যাল ফরেস্টস ফরএভার ফান্ডে চাপও বেড়েছে।
- সিটি, ইয়ুথ ও সিভিল সোসাইটি ইভেন্ট
তরুণরা জোরালো অ্যাকশন করেছে—
“ফসিল ফেজআউট না হলে ১.৫° সম্ভব নয়।”
শহর নেতারা বাস্তবায়ন উদাহরণ দিয়েছেন।
৪) কপ৩০ প্রেসিডেন্সির বার্তা
কপ৩০ প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে কোরেয়া দো লাগো বারবার বলেছেন— “কথা থেকে কাজে যেতে হবে।”
প্রেসিডেন্সি বলছে:
- এখন থেকে মন্ত্রী পর্যায়ে পরামর্শের গতি বাড়বে
- আরও ঘনঘন কনসোলিডেটেড টেক্সট প্রকাশ করা হবে
- রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হবে।
“We now move from exploration to negotiation. Drafts are on the table. The political choices cannot be delayed any longer.”
৫) সামনে কী অপেক্ষা করছে
- টেকনিক্যাল ড্রাফট প্রস্তুত— এখন খেলার ময়দান রাজনৈতিক
আগামী ৪৮-৭২ ঘণ্টাই নির্ধারণ করবে কী পরিমাণ ব্র্যাকেট সরবে।
- অর্থায়ন ও জীবাশ্ম জ্বালানি—ফল নির্ধারণের কেন্দ্রবিন্দু
যদি অর্থায়নে বিশ্বাসযোগ্য NCQG এবং ফসিল ফেজআউটের রাজনৈতিক ম্যান্ডেট আসে, তবে কপ৩০ বাস্তবায়নের শক্তিশালী পথ দেখাতে পারবে। না হলে ফলাফল হতে পারে আবারও প্রতীকী, আর বাড়বে আস্থার সংকট।
- সিভিল সোসাইটি ও আদিবাসী চাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
এসব চাপই আলোচকদের রাজনৈতিক অবস্থান বদলে দিতে পারে।
ছয় দিনের আলোচনায় কপ৩০ সম্ভাব্য সিদ্ধান্তের টেকনিক্যাল কাঠামো দাঁড় করিয়েছে।
কিন্তু মূল প্রশ্ন দুইটি এখনও অনির্ধারিত— কে টাকা দেবে? এবং কত দ্রুত জীবাশ্ম জ্বালানি পরিত্যাগ করা হবে?
পরবর্তী মন্ত্রিস্তরীয় আলোচনাই নির্ধারণ করবে— বেলেম কি বাস্তবায়নের নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবে, নাকি আরও এক বছরের হতাশা যোগ করবে।